কুষ্টিয়ায় অনটেষ্ট মোটরসাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক ফকরুলের বাণিজ্য মাসে কোটি টাকা
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয়ায় অনটেষ্ট মোটরসাইকেলে ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক ফকরুলের বাণিজ্য মাসে কোটি টাকা
টিআই-ওয়ান ফকরুলের খুঁটির জোর কোথায় ?
কুষ্টিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ‘অনটেস্ট’ মোটরসাইকেল আটক করে জেলার ট্রাফিক পুলিশ সরকার নির্ধারিত জরিমানার কয়েক গুণ বেশি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক অফিসের অক্টোবর-২০২৩ থেকে ৩ এপ্রিল-২০২৪ সময়কাল পর্যন্ত প্রস্তুতকৃত ডেটাশিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ‘অনটেস্ট’ মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের অভিযোগ মতে মাসে কোটি টাকার বেশি টাকা পকেটস্থ করছে ট্রাফিক পুলিশ। কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে জেলা সদরসহ ৭টি থানা এলাকায় আটক ১ হাজার ৮০০ বাইক লাইসেন্সবিহীনসহ নানা বিধিভঙ্গের কারণে অভিযোগ দিয়ে মামলা দেওয়া হয়। টিআই-ওয়ানের নেতৃত্বে এই মামলাগুলো যথাক্রমে এসআই আবদুস সবুর করেন ৩১৩টি, এসআই সুব্রত কুমার গাইন করেন ২৯০টি, সার্জেন্ট রাসেল আহমেদ-২৮০, সার্জেন্ট আমিরুল ইসলাম-২৪৫, সার্জেন্ট মোস্তাক আহমেদ ২৩২, সার্জেন্ট মিজানুর-১৯৪, সার্জেন্ট নুরে আলম-১৩২ এবং সার্জেন্ট এইচ এম সাজিদ হোসাইন-১১৭টি মামলা করেন।
তালিকার তথ্যমতে, এ সময় ১ হাজার ৮০০ মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন অনটেস্ট মোটরসাইকেল ছিল ৭ শতাধিক। বিধিমতে, আটক ওইসব মোটরসাইকেল মালিকরা লাইসেন্সসহ প্রাসঙ্গিক আইনসিদ্ধ কাগজপত্রসহ নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে পুলিশের হেফাজতে থাকা মোটরসাইকেল ফেরত চেয়ে আবেদন করবেন। আবেদনে সংযুক্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সবকিছু ঠিক থাকলে পুলিশ আবেদনকারীকে আটক বাইকটি ফেরত দেয়। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ অফিসের কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক টিআই-ওয়ান ফকরুল ইসলামের যোগসাজশে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে আটক মোটরসাইকেল মালিকদের বাইক ফেরত দেওয়ার তথ্য ফাঁস হয়েছে। ট্রাফিক অফিসের ফকরুল গং একটি ‘ভুয়া’ অফিশিয়াল ডেটাশিট প্রস্তুত করে সেখানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া মোটরসাইকেলগুলোর বিপরীতে একটি করে ভুয়া নম্বর সংযোজন করে মামলার তালিকায়। বেশি টাকা নেওয়া হলেও এর বিপরীতে সরকারি কোষাগারে মামলার ধরন ভিত্তিতে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত জরিমানা টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। ওই ডেটাশিটে ব্যবহৃত ভুয়া নম্বরগুলোর উদাহরণ কুষ্টিয়া ল-০০-০০০, কুষ্টিয়া-হ-০০-০০০২১২ বা ঢাকা মেট্রো-হ-০০-০০২১০ ইত্যাদি। এসব ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে কেস ফাইলিং দেখিয়ে নির্ধারিত জরিমানার টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। ভুয়া নম্বর দিয়েই ফাইলপত্র প্রস্তুত করে রাখে পুলিশ।
কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামের হায়দার আলীর অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কুষ্টিয়ার মজমপুর এলাকা থেকে ট্রাফিক পুলিশ আমার সদ্য কেনা অনটেস্ট মোটরসাইকেলটি আটক করে এবং কোনোপ্রকার কাগজপত্র বা রিসিট না দিয়েই আমাকে মজমপুর ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করতে বলে। পরে সেখানে গেলে দেখতে পাই মুনশির টেবিলে লাইন ধরে লোকজন টাকা দিচ্ছে। কোনো প্রকার রিসিট ছাড়াই প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমিও টাকা দিলাম গাড়ি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু রিসিট চাওয়ায় মুনশিসহ ওই অফিসের আরও তিন-চারজন পুলিশ আমার ওপর চরম ক্ষেপে যান এবং আমার সঙ্গে অমানবিক দুর্ব্যবহার করে অফিস থেকে বের করে দেন। পরে আমার বাইকটি ছাড়িয়ে এনে রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে আবার শোরুমে ফেরত দিয়ে দিই। তারা টাকাও নেবে আবার দুর্ব্যবহার করাটাও নিত্যদিনের ঘটনা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টিআই-ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলামের খুঁটির জোর কোথায় ? নিশ্চয় তিনি উপর মহলকে ম্যানেজ করেই পকেট বাণিজ্য করে যাচ্ছেন, সেই সাথে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা।
পুলিশের তালিকায় সংযোজিত ওই নম্বরগুলো যাচাই করতে কথা হয় কুষ্টিয়া বিআরটিএর মোটর যান পরিদর্শক কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ০০ দিয়ে যে নম্বরগুলো এই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এই নম্বরগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো ভুয়া নম্বর। এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুষ্টিয়া ট্রাফিক অফিসের টিআই-ওয়ান পুলিশ পরিদর্শক ফকরুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্সবিহীনসহ নানা কারণে আটক মোটরসাইকেল কোনোভাবেই টাকাপয়সার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, নম্বরগুলো ভুয়া নম্বর বলার সুযোগ নেই। কারণ পুলিশ যখন কোনো নম্বরবিহীন গাড়ি আটক করে, তখন সেই গাড়িগুলোর মামলা দিতে হলে আমাদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারে এন্ট্রি করার ক্ষেত্রে যেকোনো একটি নম্বর ব্যবহার করতে হয়। এখানেও সেটাই করা হয়েছে। তা ছাড়া টাকা পয়সার বিনিময়ে বৈধ কাগজপত্রসহ নির্ধারিত জরিমানা পরিশোধ ছাড়া আটক কোনো গাড়ি অবমুক্ত করার বিধান নেই।