নবীগঞ্জে ৬০ হাজার টাকায় দালান ঘর।।সংস্থার নাম জানেনা কেউ।জিল্লুরগংরা অগ্রিম নিচ্ছে কোটি টাকা!প্রশাসন নীরব
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)থেকে নিজস্ব সংবাদদাতাঃ
নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ৬০/৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালান ঘর!প্রতিটি ঘর সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে।ঘর প্রাপ্ত ব্যক্তিদের কোন কোন ঘরের জন্য জিল্লুর মেম্বারকে ১ লক্ষ টাকার বেশী দিতে হয়। নির্মিত দালান ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার জিল্লুর রহমান। এনিয়ে বেশ আলোচনায় আছেন তিনি। মাত্র ৬০/৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ঘর দেওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।স্থানীয় জনগণের মধ্যে ঘর নির্মাণে আলোচনায় একটি কথা,বর্তমান যুগের হাতেম তাইয়ের দেখা পেলেন কি ইউপি সদস্য জিল্লুর?
৩ লাখ টাকা ব্যয়ের ঘর মাত্র ৬০/৭০ হাজার টাকায় দিচ্ছেন তিনি। এমন খবর নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে এই ঘর গুলো কোথা থেকে আসছে জানেন না এলাকাবাসী।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনমজুর থেকে শুরু করে কোটিপতিরাও ৬০/৭০ হাজার টাকা মেম্বারকে দিয়ে দালান ঘর নিয়েছেন। এক বাথরুম,এক পাকঘর ও দুই কক্ষ বিশিষ্ট মেম্বারের দেওয়া এই ঘর গুলো পেতে প্রথমে বাড়ির দলিল এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন জরুরি কাজগ পত্র মেম্বার জিল্লুরকে দিতে হয়। এ ঘটনায় উপজেলাব্যাপী জনগনের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন একজন ইউপি সদস্য এত গুলো ঘর কোথা থেকে পেলেন? মাত্র ৬০/৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে কেনই বা এসব ঘর নির্মাণে উদ্যোগ নিলেন? ঘর নিতে গিয়ে অনেক লোক অধিক সুদে টাকা এনে মেম্বারের কাছে দিয়েছেন। কেউ ঘর পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না। ঘর গুলো সরকার থেকে আসছে কি না প্রশ্ন উঠছে জনমনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কিছু ঘর সম্পন্ন হলেও অধিকাংশ ঘরই অসম্পন্ন রয়েছে। নির্মাণাধিন ঘরের কাজ কিছুদিন হয় আবার বন্ধ থাকে। এভাবেই চলছে। ৬০/৭০ হাজার হতে লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে দালান ঘর নেওয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাক্তিরা জানান, আমাদের ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে ৬০/৭০ হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে ঘর পাচ্ছি। যদি বারান্দা বা রুম বড় করতে হয় তাহলে হাত প্রতি অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। এতে করে টাকার অংকটাও বাড়ে।
স্বল্প মূল্যে ঘর পেয়েছেন ভাল কথা তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, মেম্বার যদি জানতে পারেন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছি তাহলে আমাদের ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যাবে। অর্থে ঘর পেয়েছি এখনো সম্পন্ন হয়নি ঘরের কাজ। মেম্বার বলেছেন ঘরের ব্যাপারে কারো সাথে কথা না বলতে। এভাবেই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ওই ইউনিয়নের দালান ঘর প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা। এমন আরেকজন বলেন, সব কয়টি গরু বিক্রি করে মেম্বার জিল্লুর’কে আমার বাবা ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই অর্থের বিনিময়ে ঘরটি পেয়েছি । মেম্বার বলেছিলেন কারো সাথে এবিষয়ে কথা না বলতে। আপনার কাছে বলছি কোনো সমস্যা হবে না তো? আমরা গরিব মানুষ ঘরের কাজ এখনো অনেক বাকি।উপকারভোগী অন্য একজন বলেন, মেম্বারের কাছে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরী টিনসেট দালান ঘর পেয়েছি। তবে মেম্বার বলেছেন কাউকে এব্যাপারে না জানাতে। টাকার বিনিময়ে ঘর নির্মাণ বিষয়ে গত নভেম্বর মাসে নবীগঞ্জ উপজেলা মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সভায় ২ নং বড় ভাকৈর ( পূর্ব) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক মিয়া স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজীর উপস্থিতে টাকার বিনিময়ে ঘর নির্মাণের বিষয়টি সরকারী বরাদ্দকৃত কিনা বক্তব্য উত্থানন করলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন জানান, এটা সরকারী বরাদ্দ না। সংসদ সদস্যও জানান এ ব্যাপারে আমার ও কিছু জানা নেই। বিষয়টি প্রতারনা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আশিক মিয়া সভায় আহবান জানান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বস্থ করা হয়।
ঘর নির্মাণে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা ইউপি চেয়ারম্যান আশিক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩ মাস অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।সচেতন মহল বলছেন,মেম্বার জিল্লুর রহমান অদৃশ্য যে সংস্থার মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন, সে সংস্থার নাম,কারা সংস্থার সাথে জড়িত জিল্লুর মেম্বার ছাড়া কেউই জানেনা।
সচেতন মহল আরো মনে করেন,
১০০ টি ঘরের জন্য জিল্লুর মেম্বারগংরা যদি বাজেট করেন এক কোটি টাকা। তারা এক হাজার ঘর নির্মাণ করে দিবে বলে অগ্রিম ৭০/৮০ হাজার টাকা নিলে এক হাজার ঘরের জন্য ৭/৮ কোটি টাকা তাদের পকেটে চলে যাবে। সংস্থারটির মালিক,নাম ও ঠিকানা জিল্লুর মেম্বার ছাড়া কেউই জানেনা। তারা যে কোন সময় প্রতারনার মাধ্যমে অগ্রিম কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে যেথে পারে।
আর মেম্বার জিলুও প্রমাণ রেখে টাকা নিচ্ছেননা। এটা নিচক একটি প্রতারনা। এ থেকে মামুষকে সচেতন হতে হবে।
টাকার বিনিময়ে কোন সংস্থা বা ব্যক্তির মাধ্যমে ঘর দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ইউপি মেম্বার জিল্লুর রহমান বলেন,আমি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। সংস্থার নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করেন।
ইনাতগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ বলেন, সরকার থেকে আমার এলাকায় এরকম কোনো ঘর আসেনি। তবে আমি শুনেছি কোনো একটি সংস্থা ঘর গুলো দিচ্ছে। সংস্থার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন জিল্লুর মেম্বার সংস্থার নাম আমাকে বলেনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটর সভায় উঠেছে। এই ঘর সরকারী বরাদ্দকৃত নয়। জেনেছি কোন সংস্থার মাধ্যমে ঘরগুলো দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে৷ নবীগঞ্জ – বাহুবল আসনের সংসদ সদস্য শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই নেই৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷