নোয়াখালী হাতিয়ায় ৫ কিশোর নির্যাতনকারী সেই চৌকিদার আটক, শ্রীঘরে ৫ মাতব্বর
মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী প্রতিনিধি।
নোয়াখালীর হাতিয়াতে বিন্দি জাল চুরির অভিযোগে ৫ কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনকারী চৌকিদারকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে, গতকাল সোমবার বিকেলে নির্দেশ দাতা ৫ মাতব্বরকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে উপজেলার চরকিং ইউনিয়ন থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, দুপুরের দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।আটককৃত চৌকিদার আমির হোসেন (৪০), উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের চৌকিদার এবং একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন আহমদের ছেলে।থানা সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত মাতব্বর , শ্রীহরি জলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস, বিধান চন্দ জলদাস,রায় মেহেন জলদাস, প্রিয় লাল জলদাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবুল খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় গত রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোর পদ দাসের পিতা হরিপদ দাস বাদী হয়ে ৬জনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করে। এখন পর্যন্ত ওই মামলার ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার গ্রাম্য সালিশে কিশোর জেলেদেরকে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার কিশোররা হলো, উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা সহদেব (১৫),কিরণ (১৫),শিশুপদ, (১৬),সমূল্য (১৫), রতন (১৬)। ঘটনার কয়েক ঘন্টা মধ্যেই নির্যাতনের ১মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাতিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ৫জনকে আটক করে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জেলে পাড়ার নারী-পুরুষের সামনে ৫ কিশোরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই সময় ওই পাঁচ কিশোর এবং তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা আহাজারি করে তাদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। কান্নারত নারীরা এগিয়ে আসলে তাদেরও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল হাজ্ব মহিউদ্দিন আহাম্মেদ জানান, গত কয়েক দিন আগে ৫ কিশোর মিলে এক জেলের একটি বিন্দি জাল চুরি করে পাশ্ববর্তী সোনাদিয়া ইউনিয়নের এক জেলের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই জাল উদ্ধার করে শনিবার (১৪ মে) বিকেলে মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে জেলে পাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি দলদাস, নেপাল চন্দ জলদাস,প্রিয় লাল জলদাস বিধান চন্দ জলদাস,রায় মেহেন জলদাসের নেতৃত্বে একটি সালিশী বৈঠক বসে। বৈঠকের এক পর্যায়ে জেলে পাড়ার ৫ মাতব্বর অভিযুক্তদের একজনকে ১০ বেত করে মারার আদেশ দেন এবং প্রত্যেকের ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে জেলে পাড়ার মাতব্বরদের নির্দেশে ৫ কিশোরকে বেঁধে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান চৌকিদার আমির হোসেন।