জেএমবির অর্থদাতা রশিদের কারণে কোণঠাসা স্বাধীনতা স্বপক্ষের শিল্পপতিরা: অন্যদিকে ডিসি এসপিকে হাইকোর্টে তলব

প্রকাশিত: ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২২
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ার বহুল আলোচিত চাউল ব্যবসায়ী ও চালকাল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি র্য্যবের তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের মদদদাতা আব্দুর রশিদের কারণে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ওসি সদর ও ব্রাক ব্যাংকের এমডিকে হাইকোর্ট তলব করেছে। আগামী ২১ আগস্ট সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তাদেরকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। কুষ্টিয়ার আইলচারা বাজারে ভিআইপি অটো রাইস মিল ও ভিআইপি অটোফ্লাওয়ার মিলের ১২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৫ লক্ষ টাকায় নিলামে কিনে নিলে মিল মালিক উচ্চ আদালতে শরণাপন্ন হন। উচ্চ আদালত নিলাম কার্যক্রম স্থগিত আদেশ প্রদান করেন এবং প্রকৃত মিল মালিককে কিস্তি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু এই আদেশকে উপেক্ষা করে পুলিশ প্রহরায় ভোররাতে দখলে নেয় ভিআইপি অটো রাইসমিল ও ফ্লাওয়ার মিল। সেই সাথে মিল মালিক শফিকুল ইসলামের আবাসিক দুইটি বাড়ি একটি মার্কেটসহ সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর মালিক রশিদ গং সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। এ সময় দখলকৃত সম্পত্তি গুলি পুলিশ পাহারায় দেয়। প্রসঙ্গত গত ইউপি নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিপক্ষে রশিদ তার ভাই সিদ্দিককে প্রার্থী করেন। তিনি নিজেও ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোতালেবের ভাতিজাকে ভিআইপি শিল্প গ্রুপের মালিক শফিকুল ইসলাম নৌকার পক্ষে অর্থের যোগান দেন। রশিদ তাকে দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিশোধ হিসেবে গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় এবং ব্যাংকের যোগ সাজেসে নিলাম তোলে এবং ক্রয় দেখিয়ে দখল নেয়। ব্রাক ব্যাংক ভিআইপি রাইস ও অটো ফ্লাওয়ার এর সম্পত্তি ভ্যালুয়েশন করে ৯২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছিল ৪২ কোটি ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে এই ঋণ প্রদান করে। অথচ ব্যাংক নিলামে মাত্র ১৫ কোটি টাকায় ব্যাংক ভিআইপি রাইস রাইস মিলের সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়।
আব্দুর রশিদ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এক সময় আইলচারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তার ভাই জেলা বিএনপির কোষাধক্ষ্য ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে শায়েখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল। জেএমবির প্রধান অর্থদাতা হিসেবে কাজ করতেন আব্দুর রশিদ। প্রশাসনের উপমহলের কাছে তথ্য ছিল শীর্ষ জঙ্গি শায়েখ আব্দুর রহমান তার ভাই সানি, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই সহ জেএমবি সূরা সদস্যরা কুষ্টিয়ার আইলচারায় রশিদের ধানের চাতালে বৈঠকে বসছেন। উক্ত সংবাদ নিশ্চিত হয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী র‍্যাবের ডিজি সহ চৌকশ দল রশিদের চাতালে অভিযান চালালে আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায় জেএমবিস সন্ত্রাসীরা। ওই সময় রশিদ দীর্ঘদিনের জন্য গা ঢাকা দেয়।
এক সময় জেএমবির অর্থদাতা বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ বিভিন্ন কৌশলে ব্যাংকের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বর্তমানে তিনি টাকার দাপটে প্রতিশোধ মূলক অবস্থান থেকে ব্যবসায়ী নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শিল্পপতিকে পথে বসানোর চেষ্টা করে প্রশাসনকে বিতর্কের মুখে ফেলছেন। গত ১০ বছরে রশিদ বিভিন্ন সময় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে রাতারাতি চাউলের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা করেছেন। একইভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে রশিদের কুকর্ম।
এদিকে আব্দুর রশিদের এমন ঘৃণ আচরণে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি হাজি রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আব্দুর রশিদ একজন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে আরেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার পরিবার পরিজনকে পথে বসিয়েছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটা ব্যবসায়ীমূলক আচরণ নয়। এক শিল্পের মালিক আরেক শিল্পের মালিকের বিপদে পাশে না দাঁড়িয়ে বরং তাকে সর্বস্বান্ত করার যে ষড়যন্ত্র করছে তা আদৌ ঠিক নয়। অন্যদিকে এদিকে রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ব্যাংকের সাথে গোপনে হাত মিলিয়ে এ জাতীয় চক্রান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটি শিল্পের মালিকদের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। ব্যাংক শিল্পের সহায়ক, তাদের কাছে শিল্পের মালিকদের সাদা চেক, স্ট্যাম্প আমানত হিসেবে গচ্ছিত আছে। সত্যিকারের শিল্প বান্ধব ব্যাংক এবং শিল্পের মালিক একজন ব্যবসায়ীকে রাতারাতি পথে বসাতে পারে এটি তার ঘৃণিত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।
আইলচারা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুন্না আহমেদ বলেন, ভিআইপি রাইস মিল ও অটোফ্লাওয়ার মিল নিলামের কোন বিজ্ঞপ্তি কিংবা মাইকিং বা কোন নোটিশ আমরা এলাকাবাসী শুনিনি বা দেখিনি। নিলাম এর আগে ঢেকি পেটানো হয়। গাছে অথবা দেওয়ালে নিলাম নোটিশ টাঙানো হয়। কোন কিছুই মানা হয়নি এই ষড়যন্ত্রের নিলামের ক্ষেত্রে। এটি রাতারাতি একজন শিল্পপতিকে পথে বসানো এবং আরেকজন শিল্পপতির মাথায় তেল দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। ব্যাংক যেখানে সম্পদের ভ্যালুয়েশন করেছে ৯২কোটি টাকা, ঋণ দিয়েছে ৪২ কোটি টাকা, প্রায় দেড়শ কোটি টাকার সম্পদ কিভাবে মাত্র ১৫ কোটি টাকায় নিলাম হয়।ব্যাংক তার নিজের টাকাও ওয়াশিল করেনি। অবশ্যই এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র।



error: Content is protected !!