কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি॥
করোনা সংক্রমণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার তালিকায় প্রথম কুষ্টিয়া। জুন মাসে পুরোটাই কুষ্টিয়ায় করোনা দাপট ছিল। অস্বাভাবিক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। কুষ্টিয়ায় টানা ২২ দিনের বিধিনিষেধ শেষে গত শনিবার ০৩ জুলাই সকাল ৮টা থেকে রবিবার ০৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদেরে মধ্যে করোনায় ১৩ এবং ছয়জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ২৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. তাপস কুমার সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তাপস কুমার সরকার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় ১৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৬০৯ টি নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১.৬৯ শতাংশ। সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলায় শনাক্ত বাড়ছে। শনাক্ত ১৯৩ জনের মধ্যে এ উপজেলাতেই ৪৫ জন, সদরে ৩৬ জন, খোকসা ও কুমারখালী উপজেলাতে ৩১ জন করে, ভেড়ামারায় ২৭ জন ও মিরপুর উপজেলায় ২৩ জন রয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৭৬২ জন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৩ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৬৫ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ২২৮ জন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৮-১০ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জুনে করোনার দাপট বাড়বে, এমন একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবে এতটা হবে, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। মানুষকে সচেতন করা ছাড়া আর করোনা মোকাবিলার কোনো পথ নেই।
সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বললেন, সরকার সবকিছু দিয়ে করোনা মহামারি মোকাবিলা করছে। সরকারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সামরিক প্রশাসনকে তারা সহযোগীতা করছেন। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের জন্য কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। এ সময় ঔষধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সব ধরনের দোকান, শপিংমল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।