কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
কুষ্টিয় পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় ১৬৮টি ইট ভাটা রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২২টি বৈধ। এছাড়া দৌলতপুর উপজেলার ২৯টি ইট ভাটার মধ্যে ২৮টিই অবৈধ। এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ নষ্ট করে। নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকি সব চলছে কাঠ পুড়িয়ে। ইট তৈরির জন্য কাটা হয় ফসলি জমির মাঠ। অনেকেই আবার ইটের ভাটাতেই বসিয়েছেন কাঠ কাটার কল। এগুলো এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমি, দেদারসে ব্যবহূত হচ্ছে কাঠ। এ অবৈধ কার্যক্রমে এবার অভিনব এক কৌশল যোগ হয়েছে। ইট ভাটাতেই বসিয়েছে ভ্রাম্যমাণ স’মিল। ইট পোড়াতে বড়-বড় গাছের গুঁড়ি চিরে ভাটায় ফেলা হচ্ছে। সদর উপজেলার বেশ ক’টি ইটভাটা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। অথচ এসব অবৈধ ইটভাটা দিনের পর দিন অবাধে চলছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার কথা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই এখনো চলছে।
জেলা সদরের অদূরে তালবাড়িয়ায় খয়বার প্রামাণিকের কেবিপি ইটভাটা, সাব্বির রানার আরপিকে, বারখাদায় আলাল উদ্দিনের এনবিসি এবং এএসএসবি ইটভাটার পাশে স’মিল বসাতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার জুগিয়া, বারখাদা উত্তরপাড়া ও চারুলিয়ায় গড়াই নদীর পাশে শত শত বিঘা সরকারি খাস খতিয়ানের আবাদি জমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে এসব ভাটা। ভাটা গুলোয় সাংবাদিক প্রবেশে রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে না এলে প্রবেশ অসম্ভব। তাই ক্রেতা পরিচয়ে কেবিপি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে ইট পোড়াতে বড় বড় গাছের গুঁড়ি জড়ো করা হয়েছে। ভাটায় কর্মরত এক শ্রমিক বলেন, প্রতি চার লাখ ইট তৈরিতে ২০-২২ দিন সময় লাগে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মণ কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আগে দূর থেকে কাঠ চিরে আনা হতো। এতে সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হতো। যে কারণে ভাটামালিক নিজেই এক করাত বিশিষ্ট স’মিল স্থাপন করেছেন।
এ বিষয়ে ভাটা মালিক খয়বার প্রামাণিক বলেন, তার ভাটার সব কাগজপত্র ঠিক নেই। তবে সবাই যেভাবে চলছেন, তিনিও সেভাবেই চলছেন। এ এলাকাতেই পরপর ১০টি ভাটা রয়েছে। তারা সবাই কাঠ পোড়ায়। বারখাদা উত্তরপাড়ায় দুটি ভাটার মালিক আলাল উদ্দিন। দলীয় কোনো পদে না থাকলেও তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেন। এলাকায় তার প্রভাবও রয়েছে। প্রায় ১০০ বিঘা আবাদি জমি দখল করে তিনি গড়ে তুলেছেন এনবিসি এবং এএসএসবি ভাটা। সেখানেও বসানো হয়েছে স’ মিল।
তবে কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকজন ভাটা মালিকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমাদের সংগঠন আছে সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেলার সংশ্লিষ্ট প্রতিটা দপ্তরকে ম্যানেজ করে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য প্রত্যেক বছরে সংগঠনকে দিতে হচ্ছে হচ্ছে ১ লক্ষ টাকা করে।
কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. এসএম মুসতানজিদ বলেন, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটা গুলেঅর বিরুদ্ধে অচিরেই অভিজান চালানো হবে।