নন্দীগ্রামে আমন ধান রক্ষায় ব্যস্ত কৃষকেরা

প্রকাশিত: ৫:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০২০

নাজমুল হুদা, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার নন্দীগ্রামে আমন ধান রক্ষায় ব্যস্ত কৃষকেরা। আর ১৫-২০ দিন পর হতে আমন ধান পুরোদমে কাটামাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। এখন আমন ধানের থোড়, ফুল, দুধ ও দানা গঠন পর্যায়ে রয়েছে। ঠিক এমন সময়েই ফসলী জমিতে মাজরাপোকা ও কারেন্টপোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। উপজেলার অনেক মাঠে  মাজরাপোকা ও কারেন্টপোকার আক্রমণ হয়েছে। তাই কৃষকেরা ভালোভাবে আমন ধান ঘরে তুলতে ফসলী জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছে। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এ দেশ। এ দেশের কৃষকের সোনালী স্বপ্ন হচ্ছে ধান। ধানের রঙ সোনালী তাই ধানকে সোনালী ফসল বলা হয়ে থাকে। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলাকে শস্যভান্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ উপজেলার ফসলী জমিতে অনেক উর্বরশক্তি রয়েছে। সে কারণে বছরে ৩ বার ভালোভাবে ধানের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি রবিশস্যরও চাষাবাদ করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ হাজার ৯৬২ মেট্রিকটণ ধান। এ উপজেলায় ব্রিধান-৪৯, ব্রিধান-৩৪ ও কাটারিভোগসহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ফসলী জমির চিত্র অনেক ভালো দেখা গেলেও ফসলী জমিতে মাজরাপোকার আক্রমণ হয়। কৃষকের আতঙ্কই হচ্ছে মাজরাপোকা ও কারেন্টপোকা। মাজরাপোকা ও কারেন্টপোকার কবল থেকে ফসলী জমি রক্ষা করতে কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত কৃষকেরা। উপজেলার ঢাকইর গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন আমি ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি। কিছুদিন আগে আমার ফসলী জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ হয়েছিলো। পরে কীটনাশক স্প্রে করেছি। করেন্টপোকার আক্রমণ হতে পারে তাই আগাম কীটনাশক স্প্রে করছি। পার্চিং পদ্ধতি তেমন উপকারে আসছে না। হাটলাল গ্রামের কৃষক আফছার আলী বলেন, আমি ২০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি। কিছুদিন আগে ফসলী জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক স্প্রে করে তা দমন করি। আমাদের মাঠে পার্চিং পদ্ধতি তেমন নেই বললে চলে। আর পার্চিং পদ্ধতি মাজরাপোকা দমনে তেমন উপকারে আসে না। এজন্য কীটনাশক স্প্রে করে মাজরাপোকা দমন করতে হচেছ। একই গ্রামের কৃষক হাতেম আলী বলেন, আমি ৪০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি। এখন ফসলী জমির চিত্র অনেক ভালো রয়েছে। মাজরাপোকার কবল থেকে ফসলী জমি রক্ষা পেয়েছে। দলগাছা গ্রামের কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, আমি ৩৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করেছি। কয়েকদিন আগে ফসলী জমিতে মাজরাপোকা আক্রমণ হয়েছিলো। পরে কীটনাশক স্প্রে করায় মাজরাপোকা দমন হয়েছে। এখন ফসলী জমি বেশ ভালো রয়েছে। আর কোনো বালামুসিবত না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এদিকে ফসলী জমির যথারীতিভাবে যত্ন নিতে ব্যস্ত রয়েছে কৃষকেরা। মাজরাপোকা, ছত্রাক ও বালাইদমনে পূর্বপ্রস্ততি রেখেছে কৃষকেরা। যাতে ভালোভাবে ফসল ঘরে তোলা যায়। ফসল উৎপাদনের কারিগর হিসেবে খ্যাত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু বলেন, আমন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কাজ করে আসছি। কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এবারো আমন ধানের ফসলী জমির চিত্র অনেক ভালো রয়েছে। ফসলী জমিতে মাজরাপোকার আক্রমণ তেমন নেই। মাজরাপোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশাকরি এবারো আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। আমন ধানের বাম্পার ফলন হলে কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এ উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত ধান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে আরো বেশি খুশি হয়। কৃষকের সাথে বেশিরভাগ সময় সম্পৃক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ। এমন একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, কৃষকের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা কৃষকের ধানক্ষেত দেখে আসছি। ধানক্ষেত দেখে যথারীতিভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাতে ভালোভাবে ফসল ঘরে তোলা যায়। এখন আমরা মাঠে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছি। ১৫-২০ দিন পর আমন ধান কাটামাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। তখন কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। আশাকরি কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে।




error: Content is protected !!