নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে ইজিবাইক ছিনতাই মামলায় মূলহোতাসহ ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। সেই সাথে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি উদ্ধার হয়েছে। ওই মামলার বাদী নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কাথম গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে সেলিম রেজা (২২)। জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি ভোর অনুমানিক ৫টা ৪০মিনিটে তার ৩ চাকা বিশিষ্ট ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক নিয়ে বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক দিয়ে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসার পথে কাথম বেড়াগাড়ি এলাকায় বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-স্টেশনের সামনে পৌঁছিলে বগুড়ার দিক হতে আসা একটি প্রাইভেট কার তার পথরোধ করে অজ্ঞাতনামা ৩জন সামনে আসে এবং ১জন প্রাইভেট কারের ড্রাইভিং ছিটে বসে থাকে। সেসময় তারা সেলিম রেজাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক ইজিবাইকের চাবি নিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে হতে ১জন ইজিবাইক চালিয়ে বগুড়ার দিকে চলে যায় এবং অজ্ঞাতনামা ২জন তাকে জোরপূর্বক প্রাইভেট কারে উঠায়। এরপর তার নিকট থেকে মোবাইল ফোনসহ নগদ ৫০০ টাকা জোরপূর্বক বের করে নেয়। এক পর্যায়ে তারা দড়ি দিয়ে সেলিম রেজার ২ হাত, রুমাল দিয়ে মুখসহ ২ চোখ বেঁধে ফেলে।
পরবর্তীতে তারা সেলিম রেজাকে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে বিভিন্ন অজ্ঞাতস্থানে ঘুরাঘুরি করার পর ১৩ জানুয়ারি সকাল অনুমানিক ৬টা ২০মিনিটে নন্দীগ্রাম উপজেলাধীন কুন্দারহাট-রুপিহারের মাঝামাঝি স্থানে মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বের খালের পাড়ে ফেলে রেখে চলে যায়। এ ঘটনায় সেলিম রেজা বাদী হয়ে নন্দীগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১৩, তারিখ ২৩-০১-২০২৪ ইং। ধারা ৩৯২ পেনাল কোড। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেহেদী হাসান মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর দিকনির্দেশনায় নন্দীগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ওমর আলীর তত্ত্বাবধানে এবং থানার অফিসার ইনচার্জ আজমগীর হোসাইনের নেতৃত্বে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জামিরুল ইসলামের সার্বিক সহযোগিতায় থানার এসআই জিয়াউর রহমান, নাজমুল হক ও বিকাশ চক্রবর্তী সঙ্গীয় ফোর্সসহ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিরতিহীনভাবে অভিযান পরিচালনা করে ৪ এপ্রিল ভোর পর্যন্ত বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, কাহালু, শিবগঞ্জ উপজেলা, জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত আসামি
বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার ভেলুরপাড়া গ্রামের আজাদুল হকের ছেলে শাওন মিয়া (২৭), বগুড়া সদর উপজেলার পুরান বগুড়া গ্রামের মৃত পরেশ চন্দ্রের ছেলে পলাশ চন্দ্র ঘোষ (৪২), কাহালু উপজেলার কৈগাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে জুয়েল মোল্লা (৩৫), গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার বোয়ালী গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে আশরাফ আলী (৪০) ও দক্ষিণ কাঠুর গ্রামের জতিশ চন্দ্রের ছেলে অশোক কুমার রায় (২৬) কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। সেই সাথে তাদের হেফাজত হতে ছিনতাইকৃত ৩ চাকা বিশিষ্ট ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকটি উদ্ধার করেন। আসামিদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। আসামিরা মহাসড়কের ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীবিহীন ইজিবাইক বা অটোভ্যান পাওয়া মাত্রই পথরোধ করে চালককে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে হাত, পা, মুখ বেঁধে ফেলে ইজিবাইক বা অটোভ্যান তাদের পরিকল্পিত স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত ইজিবাইক বা অটোভ্যানের চালককে প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে। ইজিবাইক বা অটোভ্যান পরিকল্পিত স্থানে পৌঁছানোর পর রাস্তার পাশে নির্জন স্থানে ইজিবাইক বা অটোভ্যান চালককে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে আসামিরা সুবিধামতো তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইজিবাইক বা অটোভ্যান বিক্রি করে থাকে।
শুক্রবার থানা পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করেছে। আর পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শুক্রবার বিকেলে থানার অফিসার ইনচার্জ আজমগীর হোসাইন প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলাকে অপরাধমুক্ত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।