নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশি কোম্পানি, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট-বড় মিলিয়ে বাংলাদেশে ১৬২টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন, নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযোজন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কারণে প্রতিবছরই চায়ের উৎপাদন বেড়ে চলছিল। কিন্তু গত বছর (২০১৯) চা শিল্পের ১৬৫ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদিত এ চায়ের পরিমাণ ৯৫ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি কেজি চা পাতা।
চা সংশ্লিষ্টরা চায়ের বাম্পার ফলনের কারণ হিসেবে চা বাগানগুলোতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া, আর বিশেষ করে পোকামাকড়ের আক্রমণ না কম থাকা, খরার কবলে না পড়াসহ সর্বোপরি বাংলাদেশ চা বোর্ডের নজরদারিতে এবারও চা উৎপাদনে নতুন করে রের্কড করেছে।
শ্রীমঙ্গল জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের ডিজিএম ও বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, ‘চায়ের উৎপাদন বেশ ভালো হলেও চায়ের ন্যায্যমূল্য আমরা পাচ্ছি না। ভারত থেকে নিন্মমানের (এলসি চা পাতা) চোরাইপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অহরহ। এতে বাজারে চায়ের সার্বিক কোয়ালিটি খারাপ করছে। অন্যদিকে দেশি চা বাগান মালিকরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।’ একই অভিযোগ জানালেন, ইস্পাহানি মির্জাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা, মৌলভীবাজার হামিদিয়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক বলেন, ‘আবারও চা উৎপাদনে নতুন করে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদন ছিল ৯০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৯ কোটি কেজি চা পাতা। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৭৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে ১৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চা রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে চা শিল্প।’
বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমদ বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন প্রায় ৯৫ মিলিয়নের ওপরে। এটিই চায়ের ইতিহাসে দেশে সেরা রেকর্ড। চা উৎপাদনে সাফল্যের পেছনে সরকারের নানামুখী দিকনির্দেশনাগুলো সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। ঠিকমতো তদারকি আর কোনো ফ্যাক্টরি থেকে চা যাতে লিকেজ হতে না পারে এবং চা নিলামের বাইরে যাতে বেআইনিভাবে কোথাও বিক্রি না হয়, এগুলোর বিষয়ে কড়া নজরদারি ছিল। বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়নে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে চা উৎপাদিত হয়েছে ৮২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা পাতা। যা দেশের চা উৎপাদন মৌসুমের (২০১৮) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৮ সালের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ দশমিক ৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ২৩ লাখ কেজি চা পাতা। এর আগে ২০১৬ সালে সব রেকর্ড ভেঙে ১৬২ বছরের চা শিল্পের ইতিহাসে দেশের সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ৮ কোটি ৫৫ লাখ কেজি চা পাতা।