নবীগঞ্জের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যাক্তির হাত পা বাঁধা লাশ মৌলভীবাজার খঞ্জনপুর এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে, গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২২

বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ- টাকা লেনদেনের বিষয় নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার খলিলপুর ইউনিয়নের খঞ্জনপুর এলাকায় যান সেখান সে আর বাড়িতে আসেনি। সেখানের একটি সড়কের পাশে ১টি বাক্সের ভিতরে হাত-পা বাঁধা অজ্ঞাতনামা (৫৫) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এতে পুলিশ ক্লু-লেস ঐ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করে জড়িত ৩ আসামীকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ৩জনের মধ্যে ১ আসামী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই রাত অনুমান ২টা ৩০ মিনিটের সময় খঞ্জনপুর নামক এলাকার সড়কের পাশে একটি কাগজের বাক্সের ভিতর হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখমন্ডল সাদা পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা (৫৫) এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীরা। এতে খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী মৌলভীবাজার থানা পুলিশকে এই মর্মে খবর দেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ মৃত ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ সহ যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে লাশটি প্রেরণ করেন। ময়না তদন্ত শেষে লাশের কোন ওয়ারিশ বা উপস্থিত লোকজন কেউই এই লাশটি সনাক্ত করতে না পারায় লাশের দাফনের নিমিত্তে মৌলভীবাজার পৌরসভা বরাবর প্রেরণ করলে মৌলভীবাজারস্থ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের অজ্ঞাতনামা লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগন পরষ্পর যোগসাজসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে খুন করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বর্ণিত ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায় মর্মে পুলিশের এসআই ইফতেখার ইসলাম মৌলভীবাজার সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করলে তার প্রেক্ষিতে অফিসার ইনচার্জ মৌলভীবার সদর মডেল থানা একটি হত্যা মামলা রুজু করে মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মোঃ মশিউর রহমানের উপর অর্পন করেন। এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার নিদের্শনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সুদর্শন কুমার রায় ও সদর সার্কেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান মৌলভীবাজারের প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে ও তদারকিতে অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়াছিনুল হকের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ তদন্ত টীম ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত ক্লু-লেস লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছেন। তদন্তকালে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ মশিউর রহমান অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য বেতার বার্তা সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। সে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দত্তগ্রাম এলাকার মৃত আয়না মিয়ার পুত্র আইয়ুব আলী (৫৫)। পরবর্তীতে ভিকটিম আইয়ুব আলীর আত্মিয়-স্বজন এবং দত্তগ্রামের অন্যান্য লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উল্লিখিত হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জনৈক মনসুর রহমান, অনুপ দাস সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পুলিশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নবীগঞ্জের দত্তগ্রাম গ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের পুত্র মনসুর রহমান (৩০) ও ওহি ভোষন দাসকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষে গ্রেফতারকৃত সন্দিগ্ধ আসামীদ্বয়কে নিবিড় ভাবে নানান কৌশল অবলম্বন করে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামীরা জানায় যে, ভিকটিম আইয়ুব আলীর সাথে টাকা পয়সার লেনদেন সহ পুর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে ঐ হত্যাকান্ডটি গত ৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মনসুর, অনুপ দাস ও পলাতক আসামী ইকবাল হোসেন মিলে সংঘঠিত করেছে। পরে ৭ জুলাই গ্রেফতারকৃত আসামী মনসুর রহমান (৩০) এবং অনুপ দাস (৪০) দ্বয়কে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করলে আসামী মনসুর রহমান নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্যমতে পরবর্তীতে পুলিশ একইদিনের ব্যবধানে অপর পলাতক আসামী নবীগঞ্জ উপজেলার দত্তগ্রামের ছানু মিয়ার পুত্র মামুদ ইকবালকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করলে সে এই লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনার দায় স্বীকার করেন। এ হত্যান্ডের ঘটনার খবর পেয়ে আয়ুব আলীর স্ত্রী- সন্তানদের কান্না ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে নানান আতংক বিরাজ করছে। এ হত্যার কান্ডের মূল্য রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের প্রতি সু-দৃষ্টি দেয়ার জন্য সুশিল সমাজের লোকজন দাবী করছেন। অপরদিকে, এ মর্মাতিক হত্যার ঘটনায় আয়ুইব আলীর পরিবারের কোন লোকজন তেমন কোন কিছুই ভাবছেন না! তারা বলছেন, যার যেখানে যেভাবে মরন লিখা সেখানেই হবে! তবে, গোপন একটি সূত্রে জানা গেছে, আয়ুইব আলী জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন স্থানের লোকজনের কাছে সুদের টাকার লেনদেন করতেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান। এদিকে, পুলিশ জানায়, এই রুজুকৃত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকৃত আসামীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার লক্ষে আমরা কাজ করছি।




error: Content is protected !!