ঘুষ গ্রহনের ছবি তোলায় চকরিয়ায় ইউএনও কর্তৃক মধ্যযুগীয় কায়দায় সাংবাদিক নির্যাতন।
উমার রাযী। কক্সবাজার প্রতিনিধি-
ঘুষ গ্রহনের ছবি তোলায় কক্সবাজার চকরিয়ার ইউএনও সৈয়দ শামসূল তাবরীজ তার সরকারী কার্যালয়ে সাংবাদিক সালেম নুরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে বলে জানান নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সালেম বিন নুর। এসময় নির্যাতনে সহযোগিতা করেন, ইউএনও’র ক্যাডার বাহিনী অফিস সহকারী, আনসার ও ইউএনও অফিস কেন্দ্রীক কয়েকজন চিহ্নিত দালাল। গুরুতর আহত সাংবাদিক বর্তমানে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহত ছালেম বিন নুর কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক আপন কন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক প্রথম প্রহর পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি উপজেলার শাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মোহাম্মদ নুরের পুত্র।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, ঘুষ গ্রহণের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে চকোরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসূল তাবরীজ এর দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসান তার মোবাইল ফোন ০১৬১০১৮১১২৪ নাম্বার থেকে সাংবাদিক ছালেম বিন নুর এর ফোন এ-০১৬০৯৫১৭৪৪০ নম্বরে ফোন করে তার অফিসে ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিজ কক্ষে রশি দিয়ে বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে দফায় দফায় পিটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এরা শারিরিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হননি, উক্ত সাংবাদিকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী ও মাকে বাধ্য করে ফোন নিয়ে ইউএনও অফিসে আসার জন্য। তার মা ও স্ত্রী উইএনও অফিসে মোবাইল নিয়ে ছুটে আসলে তাদের উপস্থিতেও ইউএনও রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে আবারও নির্যাতন করে মোবাইলের সকল ডকুমেন্টস মুছে ফেলেন এবং ইলেকট্রিক শক দিয়ে স্টাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন এবং বলেন, ‘আমি যেন তোর চেহারা চকোরিয়া এলাকায় আর না দেখি’।
মারধরের আঘাত সংবলিত কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ভাইরাল হয়ে যায় মুহুর্তেই। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে দেখা গেছে, আহত সংবাদকর্মী ছালেমের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেথলে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে আছে।
উল্লেখ্য যে, গত মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী শান্তি পদ-দের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় দৈনিক আপন কন্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম প্রহর পত্রিকার কক্সবাজারের বিশেষ প্রতিনিধি ছালেম বিন নূরকে সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে অফিসে আটকে রেখে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ স্বয়ং, অধীনস্থ অফিস সহকারী শান্তি পদ দে, আনসার ও তার পালিত বহিরাগত কয়েকজন সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাংবাদিক ছালেম বিন নুরকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে সমস্ত শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে রক্তাক্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, মা এবং স্ত্রীকে দিয়ে সালেম নুরের বাড়ি থেকে তার ব্যবহৃত এনড্রয়েড ফোন আনিয়ে সমস্ত ডকুমেন্ট মুছে ফেলে মুচলেকা নিয়েছেন স্বয়ং ইউএনও।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সালেম বিন নুর বলেন, ইউএনও’র দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসান তার মোবাইল ফোন ০১৬১০১৮১১২৪ নাম্বার থেকে ফোন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসূল তাবরীজ এর সাথে দেখা করতে বলেন। আমি ইউএনও অফিসে গেলেই সাথে সাথে আমার হাত পা বেঁধে বিবস্ত্র করে ইউএনও সৈয়দ শামসূল তাবরীজ, তার ব্যক্তিগত কর্মচারী মাহমুদুল, ইফাত ও কাজল, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার ওসমান গণি তাকে রাবারের পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটান। খবর পেয়ে আমার স্ত্রী ও মা সেখানে উপস্থিত হন। তাদের সামনেও আমাকে বেড়ধক পেটানো হয়। পরে আমার ব্যবহৃত এনড্রয়েড ফোন বাসা থেকে আনতে আমার মা ও স্ত্রীকে বাধ্য করেন। তারা পুন:রায় বাড়িতে যায় এনড্রয়েড ফোন আনতে। তারা আসতে দেরি হওয়ায় আরও এক দফা পেটানো হয় আমাকে। এ সময় তার মা ও স্ত্রী এনড্রয়েড ফোন নিয়ে ইউএনও অফিসে ঢুকে আমাকে মারধর করতে দেখে ইউএনওর পায়ে ধরে ক্ষমা চান আমার মা । এরপরও সৈয়দ শামসূল তাবরীজ এর মন গলেনি। তারা আমাকে এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে রাবারের পাইপ দিয়ে। মায়ের কাছ থেকে এনড্রয়েড ফোন নিয়ে সমস্ত ডকুমেন্ট মুছে দিয়ে মোবাইল ফোনটি রেখে দেন তিনি।
এসময় ‘ভবিষ্যতে ফেসবুকে এমন পোস্ট দেবেন না’ মর্মে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন ইউএনও। স্বাক্ষর দিতে না চাওয়ায় ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন সালেম নূর। এসময় ইউএনও সাংবাদিক সালেমকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকীসহ তার কর্মস্থল দৈনিক আপন কন্ঠ ও দৈনিক প্রথম প্রহর পত্রিকার ডিকলারেশন বাতিলের হুমকীও দিয়েছেন বলে জানান নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক।