কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে ৩ মাস হয়ে গেলেও নিখোঁজ জেলে রহমাতুল্লাহর সন্ধান মেলেনি ॥
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : নদী মাতৃক বাংলাদেশের দক্ষিনে পর্যটন
কেন্দ্র কুয়াকাটার মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরসহ উপকূলীয় এলাকার প্রায়
৮০ভাগ মানুষের জীবন জিবিকা নির্ভর করে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের উপর।
এখানে বসবাসরত মানুষের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে জেলে শ্রমিক। জীবিকার তাগিদে
জেলে শ্রমিকরা ভরা মৌসুমে গভীর সমুদ্রে রূপালী ইলিশ আহরণ করতে যায়। জেলে
শ্রমিকরা পিতা-মাতা ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র ও কন্যা পরিবারের সকলকে রেখে
জীবন যুদ্ধে জীবিকা নির্বাহের আশায় ট্রলার যোগে চলে যায় গভীর সাগরে। এই
জীবন যুদ্ধে কেউ মাছ শিকার করে ফিরে আসেন তীরে, কেউবা আবার দুর্যোগের
কবলে পরে চির নিদ্রায় চলে যান গভীর সমুদ্রে। নিখোঁজ হওয়া পরিবারগুলোতে
একদিকে স্বজন হারা বেদনার আর্তনাৎ, অপরদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারের
ক্ষুদা নিবারনের যন্ত্রণা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে গত ১৮ আগস্ট গভীর রাতে
৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার গভীরে ট্রলার ডুবির ঘটনাটি ঘটে। ওই রাতে
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ায় গভীর সমুদ্রে শতাধীক
জেলেসহ এ অঞ্চলের ১২’টি ট্রলার ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলো হচ্ছে
হানিফ মাঝির মালিকানাধীন এফ,বি মায়ের দোয়া, দুলাল কোম্পানীর এফ,বি
মা-মনি-২, মা-মনি-৩, এফ,বি সাইদুল, হাবিব খলিফার মালিকানাধীন এফ,বি
সাইফুল, এফ,বি আশরাফুল, এফ,বি আল-মামুন ও তার আড়দের (গদির) এফ,বি মা
কুলসুম, ইউসুব কোম্পানীর এফ,বি নুরভানু, নাম বিহিন রুহুল খলিফার একটি,
খোকনের একটি ও বেল্লালের একটি। এসব ট্রলারের জেলেরা অন্যান্য ট্রলারের
সাহায্যে তীরে ফিরলেও হানিফ মাঝির মালিকানাধীন এফ,বি মায়ের দোয়া ট্রলারের
৯জেলের মধ্যে ৫জন জীবিত ফিরে আসছে এবং ৩জনের মৃত সংবাদ পাওয়া গেছে।
আলীপুর নিবাসী ছলিমুল্লাহর পুত্র জেলে রহমাতুল্লাহ (২১) জীবিত না মৃত কোন
সন্ধান মেলেনি। রহমাতুল্লাহর মায়ের আকুতি “মোর পোলাডারে একটু আইন্যা দেন,
মুই আর কিছু চাইনা”-এমন আহাজারি করছে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ জেলে
রহমাতুল্লাহর মা ছেনোয়ারা বেগমের, এযেনো হৃদয় বিদারক এক কাহিনী।
নিখোঁজ জেলে রহমাতুল্লাহর মা ছেনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজ
হয়েছে প্রায় তিন মাস হয়েগেছে। এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাইনী।
বর্তমানে আমার সংসার কোন রকমের খেয়ে না খেয়ে চলছে, তবে আমি কোন সাহায্য
চাইনা, আমি আমার ছেলের মা, ডাক শুনতে চাই। সন্ধান মিল্লে মা ছেনোয়ারা
বেগমের মোবাইল নম্বর – ০১৫৬০০০০৫৬৬, ০১৭৯৯৪৩২৮৭৬।
জেলে হানিফ মাঝি জানান, তীব্র বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তাদের
ট্রলারটি সমুদ্রে উল্টে পড়ে। এসময় তিনি সহ অন্য জেলেরা পানিতে ভাসমান
অবস্থায় ছিলেন, পরক্ষনে অন্য ট্রলারের জেলেরা তাদের ৫জনকে উদ্ধার করে
তীরে নিয়ে আসেন।
আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, বৈরী
আবহাওয়ার কারণে ট্রলার ডুবির কারণে এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের
পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানান। তবে জীবিত থাকলে এতদিনে কোথাও না
কোথাও সন্ধান পাওয়া যেত। অনেক সময় জীবিত লোকও নিখোঁজ থাকে, আবার অনেক
সময় মৃত দেহও নিখোঁজ থাকে। যখনই নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান পাওয়া যাবে সাথে
সাথে আমরা তাদেরকে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার শতভাগ চেষ্টা করব।