দিনাজপুরে কোভিড-১৯ বিস্তাররোধে সিভিল সার্জন ডা.আব্দুল কুদ্দুছের গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ

প্রকাশিত: ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুন ৫, ২০২০

দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ

দিনাজপুর জেলায় করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তাররোধে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ’র গৃহিত পদক্ষেপ সময় উপযোগি ও প্রশংসনীয়। করোনা মোকাবেলায় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনের কথা ভুলে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দিনরাত জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের পাশে ছুটে চলেছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসসেবাসহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।

৮ মার্চ ২০২০ প্রথম দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়। আর ১৪ এপ্রিল প্রথম দিনাজপুর জেলায় ৭ জন করোনায় আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়। এর পর থেকেই দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ তাঁর সহযোদ্ধা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আজগর কামাল সিদ্দিকী ও সিভিল অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ মো. এজাজ-উল হককে সাথে নিয়ে জেলায় করোনার বিস্তাররোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের ও পরিবার-পরিজনের কথা ভূলে দৃঢ় মনোবলে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবহিতকরণ, সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, হোম কোয়ারেন্টাইন, হোম আইসোলেশন নিশ্চিতকরণ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগিদের তদারকি, তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি জেলার ১৩টি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা, করোনা সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান ও জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ক সভায় যথা সময়ে যোগদান করছেন তিনি।

সারা দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্থে ছুটাছুটির পর রাতে তাঁর অফিসে ফিরে অনলাইনের মাধ্যম জেলার করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ ও সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে অবহিত করছেন সিভিল সার্জন। তাঁর এই সময় উপযোগি উদ্যোগের জন্য জেলার অনেক সচেতন মানুষ তাঁর ফেসবুকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, দেশে করোনাভাইরাস দেখা দেয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত সকল নির্দেশনা অনুযায়ী দিনাজপুর জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, মাঠপর্যায়ের সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে নিয়ে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হলেও দিনাজপুর জেলায় গত ১৪ এপ্রিল প্রথম ৭ জন করোনায় আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়। বর্তমানে জেলার ১৩টি উপজেলায় (৪ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত) ২৬৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগি শনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১৯৩ পুরুষ, ৬২ নারী ও শিশু ১৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৬১ জন। করোনায় শনাক্তকৃত রোগিদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল অনুযায়ী হোম আইসোলেশনে, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে প্রেরণ করা হয়েছে ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসব রোগিদের নিয়মিত শারিরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে বর্তমানে তারা সবাই ভাল আছেন।

তিনি জানান, ৪ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত দিনাজপুর জেলায় হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৬৫ জন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ২৮ জন, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১২ জন ও মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। এ পর্যন্ত ৯৮০৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ করা হয়েছে ও হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৫৩৬ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২২৭৩ জন। আর এ পর্যন্ত ৩৯৭১টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইইডিসিআর ল্যাবে, রংপুর মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ও দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৮৫টি নমুনার ফলাফল এসেছে। যার মধ্যে ২৬৮টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ এসেছে।

সিভিল সার্জন জানান, দিনাজপুরে করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তার মধ্যে করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটি গঠন, আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ, জেলার দু’টি স্থল বন্দরে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থাগ্রহণ, করোনায় আক্রান্ত রোগিদের নমুনা সংগ্রহ, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ উল্লেখযোগ্য।

তিনি জানান, দিনাজপুরে করোনার (কোভিড-১৯) চিকিৎসার জন্য জেলায় ৪টি ডেডিকেটেড হাসপাতালে ও ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন শয্যাসহ মোট ১৬০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ফ্লু কর্ণার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইসহ ৩টি আইসিইউ, ১০টি আইসোলেশন শয্যাসহ মোট ৫০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া কাহারোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫টি শয্যা, বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫টি শয্যা ও পার্বতীপুর প্রাইভেট ল্যাম্ব হাসপাতালে ১০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোগি বাড়লে আরো ২০০টি শয্যা চালু করা সম্ভব হবে। আর উপজেলা হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, করোনায় (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগিদের বহনের জন্য দুইটি এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের আবাসন, খাদ্যসহ যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।




error: Content is protected !!