গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া সুজানগরের মেধাবী ছাত্রী সেতুর লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে?
আলাউদ্দিন হোসেন,পাবনা: নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও এগিয়ে গেছে সামনে। তাই ক্ষুধার কষ্ট ,আর্থিক অনটন দারিদ্র্যের দৈন্য দমাতে পারেনি সেতুর। অভাব অনাটনের সংসারে একমাত্র ব্রত ছিল পড়াশুনা। পণ ছিল যে করেই হোক এসএসসিতে ভালো ফল করবেই । তাই সব বাধা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সাফল্যর শিখরে। তবে চরম দারিদ্র্যের কারণে নিজের লেখাপড়া ও ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কিত সেতু আক্তার। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল সেতুর নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাধা জয় করে এবারের এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের খয়রান পশ্চিমপাড়া এলাকার হতদরিদ্র দিনমজুর আবুল মোল্লার মেয়ে সেতু আক্তার। সে মানিকহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর আগে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছিল সেতু। অভাবের সংসারে সেতুর হতদিরদ্র পিতার সম্বল বলতে তার দাদার বাড়ির ভিটার ৫/৬ কাঠা জমি। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সেতু সবার ছোট। সংসারে আর্থিক দৈন্যতার কারণে অন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারেনি সেতুর পিতা। অল্প বয়সেই ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে সেতুকেও বিয়ে দেবার চিন্তাভাবনা করলেও মেয়েটির পড়াশুনার প্রচন্ড আগ্রহ থাকায় বিয়ে দিতে পারেননি। দিনমজুর পিতা অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতিদিন যে টাকা রোজগার করেন তাই দিয়ে সংসারের খরছ মেটাতেই হিমশিম খেতে হয় পরিবারটির। সেখানে সন্তানের পড়াশুনার খরছ জুটবে কিভাবে। এর মধ্যেও সেতুর মা হাঁস মরগি পালন করে এতদিন মেয়েকে পড়াশুনার খরচ যুগিয়েছেন। বুধবার কান্নাজড়িত কন্ঠে মা হামিদা খাতুন এ প্রতিনিধিকে বলেন কোন কোন দিন সকালের খাবার থাকেনা ঘরে। এ জন্য বহুবার মেয়েকে না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। নিরুপায় হয়ে কোন কোন সময় পাশের বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ করতে হয়েছে তাকে। অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ করে অল্প বয়সেই ৩ মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু নানা দুর্ভোগের মধ্যেও পড়াশুনা থেকে পিছপা হয়নি সেতু। সেতুর মা অভিভূত হয়ে কষ্টের এ সব কথা জানিয়ে বলেন হতদরিদ্র পিতার বোঝা হলেও ছোট বেলা থেকে তার গর্ভের ছোট মেয়ে সেতুর লেখাপড়ার ঝোক ছিল অনেক বেশি । সেতুর পিতা আবুল মোল্লা জানান মেয়েকে এখন পড়াশুনা করাতে তো অনেক টাকা লাগবে সে টাকা আমরা গরিব মানুষ পাব কোথায়। তাই হয়তো বা নিরুপায় হয়ে অন্য মেয়েদের মত তার পড়ালেখাও বন্ধ করে দিতে হবে। স্কুলের শিক্ষক মনির হোসেন জানান ফলাফল ভালো করে শুধু মা-বাবারই নয়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গ্রামের মুখ উজ্জল করেছে সেতু। তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলেও ভবিষৎতে অর্থের কাছে হার মানতে পারে হত দরিদ্র এই মেধাবীর। সেতুর সহপাঠিরা জানায় দরিদ্র মেধাবী বলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সব সময় সদয় ছিলেন সেতুর প্রতি। এখন তার পড়ালেখার সবচেয়ে বড় বাধা অসচ্ছলতা। অভাবের বাধ ভেঙ্গে সাফল্যের চ্যালেঞ্জ এখন সামনের দিকে সেতুর। সে নিজেকে আলোকিত করে হাঁসি ফুটিয়েছেন মা-বাবা,স্কুলের শিক্ষক ও গ্রামবাসীর মুখে। দুঃচিন্তা এখন সেতুর সামনের লেখাপড়ার খরছ নিয়ে। আবার আর্থিক অচ্ছলতার কার
মেয়ের লেখাপড়ার নিয়ে শঙ্কিত মা-বাবাও। তবে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং সকলের সহযোগিতায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সেতু আক্তার। তার সেই স্বপ্ন কি পূরণ হবে।