টাঙ্গাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম ও দূনীতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ পানি বন্দি ও গৃহহীন।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর দীর্ঘ দিনের অনিয়ন আর দূনীতির স্বীকার হচ্ছেন পানি বন্দি লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সহ্রাধিক গবাদী পশু আশ্রয়হীন। সহ্রাধিক একর ফসলি জমি ও ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে ছোট-বড় নদী সংলগ্ন বিভিন্ন বাঁধ ও রাস্তা। হুমকীর মূখে রয়েছে সদর উপজেলা সহ বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকা।
এসব ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা জলে যাবে। সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে শুধুমাত্র টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর অসাধু কিছু দূনীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অনেকে ইতিমধ্যে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও জানান কিছু কর্মচারীরা।
সরকারের হাজার কোটি টাকা নষ্ট ও পানি বন্দি গ্রহহীন হওয়া পরিবারের দাবী দ্রুত টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের মন্ত্রী সহ উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন টাঙ্গাইলবাসী।
প্রয়োজনে তারা এসব দূনীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবে বলেও জানান। সাম্প্রতি তাদের গাফিলতির কারণে টাঙ্গাইলের এলেনজানি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে সদরসহ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি এবং আবাসন সংকটে গবাদী পশু।
বুধবার (২৯ জুলাই) ভোর রাতে সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নওগা এলাকায় এ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার অবহিত করলেও প্রয়োজনীয় কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এরপূর্বে জেলা ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর, নাগরপুর ও সদরের একাধিক বাঁধ ও বাঁধ সংলগ্ন রাস্তা ভেঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। আবার কোথাও বাঁধ দেয়ার জন্য সরকারি টেন্ডার ও অর্থ থাকলেও সেগুলো শুধু নামের রয়েছে। এর কোন কাজ হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে চলে গেছে। যে কারণে এবার বন্যায় টাঙ্গাইল সদর শহর সহ উপজেলার প্রতিটি পৌরসভার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বার বার বিভিন্ন ভাবে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোডের্ দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও তারা নিজেদের পকেট ভাড়ি করে ঘুমিয়ে ছিলেন। আর এখন বলছেন শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ কবিরুজ্জামান ডল জানান, বন্যার শুরু থেকেই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার অবগত করলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
গত কয়েকদিন যাবত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু বস্তা ফেললেও তা পানির স্রোতে ভেসে যায়। পরে বুধবার ভোরে বাঁধ ভেঙ্গে ওই এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ও বল্লা ইউনিয়ন এবং বাসাইল উপজেলার ফুলকি ও কাশিল ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। ঘারিন্দা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আ. বারেক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে প্রায় দু’শ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আস্তে আস্তে ভাঙ্গার পরিধিও বাড়ছে। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আনছারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময় মতো কাজ করলে বাঁধটি রক্ষা করা যেতো। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। ভাঙ্গা বাঁধের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, বাঁধটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। ওই বাঁধে গত চার পাঁচদিন যাবত কাজ চলমান ছিলো। গত রাতেও ১১ টা পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে। পরে রাত তিনটায় বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।