কুয়াকাটা সৈকত বারংবার ঝড়ের আঘাতে হারাতে বসেছে তার নান্দনিক সৌন্দযর্তা ॥

প্রকাশিত: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১২, ২০২১

রাসেল কবির মুরাদ ,পটুয়াখালী প্রতিনিধি ঃ কুয়াকাটা সৈকত
বারবার ঝড়ের আঘাতে হারাতে বসেছে তার দুষ্টিনন্দিত শোভা ও সৌন্দযর্মন্ডিত
প্রকৃতি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও দফায় দফায়
পূর্নিমা,অমাবস্যর প্রভাবে সৈকতটি শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ক্রমশই বিলীন
হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দয। ইতোমধ্যে
সমুদ্রগর্ভে ভেসে গেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শত শত গাছ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির
মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা পাবলিক টয়লেট, জাতীয় উদ্যান, পযটন পার্কসহ
মসজিদ-মন্দির।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, প্রাকৃতিক দুযোগ ও সাগরের রুদ্র-রোষে
হারিয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দয। দফায় দফায় বিধ্বস্ত হয়েছে
সৈকত লাগোয়া জাতীয় উদ্যান। ভেসে গেছে অভ্যস্তরীণ ছোট ছোট স্থাপনা। জাতীয়
উদ্যানের লেকের উপর সেতু, ঘাটলা, গোলঘর, শোভাবর্ধনের বাগান, বেঞ্চি,
স্থায়ী ছাতা সবই সাগরে গিলে খেয়েছে। এরই মধ্যে ফয়েজ মিয়ার ‘ফার্মস
এ্যান্ড ফার্মস লিঃ’-এর সারি সারি নারিকেল বাগান সাগর বক্ষে হারিয়ে গেছে।
সাগরে আগেই গিলে ফেলেছে সরকারি ডাকবাংলো, এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট।
তবে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কুয়াকাটার স্থানীয়
বাসিন্দাসহ বিনিয়োগকারীরা চরম উৎকন্ঠায় মধ্যে রয়েছে। তবে পরিবেশবিদরা
বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমুদ্রের তলদেশে পলি জমায় পানির স্তর
অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে
পড়ছে। আর বিপযর্স্থ হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।

সৈকতের বিভিন্ন পযটন স্থাপনাসমূহ ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় ইয়াস
ও পূর্নিমার প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় সৈকতের গাছের গোরা থেকে বালু
সরে শিকড় বেরিয়ে এসেছে। কোনো রকম দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু গাছ। সৈকতে বিশাল
এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের
আঘাতে বালুতে লুটিয়ে পড়ছে বড় বড় গাছ। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই
প্রাকৃতিক দুযোগ ও সামুদ্রিক ঢেউয়ের ঝাপটায় ভাঙনের মুখে পড়ে বনাঞ্চল।
অমাবস্যা, পূর্নিমা কিংবা প্রাকৃতিক ঝড় ও জলোচ্ছাসে প্রতিবছর বনভূমি
ধ্বংস হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কুয়াকাটার স্থায়ীবাসিন্দা মোশারেফ এ প্রতিবেদককে বলেন, সাগরের ঢেউয়ের
ঝাপটায় সৈকতের বালু ক্ষয় হয়ে বেশ কিছু গাছ পালা নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে
প্রতিনিয়ত বালু ক্ষয় হলে সৈকতের সৌন্দয হারাবে। জরুরী ভিত্তিতে সৈকতের
বালু ক্ষয় রোধে স্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া উচিৎ বলে তিনি জানিয়েছেন।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা টোয়াক’র সাধারন সম্পাদক আনোয়ার
হোসেন আনু বলেন, সৈকতে এক সময় সারি সারি নারিকেল বাগন ছিল। গাড়ি পার্কিং,
পিকনিক স্পট,পযর্টকদের বিনোদন কেন্দ্র ছিল এ বাগানটি। কিন্তু কালের
বিবর্তনে বাগানটি আজ শুধুই স্মৃতি।

মহিপুর বনবিভাগ কর্মকর্তা মো: আবদুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটা, খাজুরা,
গঙ্গামতি বীটের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা করে উর্ধ্বতন
কর্মকতার কাছে পাঠানো হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার গনমাধ্যমকে বলেন, সাগরের উত্তাল
ঢেউয়ের তান্ডব ঠেকানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগে সৈকতে বালু ভর্তি
জিও টিউব ফালানো হয়। জিও টিউব থাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তান্ডবে সৈকত
কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছে।

কলাপাড়া সার্কেলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো: হালিম
ছালেহী সাংবাদিকদের বলেন, সৈকতে পূর্ব সতর্কতামূলক বালু ভর্তি জিও টিউব
ফেলানো রয়েছে। সৈকত রক্ষা প্রকল্পের এ কাযর্ক্রম চলমান রয়েছে এবং স্থায়ী
প্রটেকশনে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প আকারে প্রস্তাবনা
দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।




error: Content is protected !!