কুষ্টিয়া কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মনোহরদিয়া ইউনিয়নের কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ টি পদে নিয়োগ নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন ও প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী বিধি মতে চলতি বছরের গত ৯ আগস্ট কুষ্টিয়ার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় চারটি পদে ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ৪ টি পদের মধ্যে উক্ত বিদ্যালয়ের ল্যাব অপারেটর ১ জন, নৈশ প্রহরী ১ জন, সিকিউরিটি গার্ড ১ জন, ও পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ১ জন সহ মোট ৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য ৫ থেকে ৬ টি করে আবেদন ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে প্রার্থীরা। উক্ত নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন তাদের মনোনীত প্রার্থীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ও মনোহরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মান্নান তালুকদার।
আব্দুল মান্নান তালুকদার জানান, কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪টি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। যার মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী পদে আমার ছেলে মো: মেহেদী হাসান বাবু আবেদন করে। আমি জানতে পারলাম যে. পদটিতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অন্যকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানা মাত্র আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হাসেনকে জানালে তিনি আমাকে বলেন তোমার ছেলে যদি আবেদন পত্রটি প্রত্যাহার করে তাহলে সভাপতি সাহেব তোমাকে মোটা অংকের টাকা দিবে। তার এক সপ্তাহ পরে তিনি আমাকে আরও বলেন যে, নৈশ প্রহরী পদের জন্য একজন ৭ লক্ষ টাকা দিয়েছে, তুমি যদি এর চেয়ে বেশি টাকা দাও তাহলে চাকরিটি তোমার ছেলে পাবে, আর না হলে পাবে না। এ ব্যাপারে আব্দুল মান্নান তালুকদারবাদি হয়ে কুষ্টিয়া জেলার শিক্ষা অফিসার বরাবর আম্মা ২৯ তারিখ সকালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
কামরুজ্জামান ডাবলু নামের একজন প্রার্থী জানান, আমি ও আমার স্ত্রী পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে আবেদন করি। তারপর ম্যানেজিং কমিটির সাথে কথা বললে তারা আমাকে এক পর্যায়ে সরাসরি বলেই ফেলে, এখানে নিয়োগ পেতে হলে অর্থ লাগবে। একজন সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়েছে। এই নিয়োগ যদি তুমি নিতে চাও তাহলে তোমাকে এই টাকার ডাবলের চাইতেও বেশি দিতে হবে। আমি গরীব মানুষ টাকা কোথায় পাবো। আমি চাই এই নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ করে সঠিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হোক।
সাফায়েত হোসেন তালুকদার নামের এক যুবক বলেন, আমি কন্দর্পদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিকিউরিটি পদের জন্য আবেদন করেছি। আবেদন করার পরে শুনছি এখানে অনেক টাকার লেনদেন চলছে। যারা যোগ্য প্রার্থী তাদেরকে চাকরী দেওয়া হচ্ছেনা। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের সভাপতির পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছে তুমি যদি আবেদন প্রত্যাহার করো তাহলে তোমাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। আর যদি চাকরি করতে চাও তাহলে তোমাকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তাহলেই তোমার চাকরী হবে। আমার একটাই দাবি যারা যোগ্য তাদের কোন প্রকার ঘুষ বানিজ্য ছাড়াই চাকরীতে নিয়োগ দেওয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের সাথে মুঠো ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রমান সাপেক্ষে দেখবেন। কেউ যদি আমাকে টাকা দিয়ে থাকে, সে আমার সামনে এসে বলুক তাহলে আমি স্বীকার করবো। নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে এখনো ডিজির কোন প্রতিনিধি আসেনি, পরীক্ষাও হয়নি, নিয়োগও হয়নি তাহলে আমি কিভাবে টাকা নিবো।
ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ঠান্টু হোসেন বলেন, আমি টাকা নিয়েছি তার কেউ কোন প্রমান দিতে পারবে। টাকা নেওয়ার প্রমান দেখাক। আমাকে নিয়ে রাজনৈতিক কারনে এগুলো বলছে। টাকার প্রমান কেউ দেখাতে পারবেনা। আমি নিয়োগের জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেয়নি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমার ঠিক মনে নেই। তবে নিয়োগ নিয়ে যদি কোন রকম ঘুষ বানিজ্য হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।