দায়সারাভাবে চলছে সরকারি ওয়েবসাইট ‘তথ্য নেই’ নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়নে! বিড়ম্বনা! নিয়মিত অফিস করেন না সহকারী প্রোগ্রামার!

প্রকাশিত: ১১:০৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২২
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প নিয়ে একের পর এক ডিজিটাল কার্যক্রম শুরু করেছে বর্তমান সরকার। ইন্টারনেট সুবিধা গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়েও ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমে অন্যতম একটি হলো ‘তথ্য বাতায়ন’। তথ্য জানার অধিকার সবার। কিন্তু যেখানে চলছে দায়সারাভাবে তথ্যসেবা!
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার তথ্য বাতায়নে এই উপজেলার পরিচিতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভৌগোলিক ও অর্থনীতিসহ অনেক অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে। কিন্তু বেশীরভাগ তথ্যেরই অভাব রয়েছে এই পোর্টালটিতে। জাতীয় তথ্য বাতায়নের নবীগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি দফতর-অধিদফতরের তথ্য আপডেট হচ্ছে না দীর্ঘ দিন ধরে। ফলে ডিজিটাল সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলার জনসাধারণ।
 উপজেলা তথ্য বাতায়ন যে দায়সারাভাবে চলছে তা এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলেই বোঝা যায়। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর ওয়েবসাইটটি শেষ হালনাগাদ করা হলেও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য মিলছে না এতে, এছাড়া ভূল তথ্যেরও হিসেব নেই ওয়েবসাইটটিতে। দায়সারাভাবে সরকারি এই ওয়েবসাইটটি পরিচালিত হওয়ায় তথ্য বিভ্রাটে পরিণত হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়ন।
অভিযোগ রয়েছে- জাতীয় তথ্য বাতায়নে নবীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ তথ্যই মিলছে না। দায়সারাভাবে চলছে ওয়েবসাইটটির হালনাগাদ কার্যক্রম, নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগও রয়েছে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার কাজী মঈনুল ইসলামের বিরদ্ধে। এছাড়া তিনি মাঝে মধ্যে অফিসে আসেন ১১ থেকে ১২টার পর শুধু আসা যাওয়াই যেন উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারের দায়িত্ব।
তথ্যের মধ্যে মিলছে কেবল সরকারি বিভিন্ন দফতরের সেবাসমূহের। বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাগণের পরিচিতিও মিলছে না এতে। ৩/৪ বছর আগের চলে যাওয়া কর্মকর্তার নাম/ছবি/নম্বর এখনো দেখাচ্ছে সেখানে। তথ্য বাতায়নে নবীগঞ্জের এই হাল সচেতন মহলে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন- সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর অক্ষদতার জন্যই জাতীয় তথ্য বাতায়নের মতো সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ কেবল নাম পরিচয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তথ্য বাতায়ন ঘেটে নবীগঞ্জের প্রয়োজনীয় তথ্য না পেয়ে অনেকেই শূন্য তথ্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়নটি ঘুরে দেখা যায়- হোম পেইজে আমাদের সর্ম্পকে একটি ক্যাটাগরি রয়েছে এতে কর্মকর্তাগণ নামের একটি অপশন আছে। এতে ক্লিক করলে দেখা যায় শুধু বর্তমান ইউএনও ইমরান শাহরীয়ারের নাম ও প্রোফাইল দেখাচ্ছে। আর কোন কর্মকর্তার নাম/তথ্য কিছুই নেই।
উপজেলা পরিষদ ক্যাটাগরিতে চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেকদের তথ্য এবং কর্মকর্তাবৃন্দের তথ্যের মিল থাকলেও উপজেলা পরিষদের কার্যাবলি ও সাংগঠনিক কাঠামোর কোন তথ্য নেই এতে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা সম্পর্কিত তথ্য থাকলেও সহকারী কমিশনার পদে কত কর্মকর্তার যোগদান হলো, বদলি হলো। কিন্তু দূঃখজনক হলেও এতে নেই কোন কর্মকর্তারই তথ্য। বর্তমান কিংবা সাবেক কোন সহকারী কমিশনারের নাম/মোবাইল নম্বর কিছুই নেই। এসব দেখারও যেন কেউই নেই।
পত্র-পত্রিকায় তালিকায় রয়েছে ৭টি পত্রিকার নাম। এগুলোর মধ্যে ৬টি পত্রিকাই নবীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয়না। ১টি দীর্ঘদীন ধরে বন্ধ থাকলেও যেটি নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে সেটিরও নাম নেই। ওই বিষয়গুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন উপজেলার সচেতন মহল।
ডাক্তারের তালিকায় দেখা যায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার লেখা আছে ডাঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম‘র নাম। কিন্তু তিনি বদলি হয়েছেন আরো প্রায় ৫ বছর আগেই। উনার পর আরো তিনজন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন তৎকালীন আরএম বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ কিন্তু দেখা যায় তথ্য বাতায়নে ডাঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম‘র নামই রয়েছে। এছাড়া একাধিক ডাক্তারগণ বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলেন কিন্তু তালিকায় পুরাতনদের নাম বিদ্যামান রয়েছে।
সরকারী অফিস সমূহের অপশনে গিয়ে থানার প্রোফাইলে কেবল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ডালিম আহমদের প্রোপ্রাইল এবং কর্মচারীবৃন্দের তালিকায় কেবল রাজু আহমদ নামে এক কনস্টেবলের তথ্য দেখা যায়। এছাড়া থানার আর কোন অফিসার/কর্মচারীর তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও থানার তথ্য প্রদানকারী কোন কর্মকর্তার তথ্যও পাওয়া যায়নি এতে।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের সেবাসমূহ এবং মাত্র ২/৩ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস প্রোফাইলেরও একই দশা। উপজেলা রির্সোস সেন্টার অপশনে ইন্সট্রাক্টর পদে মোহাম্মদ জাকির হোসেন নামে এক কর্মকর্তার প্রোফাইল থাকলেও এতে কি কি সেবা পাওয়া যায়, বা কীভাবে কি সেবা পাওয়া যায়, কীভাবে এতে যোগাযোগ করতে হবে কিছুই দেয়া নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্যাটাগরিতে কেবল কর্মকর্তাবৃন্দের প্রোফাইল থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় সকল তথ্য। উপজেলা খাদ্য অফিসের ক্যাটাগরি থাকলেও প্রয়োজনীয় বেশীরভাগ তথ্যই নেই এতে।  নামমাত্র ’উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স ফর এডুকেশন’ অপশনটি থাকলেও কোন তথ্যই নেই এতে। এছাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, নবীগঞ্জ হাসপাতাল, প্রাণীসম্পদ র্কাযালয়সহ অনেক অফিসেরই পরিপূর্ণ তথ্য নেই এই পোর্টালে।
এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের অপশনে মাত্র বর্তমান/সাবেক ৩৩ জন জন প্রতিনিধির তথ্য পাওয়া যায়। অথচ উপজেলায় রয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক জনপ্রতিনিধি।
এছাড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদসমূহ অপশনটি ভিজিট করে ২নং বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়ন পরিষদের মাত্র ৪ জন জনপ্রতিনিধির তথ্য, ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ মাত্র ৪ জন জনপ্রতিনিধির তথ্য এভাবে দায়সারাভাবে চলছে সরকারি ওয়েবসাইট
‘তথ্য নেই’ নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য
বাতায়নে, সচেতন নাগরিকদের মধ্যে  বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে !
এ বিষয়ে সহকারী প্রোগ্রামার কাজী মঈনুল ইসলামের সাথে   যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি৷



error: Content is protected !!