কুয়াকাটায় রাতের আকাশে ভিন্ন এক তারার ঝিলিক, চলছে মনছোঁয়া রং-বেরংয়ের ফানুস উৎসব ॥

প্রকাশিত: ১:০০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২০

রাসেল কবির মুরাদ,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি; কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ার
২৮টি রাখাইন পল্লীর রাখাইনর আদিবাসীরা শনিবার সন্ধ্যার আকাশে শত শত ফানুস
উড়িয়ে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রবারণা উৎসব
চলবে সোমবার পর্যন্ত। বৌদ্ধ বিহার গুলোতে আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে।
প্রবারণা পুর্নিমার রাতে আকাশবাতি বা ফানুস উড়ানোর মধ্যদিয়ে গৌতম বৌদ্ধের
অহিংসার বাণী ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুখ-শান্তি আর কল্যান কামনা করেন
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। রাতের আকাশের দিকে তাকালে অগনিত তারার মাঝে
দেখা মিলবে ভিন্ন এক অসংখ্য তারার মেলা। সেখান থেকে ২/১ টি তারা মাটিতে
খসে পড়ছে। এসব আবার কুড়াতেও ব্যস্ত দুরন্ত বালকের দল। আসলে ওই গুলো তারা
নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রবারণা উৎসবে এ
কার্তিকের পূর্নিমায় আকাশ ছোঁয়া রং-বেরংয়ের ফানুস। প্রবারণা শব্দের অর্থ
আত্মনিবেদন। আর ফানুস শব্দের অর্থ আকাশবাতি।

আয়োজক কমিটির অন্যতম তেননান রাখাইন বলেন, এ উৎসব ঘিরে রাখাইন পল্লীর
প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমোজ। চলছে ধর্মীয় নাচ-গান,বয়ানও
আতশবাঁজি। বিহারগুলোতে আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় নর-নারী,
শিশু, যুবক-যুবতীরা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন
করছেন। নানান ধর্মের মানুষ ও বিভিন্ন শেপার লোকজনকে আথিতিয়তায় পরিবেশন
করা হয় বিন্নি চালের হরেক রকম পিঠা পুলি। রাখাইন অধিকার অন্দোলন কর্মী ও
সংগঠক ম্যংমিয়া রাখাইন জানিয়েছেন, এ পূর্নিমায় গৌতম বুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে
ধর্ম প্রচার শুরু করেছেন। গৌতম বৌদ্ধের অনুসারী ও সমাজ সেবক চোতেন রাখাইন
বলেন, আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে কার্তিকের এ
পূর্ণিমাতে শেষ হয়। এ সময় বিহার গুলোতে ৩দিন গৌতম বুদ্ধের স্মরনে নানা
ধর্মীয় কার্য সম্পাদন ও রাতের আকাশ আলোকিত করতে ফানুস উড়িয়ে থাকে তারা।
রাখাইন নর-নারীরা প্রতিদিন সকালে বুদ্ধ পুজার উপাচার হতে পরিস্কার পোশাকে
মহাসমারহে বিহারে গমন করে । আশার তৃপ্তি, অভিলাস পূরণ, ধ্যান, শিক্ষা ও
কর্ম সম্পাদনের জন্য এ দিনে তারা আপ্যায়নও করে থাকেন।

মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ও গেীতম বুদ্ধ পাঠাগারের গবেষক
বলেন, গৌতম বুদ্ধ সমাজ সংসারের মায়া ত্যাগ করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিল
ধর্ম প্রচারের কাজে। তিনি মুলত শাসক ছিলেন। পরে এক সময় তার বোধদয় হয় তাকে
পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে ধর্ম প্রচারের কাজে। তখন রাখাইনদের এ ধর্মজাযক গৃহ
ত্যাগ করেছিলেন। ভারতের কপিলা বস্তু নামক স্থানে পূর্নকর্ম সম্পাদন
করেছে। এরপর লোকালয় ফিরলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি অনেকেই।
এসময় নিজের চুল তলোয়ার দিয়ে কেটে আকাশ পানে ছুড়ে মেরেছিল। সে চুল আর নিচে
ফিরে আসেননি বলে গৌতম বুদ্ধ পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। সেই থেকে গৌতম
বুদ্ধকে মনে করতে বৌদ্ব ধর্মাবলম্বীরা শুভ প্রবারণা উৎসবে প্রতিবছর এ
পূর্ণিমায় নানা ধর্মীয় কার্য সম্পাদন শেষে ফানুস উড়িয়ে থাকে। এ উৎসবকে
ঘিরে কুয়াকাটা রাখাইন পল্লী ও বৌদ্ধ বিহার গুলোতে বিগত বছরের মত চলতি
বছরও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে কুয়াকাটা আগত পর্যটকরা ফানুস
উৎসব দেখার জন্য ভীড় করছে।

এ প্রবারণা উৎসব প্রানবন্ত ও মুখর করতে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক
নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ প্রশাসনসহ কুয়াকাটা
পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বর আনসার
ভিডিপি সদস্যরা।
গোড়াআমখোলা পাড়ার বিজয় রামা বিহারের ভিক্ষু উ-সুচিটা বলেন, দীর্ঘ একমাস
ধরে রং-বেরংয়ের কাগজ এবং বাঁেশর কঞ্চি দিয়ে দেড়শ’ ফানুস বানানো হয়েছে।
পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন রাখাইন পাড়ায় এক যোগে প্রবারণা
পুর্নিমা পালিত হয়েছে।

রাখাইন নেত্রী মেইনথিন প্রমীলা জানান, ফানুস এখন সার্বজনীন উৎসব। নানা
পোশাজীবি, সকল ধর্মের লোকজন এ উৎসবে মিলিত হয়ে আনন্দ-উৎসব করে।

পটুয়াখালী জেলা রাখাইন বুড্ডিষ্ট ওয়েল ফেয়ারের সভাপতি বাবু এমং তালুকদার
বলেন, কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ার ২৮টি পল্লীর রাখাইনরা তিনদিন ধরে এ উৎসব
একযোগে পালন করেছে।




error: Content is protected !!