ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে আবার শুরু হয়েছে গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী গাদি খেলা
মোঃ শহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় গত কয়েক দিন ধরে ঐতিহ্যবাহী এই গাদি খেলা আবার শুরু হয়েছে
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক,কবি ও পরিবেশবাদী আবদুল্লাহ মারুফের আয়োজনে উপজেলার রামনগর গ্রামে ২৩ আগস্ট রবিবার এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় দুটি গ্রামের খেলোয়ারদের মধ্যে।
রামনগর গ্রামের বড় বাগান মাঠে বিকাল ৪টায় প্রাচীন জনপ্রিয় এই খেলা দেখতে ভীড় করেন আশপাশের কয়েক গ্রামের কয়েকশ মানুষ। আবাল-বনিতা সব শ্রেণীর মানুষকেই দেখা যায় এই আসরে। এই খেলার সাথে এখন চল্লিশ বছর বয়সি থেকে শুরু করে প্রবীনদের সাথে রয়েছে অমীয় সম্পর্ক। এই খেলা করেনি ৪০ বছরের পুরুষদের মধ্যে এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। শুধু ছেলেরায় নয়। ডানপিঠে মেয়েরাও ছেলেদের সাথে এই খেলা করেছে কিশোর-যুবক বয়সে।
টেলিভিশন,স্মার্ট মোবাইল,ক্যাবল নেটওয়ার্ক আগ্রাসনের আগে গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদন বলতে জারি,সারি,ভাওয়াইয়া,কবি গান সহ বিভিন্ন খেলাধুলায় ছিল একমাত্র বিনোদন। তখন এলাকার গ্রামে গ্রামে নওজওয়ানদের শক্তি সামর্থের পরীক্ষা ও কেরামত দেখাতে আয়োজন হোত গাদি হাডুডু খেলার। শুধু দিনের বেলাতেই নয়। জোৎসনা রাতেও আয়োজন হোত এই খেলার।
গাদি বা গাদন খেলায় কয়েকটি দাগ কাটা ঘর থাকে। প্রথমে একটি ঘরের মধ্যে বন্ধি থাকে দলের সব খেলোয়ার। প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াররা তাদের পাহার দেয় ও প্রতিহত করে। পরিপক্ষের হাতে ছোয়া পড়লেই বসে যাবে সেই খেলোয়ার।দাগ কাটা ঘরের মধ্যে একটি থাকে লবন ঘর। বন্ধি ঘর থেকে নিরাপত্তা ফাকি দিয়ে কৌশলে বের হয়ে লবন ঘর ঘুরে শেষ ঘরে পৌছে আবার শুরুর ঘরে ফিরে আসলেই একটি গাদি বা গাদন হয়। এই ভাবেই খেলা চলতে থাকে।
২৩ আগস্ট রামনগর গ্রামে উপজেলার হরিশপুর ও ধুলিয়া গ্রামের দুটি দলের মধ্যে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার আয়োজক আবদুল্লা মারুফ বলেন, কিশোর বয়সে এই খেলা করে অনেক সময় কাটিয়েছি। আনন্দ পেয়েছি। এখন আর এই খেলার আয়োজন চোখেই পড়ে না। গত ১৮ আগস্ট তারিখে কিশোর বয়সের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খেলাটি আবার খেলার আগ্রহ জন্মে। নিজ গ্রামেই আয়োজন করলাম খেলার। আমি নিজেও খেলা করে চরম উপভোগ করলাম।
এই প্রীতি খেলায় রেফারির দায়িত্ব পালন করেন রামনগর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সের আকবর আলী শাহ। তিনি যুবক বয়সে রামনগর গ্রামের গাদি খেলার একজন উল্ল্যেখযোগ্য খেলোয়ার ছিলেন। আজও আনন্দ হাতড়িয়ে বেড়ান সেই বয়সের।
আমাদের কিশোর বয়সে ফুটবল অনেক দুষ্প্রাপ্য ছিল। ব্লাটারের বল ছিল। হাওয়া দিয়ে সূতা দিতে বেধে রাখতে হোত। কিন্তু গাদি খেলা ছিল নিখরচা একটি খেলা। আমরা পাড়ায় পাড়ায়,গ্রামে গ্রামে গাদি-হাডুডু খেলা করেছি। তখন যুবকদের মধ্যে এই খেলা করে শক্তি সামর্থের পরীক্ষা হোত। এই খেলা নিয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি।
এখনকার সময়ে ১৪ বছর বয়সের থেকে শুরু করে ছেলে মেয়েদের হাতে স্মার্টফোন। তারা বিভিন্ন গেমিং ওয়েবসাইট,মোবাইল অ্যাপস,ফেসবুক,ইউটিউব,টিকটকে সময় কাটায়। ক্রিকেট ফুটবল খেলা সব জায়গাতে চললেও হারিয়ে যেতে বসেছে গাদি খেলা।