মো: সাগর আলী, নীলফামারী :
দরিদ্র বাবা-মায়ের সন্তান আবুল বাশার (১৮)। বাবা দরজির কাজ করেন। আর মা করেন সংসারের কাজ। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁদের। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এক হাজার ৭০২তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠতম স্থান অর্জন করে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যলয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল বুয়েটেই পড়াশোনা করার। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বুয়েটে নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবরে তাঁর পরিবার, এলাকা ও নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে খুশির বন্যা বইছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ওয়াপদা গেট খলিফাপাড়া এলাকার হতদরিদ্র দরজি তসলিম উদ্দীন ও বিউটি বেগম দম্পতির ছেলে আবুল বাশার। তাঁরা এক ভাই ও এক বোন। ছোট বোন তাজমিম আক্তার ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। আবুল বাশার স্থানীয় সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসসি ও এসএসসিতেও জিপিএ-৫ রয়েছে তাঁর।
বাবা-মায়ের মত বাশারও ছিল পরিশ্রমী। কিন্তু বাশার পড়ালেখায় বেশি মনযোগী হওয়ায় বাবা-মা তাঁকে কোনো কাজ করতে দেয়নি। প্রতিদিন পরিশ্রম করে সংসারের চাহিদা পূরণ করতেন বাশারের বাবা-মা।
জীবনসগ্রামের স্মৃতিচারণা করে আবুল বাশার বলেন, ছোটবেলা থেকেই দাদ্রিতার সাথে লড়াই করে বেড়ে ওঠেছি। মা-বাবাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে দেখেছি। সকাল হলে বাবা চলে যান কাজে, আর মা সংসারের কাজে ব্যস্ত। অর্থাভাব ও শত কষ্টের মাঝেও নিজেকে প্রস্তুত করি। ভাবতাম একদিন বুয়েট থেকে প্রকোশলী হিসেবে বের হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। তখন মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর হবে। আল্লাহর মেহেরবানীতে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ওই স্বপ্নের পথে এক ধাপ এগিয়েছি।
তার সাফল্যের পেছনে শিক্ষক ও মা-বাবার অবদানই বেশি বলে মনে করেন তিনি। বাশার বলেন, নানা পর্যায়ের শিক্ষকেরা আমাকে সহযোগিতা করছেন।
আবুল বাশারের এ সাফল্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কথা হয় সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আবুল বাশারের এ সাফল্যে আমরা শিক্ষকরা সবাই অনেক খুশি ও গর্বিত। ও শুধু পড়ালেখায় নয়, সব দিক দিয়েই খুব ভালো ছেলে। তার অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাকে এ সফলতা এনে দিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই আবুল বাশার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মা বিউটি বেগম। তিনি বলেন, আমার ছেলে কাগজ কেটে বাড়ি বানাত। উড়োজাহাজ দেখলেই দৌড়ে ঘর থেকে বের হতো। বলত, বড় হয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার হব। ওর ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট ছিল সব ভুলে গেছি।