কুষ্টিয়ার ড্রিম হাউজ স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ডিজাইন পাস করার তথ্য ফাঁস
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া শহরে একটি প্রতারক চক্র ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরিচালনা করছে ড্রিম হাউজ ডিজাইন নামক একটি বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম। জানা যায়, কুষ্টিয়ার শহরের এন.এস.রোডস্থ সুকান্ত বিপনী কেন্দ্র মার্কেটের ২য় তলায় রয়েছে ড্রিম হাউজ ডিজাইন নামক একটি বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম এর অফিস।যারা নিজেদের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করতে চান তাদের আকর্ষিত করার জন্য অফিসের সামনে বিশাল বিলবোর্ড, কুষ্টিয়ার শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ঝকমকা ব্যানার-ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাহারি বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে এই চক্রটি। এই বিজ্ঞাপনে ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল জব্বার, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তৌফিক এলাহী ও আর্কিটেক্ট শুভাশীষ সেন তন্ময় এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞাপণে ব্যবহৃত ব্যবহৃত ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ড্রিম ডিজাইন হাউজ নামক বিল্ডিং ডিজাইন ফার্ম এর সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তৌফিক এলাহী বলেন, তারা আমার নাম ব্যবহার করতো। আমি যখনই বুঝতে পেরেছি এটি একটি প্রতারক চক্র, আমি তখন সরে এসেছি। বর্তমানে আমার সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এখনো আমার নাম কেন ব্যবহার করছে তা আমার বোধগম্য নয়, তবে এটি যথারীতি অন্যায়।ড্রিম হাউজ ডিজাইনের পরিচালক হাবিবুর রহমান টোটন এর এসমস্ত অপরাধ নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারী দৈনিক সত্য খবর পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তারপর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন ডিপ্লোমাধারী ইঞ্জিনিয়ার সর্বোচ্চ ৪ তলা পর্যন্ত নকশা ডিজাইন করতে পারে।৪ তলার উপরে কোন স্থাপনা নির্মাণের ডিজাইন পাশ করতে হলে আইবি’র তালিকাভুক্ত একজন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে ডিজাইন করাতে হয়। কিন্তু ড্রিম হাউজ ডিজাইনের ব্যবসায়িক পার্টনার তৌফিকুল ইসলাম তপনের লাইসেন্সে ৪ তলার উপরে যেকোন ডিজাইনে রায়হান শেখ নামক একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর করা দেখা যায়।
এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার রায়হান শেখের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “ড্রিম হাউজ ডিজাইন নামক কোন প্রতিষ্ঠানের নাম আমি কখনো শুনিনি। আর তৌফিকুল ইসলাম বা হাবিবুর রহমান টোটন নামের কাউকে চেনা তো দূরের কথা। কুষ্টিয়ার মতো সুনামধন্য জেলায় এ ধরনের প্রতারণা আমাকে আশ্চর্য করেছে।তারা যদি আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে থাকে তাহলে আমি এই জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এদিকে, ড্রিম হাউজ ডিজাইনের পরিচালক হাবিবুর রহমান টোটনের সাথে এক ব্যক্তির ফোনালাপ এর অডিও ক্লিপ এসে পৌঁছেছে দৈনিক সত্যখবর পত্রিকা ও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে। ফোনালাপে হাবিবুর রহমান টোটনকে বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী এক ব্যক্তি নিজের জমির সামনে ৫ ফিট চওড়া রাস্তার সামনে ৫ বা ততোধিক তলা বিশিষ্ঠ বাড়ি নির্মাণ করা যাবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আইনত ভাবে এটা করা যায় না।কিন্তু আইনের বাইরেও অনেক পথ থাকে। যদি আমার উপর বিশ্বাস রাখেন তাহলে এক লাখ আশি হাজার টাকার বিনিময়ে এই সরু রাস্তার পাশে ৫ বা ততোধিক তলা বাড়ি নির্মাণের প্লান পাশ করিয়ে দিবো। এদিকে হাবিবুর রহমান টোটন নিজেকে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক এর প্রাক্তণ ছাত্র ও নাটোর ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত দাবী করলেও তিনি কুষ্টিয়া ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি নামক একটি প্রাইভেট ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাশকৃত।এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারস্ ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ (আইবি)’র কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর উপকেন্দ্রের সাবেক সম্পাদক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ডিপ্লোমা পাশধারী কোন ব্যক্তি নিজের নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার লিখতে পারে না। যদি লিখে থাকে তাহলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদিকে একটি স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে প্রথম পর্যায়ে মাটি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। ড্রিম হাউজ বিল্ডিং এর পরিচালক হাবিবুর রহমান টোটন এর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটি পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় আমাদের নিজস্ব অফিস রয়েছে।
আমরা কুষ্টিয়া থেকে মাটির নমুনা নিয়ে ঢাকায় পাঠায়। কিন্তু হাবিবুর রহমান টোটন ঢাকায় যে অফিসের ঠিকানা দেন সেই অফিসের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদিকে তার ড্রিম হাউজ বিল্ডিং ফার্মে মাটি পরীক্ষার করার জন্য সবুজ নামের একজন দায়িত্বে রয়েছে। যিনি কম্পিউটারে ডিপ্লোমা করলেও নিজেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দাবী করেন। সম্পর্কে সে টোটন এর খালাতো ভাই বলে জানা গেছে। টোটন বলেন, আমার অফিসে আমার আন্ডারে পাঁচজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার চাকুরী করেন। তার কাছে এই ৫ জন ইঞ্জিনিয়ারের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে পারেননি।
কুষ্টিয়া পৌর অঞ্চলের মধ্যে কোন স্থাপনার প্লান পাশ করতে হলে কোন ডিজাইন ফার্ম অথবা ব্যক্তিগত মালিকানায় লাইসেন্সধারী হতে হবে। কিন্তু ড্রিম হাউজ ডিজাইনের নামে কুষ্টিয়া পৌরসভায় কোন নকশার লাইসেন্স না থাকলেও মোঃ তৌফিকুল ইসলাম নামে একটি ব্যক্তিগত পৌর নকশার লাইসেন্সে ড্রিম হাউজ ডিজাইনের নকশাকৃত প্লানগুলো জমা হয়। এই বিষয়ে তৌফিকুল ইসলামকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ড্রিম হাউজ ডিজাইনের ব্যবসায়িক পার্টনার।এদিকে আইবি’র নিয়মানুযায়ী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ৪তলা পর্যন্ত বিল্ডিং ডিজাইন করতে পারেন। কিন্তু পৌরসভায় জমাকৃত ডিজাইন সিটে দেখা যায়, মোঃ তৌফিকুল ইসলাম এর লাইসেন্সে ৪তলার উপরে যে সব ডিজাইন করা হয়েছে সেখানে মোঃ রায়হান শেখ নামক একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের নাম ও আইবি’র মেম্বারশীপ নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে।কিন্তু আইবি’র ওয়েব সাইটে ঢুকে এই নামের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তৌফিকুল ইসলামের নিজ নামে নিবন্ধিত পৌর নকশার লাইসেন্সটি ড্রিম হাউজ ডিজাইন ফার্মকে প্রতারণা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। সেই কারণে তৌফিকুল ইসলামের লাইসেন্স বাতিলের জন্য একাধিক প্রকৌশলী দাবী জানিয়েছেন। এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।