কুষ্টিয়ার মাদক সম্রাট পোল্লাদ এখন কোটিপতি, প্রশাসনের নিরাবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পোল্লাদ দাস কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের আলামপুর বাজারের পূর্ব পাশে দাস পাড়াতে বীরদর্পে প্রশাসন ও উক্ত এলাকার কথিত মন্ডল মাতব্বর ও জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছেন মাদকের অভয়ারন্য। বর্তমানে সে এখন আর কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তিনি নিজেই এখন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই মাদক ব্যবসা করে ইতিমধ্যে তিনি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা খরচা করে ধুমধাম করে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেন। তার ভয়ে দাস পাড়ার বাসিন্দারা সব সময় আতঙ্কিত থাকে। তার পলিসি একটু ভিন্ন ব্যসায়ের শুরু থেকে ছোট-ছোট শিশুদেরকে বিনামুল্যে ইয়াবা সেবন করিয়ে তাদেরকে মাদকাসক্ত বানিয়েছে, তারাই এখন বড় খরিদ্দার। তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন দপ্তরে গণপিটিশন দায়ের করেছিল এলাকাবাসী। অবশেষে ফাঁসীর আসামী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামানের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করবে না বলে কান ধরে উঠবস করেছিল। ওয়াদা করে এসেই পুনরায় শুরু করেছিল মাদকের ব্যবসা। তার কয়েকদিন পরেই ঝিনাইদহ র‌্যাবের হাতে ৪৭০ পিস ইয়াবা সহ আটক হয়েছিল। তার ব্যবসা শুধু অত্র এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই তিনি একজন ডিলার সে বিভিন্ন জেলায় মাদকের বড়-বড় চালান পাচার করে যাচ্ছে, এই কথাগুলো মুঠোফোনে জানালেন আলামপুরের এক স্কুল শিক্ষক।
অন্যদিকে বালিয়াপাড়া গ্রামের এক সমাজপতি জানান, বৈষম্যবিরোধী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দিন সন্ধ্যায় ১০/১২টি মোটর সাইকেলযোগে তারই অনুসারী কিছু যুবক ঢোকে তার ঘরবাড়ী ভাংচুরের জন্য, তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফিরিয়ে দেয়। তারই এক অনুসারী গত দুদিন আগে প্রতিবেদককে বলেন, পোল্লাদের নিউজ বন্দ করতে কত লক্ষ টাকা লাগবে। কারন পোল্লাদ নিজে মুখেই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছে যে ‘ব্যাবসা করলেও দোষ-না করলেও দোষ’ এ জন্যই আমি মাদক ব্যবসা করছি।
এই পোল্লাদ গত দুই যুগ আগে আলামপুর বালিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে বসে জুতা-স্যান্ডেল মেরামতের কাজ করতো, হঠাৎ করেই মাদক ব্যবসা করে তার ভাগ্যোর চাকা ঘুরে গেল। তারপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই, চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা। তার এই ব্যবসায় সাথে জড়িত আছে তার বউ, ভাই এবং ঐ পাড়ারই কয়েকজন মাদকসেবী। তার নিজ বাড়ীতেই গড়ে তুলেছেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। সে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবা সহ ধরা পড়লেও আইনের বেড়াজাল দিয়ে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তার অবৈধ ব্যবসা। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি চলতি মাসের ৯/১০ তারিখে তার বিরুদ্ধে একাধিক পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কারন বর্তমানে দেশে চলছে আইন শৃংখলার পরিস্থিতির অবনতি। পুলিশ, ডিবি ও নারকোটিকস্ কেউই মাঠে নেই সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি সে, সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে গালিগালাজ করেছে এবং টাকা দিয়ে কিনেও নিয়েছে বলে যাচ্ছেন। এই কথাটি নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র প্রতিবেদকে জানায়।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় আলামপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস আই ফিরোজের মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি কিন্তু তাকে আমরা মাদকসহ হাতে নাতে ধরতে পারছি না, হাতে নাতে না ধরতে পারলেতো কোন লাভ হবে না। ক্যাম্প ইনচার্জের কথা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানালে তারার বলেন, এখানেতো ক্যাম্প ইনচার্জ অবুঝ বাচ্চা শিশুর মত মন্তব্য করেছেন, তারা ইচ্ছে করলে যখন তখন তাকে ধরতে পারে কিন্তু তিনি ধরবেন না কারন তার কাছ থেকে নিয়মিত মাশোহারা নিয়ে ব্যবসা করার পথ পরিস্কার করে দিয়েছে। তারা এটাও বলেন, ইতিপূর্বে র‌্যাব এসে তাকে মাদক বাদেই ধরেছিল, কিন্তু পাছার উপর যখন দুঘা দিল সাথে সাথে ৫৭০ পিচ বের করে দিল আমরাতো নিজে চোখে দেখেছি।
তার ব্যবসা শুধু গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কুষ্টিয়া শহরের মাদক সেবীরাও চলে যাচ্ছে তার কাছে মাদক কিনতে। তারা আরো জানায়, তার মাদকের হট স্পট এখন বালিয়াপাড়া পশু হাট। বিকেল থেকেই পশু হাটের মধ্যে বিভিন্ন ব্রান্ডের নামি দামি মোটরসাইকেল প্রাইভেট কার নিয়ে শহর থেকে মাদক সেবীরা এসে উক্ত পশু হাটের মধ্যে সেবন করে। তার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা জানায়, গত দুই যুগ ধরে মাদক ব্যবসা করে ইতিমধ্যে সে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ক্রয় করছে একটি পর একটি জমি, তৈরী করছে বাড়ী। অপর দিকে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয় অভিভাবকরা। স্থানীয় অভিভাবকরা একদিকে সন্তানদেরকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে, অন্যদিকে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পোল্লাদের মাদকের ভয়াল থাবায় গ্রাস করেছে গ্রামের উঠতি বয়সী যুবকদের, ফলে বিপথগামী হয়ে পড়ছে তারা। তবে তার বিরুদ্ধে ধর্ষন, হত্যা ও মাদকের মোট ৫/৬টি মামলা চলমান আছে কুষ্টিয়ার আদালতে। স্থানীয় বাসিন্দারা আবারো সোচ্চার হয়ে উঠেছেন পোল্লাদের বিরুদ্ধে, তারা বলেন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা না করে তাহলে আমরাই ব্যবস্থা নিব। তাদের একটাই কথা আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচাতে হলে পোল্লাদ দাসকে যে কোন মুল্যে আমরা প্রতিহত করব।




error: Content is protected !!