উমার রাযী, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি-
নিকাব না খোলায় শিক্ষিকাকে হেনস্থা করলেন প্রধান শিক্ষক। অনলাইন ক্লাস নেয়ার সময় উক্ত ঘটনা ঘটান কক্সবাজার উখিয়ার পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজেকে ‘নাস্তিক’ দাবিকারি এই প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক।
হেনস্থার শিকার শিক্ষিকা কামরুন নেছা’র দাবি, তিনি ধর্মীয় বিধান মতে নিয়মিত নিকাব পড়েন। বছরের পর বছর ধরে নিকাব পরেই স্কুলে ক্লাস করে আসছিলেন। মঙ্গলবারও তেমন ভাবেই অনলাইন লাইভ ক্লাসে আসেন। কিন্তু ক্লাস শেষে প্রধান শিক্ষক তাকে রুমে ডেকে নিয়ে নিকাব না খোলায় সহকর্মী ও অন্য লোকজনের সামনে তিরস্কার ও হেনস্থা করেন। একই সময়ে লাইভ করা ক্লাসটি স্কুলের ফেসবুক পেইজ থেকে মুছে দেন।
শিক্ষিকা কামরুন নেছা’র স্বামী মোহাম্মদ ইসলাম জানান, কামরুন নেছা ওই স্কুলে জয়েন করার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক তার বিরুদ্ধে লেগে আছেন। এমনকি স্কুলে গেলে প্রায় ওই প্রধান শিক্ষক নানা ভাবে তাকে হেনস্থা ও ধর্মীয় ব্যপার নিয়ে তিরস্কার করেন।
তিনি আরো দাবি করেন, স্কুলের পরিবেশ সুন্দর সহাবস্থানে থাকার জন্য এতদিন প্রতিবাদ না করে মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন তার স্ত্রী কামরুন নেছা।
অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে নানা ভাবে হয়রানিমুলক কাজ করে আসছিলেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির মতামত না নিয়ে নিজের একক সিদ্ধান্তে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।
একাধিক বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দা এই আমিমুল এহসান মানিক ছাত্র জীবনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পড়ালেখাও করেছেন ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে। অথচ এখন নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে নিজের শিবির পরিচয় আড়াল করতে নাস্তিক্যবাদী আচরণ করে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আমিমুল এহসান মানিক একজন পাহাড় দখলকারি। পাহাড় দখল করেই তিনি বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় অবৈধ ভাবে বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। ওই পাহাড় দখল ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার এর দায়ের করা মামলায় তিনি এজাহারভূক্ত আসামি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি বিশাল পরিসরের স্কুল হলেও আমিমুল এহসান মানিক ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে নামাজের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা নামাজ পড়তে চাইলে স্কুল মাঠের পশ্চিম পাশের শৌচাগারের ট্যাংকের ঢাকনার উপর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়। কোন শিক্ষিকা খালি ক্লাস রুমে নামাজ আদায় করতে চাইলে সেখানেও বাধা দেন এই প্রধান শিক্ষক। ওই স্কুলে সাড়ে ৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও নামাজ পরার জন্য কোন নামাজ ঘর কিংবা মসজিদ এখানে রাখা হয়নি।
শিক্ষিকা কামরুন নেছা’র স্বামী মোহাম্মদ ইসলাম জানান, তার সহধর্মিনী ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক মানিক তার পেছনে পড়ে আছেন। নিকাব পড়ার কারণে শুরুতেই কামরুন নেছা’র এমপিও ভূক্তি নিয়ে টালবাহানা করেন। পরে কোভিড-১৯ এর লকডাউন চলাকালে অন্য শিক্ষিকারা স্কুলে উপস্থিত না থাকলেও আমার স্ত্রীকে স্কুলে যেতে বাধ্য করেছেন।
তার মতে, তিনি বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেছেন। স্কুলেও গেছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু দেখা করে আসার পর শিক্ষিকা কামরুন নেছা’র উপর নিপীড়ন আরও বেড়ে যায়।
মঙ্গলবারও তেমন ভাবে নিকাব পরে ক্লাস নেয়াকে অজুহাত বানিয়ে প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিক আবারও শিক্ষিকা কামরুন নেছাকে হেনস্থা করেছেন।
অনুসন্ধানে আরো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায় এই নাস্তিক দাবিদার প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিকের বিরুদ্ধে। মানিক তার প্রথম স্ত্রীকে প্রসবকালিন চিকিৎসা না করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন এবং পরে তিনি এক স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করেন। অনেকেই দাবি করছেন, ওই স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্যই প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে।
পুরো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানতে প্রধান শিক্ষক আমিমুল এহসান মানিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তিনি তার মোবাইলটিই বন্ধ করে রাখেন।
এ ব্যাপারে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জালাল আহমদ মোবাইলে বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সাথে তিনি কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন।