মোঃ শহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের মহেশপুরে আবারো সিজারের পর মরিয়াম খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহত গৃহবধূ উপজেলার নেপা ইউনিয়নের জিনজিরা গ্রামের সিকদার আলীর স্ত্রী। এছাড়া সে একই ইউনিয়নের খোশালপুর গ্রামের মকলেস তরফদারের মেয়ে। রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার নেপার মোড়ে মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের পর সোমবার সকালে মারা যান। এর আগে ৬ আগষ্ট একই বাজারের একতা ক্লিনীকে লাবনী নামের এক গৃহবধু সিজারের পর মারা যায়। মারা যাওয়া দু’জনকেই সোহেল রানা নামে স্থানীয় এক ডাক্তার অপারেশন করেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত মরিয়াম বেগমের পরিবারের ভাষ্য, গৃহবধূ মরিয়ামের প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে রোববার বিকালে উপজেলার নেপার মোড়ে মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর রাতে ডাক্তার মোঃ সোহেল রানা ও গ্রাম্য ডাক্তার শ্রী লক্ষণ অপারেশন করেন। এরপর সোমবার সকালে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে ক্লিনীক মালিক মৃত গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর নিয়ে যান। পথে যশোরের চুড়ামনকাঠী থেকে মারা গেছে বলে ফেরত নিয়ে আসেন।
মা ও শিশু প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক নাজমুল হুদা মনু সিজারের পর গৃহবধূ মরিয়াম মারা যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রোগীর কিডনীর সমস্যা ছিল। রাতে অপারেশনের পর সকালে সুস্থ্য ছিল। পরে সামান্য অসুস্থ্য হয়ে পড়লে যশোর নেওয়ার পর রাস্তা ভালো না হওয়া অতিরিক্ত ঝাকুনির ফলে মারা যেতে পারে।
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনজুমান আরা জানান, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংবাদ পেয়েছি। খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে যোগ করেন এই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তা।
তবে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, মরিয়াম সিজারের মারা গেছে এমন কোন সংবাদ আমি জানি না। তবে খোজ নিয়ে দেখা হবে, যদি ামেন হয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া গত ৬ আগষ্ট সিজারের পর মারা যাওয়া লাবনী ঘটনায় তদন্ত চলছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যব্থা।
এর আগে নিহত নিহত গৃহবধু নাঈম অভিযোগ করেন, ৬ আগষ্ট বৃহস্পতিবার ভোরে তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে নেপার মোড়ে অবস্থিত মোহন লাল ও তার ছেলে সোহেলের মালিকানাধীন একতা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এরপর কথিত চিকিৎসক ডাঃ সোহেল রানা লাবনীকে সিজার করেন। সিজারের পর পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে লাবনী। নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য লাবনীর মৃত লাশ জীবিত দেখিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এলাকাবাসি জানায় ক্লিনিকটির কোন লাইসেন্স নেই। নেই চিকিৎসার নুন্যতম কোন পরিবেশ। কোন প্রশিক্ষিত নার্সও নেই। হাসপাতালের মালিক মোহন লাল ওয়ার্ড বয়, মা আয়া ও ছেলে সোহেল ডাক্তার সেজে ক্লিনিকটি পরিচালনা করেন বলে স্থানীয়রা জানান।