নীলফামারী কিশোরগঞ্জে একই সঙ্গে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারী বেতন নিচ্ছেন এক শিক্ষিকা

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২০

এ জি মুন্না- নীলফামারী প্রতিনিধিঃনীলফামারীর কিশোরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের স্ত্রী আয়েশা আইরিন। তিনি একই সঙ্গে দুইটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সরকারী অংশের বেতন উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ মতে আয়েশা আইরিন কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ও কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসাবে কর্মরত। বুধবার ঘটনাটি এলাকায় প্রকাশ হয়ে পড়লে তোলপাড় সৃস্টি হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আয়েশা আইরিনের স্বামী কিশোরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ বিভিন্ন স্থানে দেনদরবার শুরু করেন।

অভিযোগে জানা যায় আয়েশা আইরিন ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এ্যান্ড কলেজে সামাজিক বিজ্ঞান শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করলে ওই বছরেই সেপ্টেম্বরেই তিনি সরকারী অংশের বেতনের জন্য এমপিওভুক্ত হন এবং সরকারী অংশের বেতনভাতা পেয়ে আসছেন। ওই শিক্ষিকার স্কুল শাখার ইনডেক্স নম্বর ৫৫৮৬১৪।তার সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার হিসাব নম্বর (একাউন্ট) ৩৪০৩২৬৯৩।স্কুল শিক্ষিকা প্রতিমাসে এই হিসাব নম্বর থেকে ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা হারে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। ফলে এক বছরের হিসাবে তিনি স্কুল শাখা হতে সরকারী অংশের বেতনভাতা উত্তোলন করেন ২ লাখ ৩ হাজার ৮৮৪ টাকা।

অপর দিকে ওই স্কুল শিক্ষিকা উক্ত স্কুলে কর্মরত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে প্রভাষক পদে ২০০৪ সালে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজ জাতীয়করন হয়। সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের পহেলা জুলাই থেকে চলতি বছরের(২০২০) মে মাস পর্যন্ত এমপিওভুক্ত কলেজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মোট ১১ মাসের সকল সুযোগ সুবিধা সহ সরকারী বেতনভাতা পাবেন। আয়েশা আইরিনের কলেজ শাখার ইনডেক্স নম্বর ৫৬৭৯৮৩০২ ও কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাব নম্বর (একাউন্ট) ০১০২১৩০২।সে অনুযায়ী আয়েশা আইরিন কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজের প্রভাষক হিসাবে সরকারী অংশের প্রতিমাসে বেতনভাতা বোনাস বাবদ ২৪ হাজার ৯০০ টাকা হিসাবে তার হিসাব নম্বরে জমা হয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা। এরমধ্যে ১১ মাসের কল্যান তহবিলের জন্য ৯ হাজার ৬৮০ টাকা ও অবসরকালিন তহবিলের জন্য ১৪ হাজার ৫২০ টাকা কর্তনের পর তিনি মোট টাকা উত্তোলন করেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭০০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক বুলবুল বলেন আয়েশা আইরিন আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক। তিনি সরকারী অংশের বেতনের এমপিওভুক্ত। তিনি আমার প্রতিষ্ঠানের বাহিরে একটি কলেজের প্রভাষক এটি আমার জানা নেই। তিনি এখনও আমার স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত।

অপর দিকে কিশোরগঞ্জ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানের কাছে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক আয়েশা আইরিন। তিনি কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এ্যান্ড কলেজে স্কুল শাখায় সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) হিসাবে কর্মরত এটি আমার জানা নেই। আমার কলেজে তিনি ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক। আমার কলেজে তার প্রভাষক হিসাবে সরকারী অংশের এমপিও বিল হওয়ায় তাকে তার বেতন ভাতা দিতে হয়েছে। তিনি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে সরকারী বেতন ভাতা নিবেন, না, কি করবেন সেটি তার ব্যাক্তিগত বিষয়।

এ বিষয়ে আয়েশা আইরিন সাংবাদিকদের বলেন আমি আগে(কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ) যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম সেই প্রতিষ্ঠানের উত্তোলনকৃত বেতনভাতা সরকারী কোষাগারে ফেরত দিয়েছি। কারন আমার কলেজের সরকারী অংশের বেতন হয়েছে। আমি স্কুলের চাকুরী ছেড়ে কলেজের চাকুরীটি করবো। এর বেশি বলতে পারবনা।

কিশোরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ তার স্ত্রী আয়েশা আইরিন দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে সরকারী অংশের বেতনভাতা উত্তোলন প্রসঙ্গে বলেন এটি কোন বিষয় না। এমন অনেকে চাকুরী করছেন । তবে আমার স্ত্রী স্কুলের চাকুরীটি আর করবেনা। তাই নীতিমালা অনুযায়ী আমার স্ত্রী স্কুলের অংশের বেতন সরকারী কোষাগাড়ে জমা দিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকতার্ আব্দুল খালেক বলেন, সরকারী কোষাগাড়ে টাকা ফেরত বা জমা দেয়ার কোন কাগজপত্রাদী হাতে পাইনি।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার্ এটিএম নুরুল আমি শাহ্ এ ব্যাপারে বলেন ,বিষয়টি আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গহন করা হবে।




error: Content is protected !!