পটুয়াথালীর কলাপাড়ায় স্লুইজগুলো এলাকার কৃষকদের কোনই কাজে লাগছেনা ॥

প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০২১

রাসেল কবির মুরাদ , কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ঃ পটুয়াথালীর কলাপাড়ায় স্লুইজগুলো এলাকার কৃষকদের কোন কাজে আসছেনা। সাগরপাড়ের কৃষি জমি লবনাক্ত
পানির কবল থেকে রক্ষা ও বর্ষা মওসুমে সুষ্ঠুভাবে পানি নিস্কাশন ও
সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে জান-মাল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধের নির্মান
করা স্লুইজগুলো এখন আর এলাকার কৃষকদের হাতে নেই। স্বার্থন্বেসী ও
প্রভাবশালী মহল মাছ চাষের উদ্দেশ্যে শীত মওসুমে সাগরের লবনাক্ত পানি
উত্তোলন করে এবং বর্ষা মওসুমে ম্লুইজগেট আটকিয়ে রাখায় হাজার হাজার একর
কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এরফলে জমি চাষাবাদ তো দূরের কথা
গবাদিপশুর খাবারেও সংকট দেখা দেয়। এসবের প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ করলে
উল্টো মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছে কেউ কেউ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যসূত্র মতে জানা যায়, কলাপাড়ায় ষাটের দশকের প্রথম
দিকে ৯টি পোল্ডারে ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান করা হয়। ওই দশকের
মাঝামাঝি সময়ে ৪৯টি ড্রেনেজ এবং ৫৩টি ফ্লাশিং স্লুইজ নির্মান করা হয়।
প্রত্যেকটি স্লুইজ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য একজন কওে স্লুইজ খালাসি
নিয়োগ দেয়া হয়। এলাকার কৃষকদেও সুবিধার জন্য তারা পানি উঠা-নামা করতো।
প্রয়োজনে গেট বন্ধ রাখতো। আবার প্রয়োজন হলে খুলে দিতো। ৬৯’র পর থেকে নতুন
করে খালাসী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরদিকে নিয়োগকৃত
খালাসী অবসরে যাবার পর আর কোনো খালাসীর নিয়োগ দেয়নি। ফলে স্লূইজগুলো হয়ে
যায় অরক্ষিত। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে নেয় স্লুইজগুলো।
এমনকি চুরি করে নিয়ে যায় স্লুইজের কাঠ, লোহা, দরজা। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের
নীজকাটা গ্রামের ৮ ব্যান্ডের স্লুইজের ওপর ১৭টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল।
বর্তমানে ওই গ্রামগুলোর ৪ হাজার একর জমি চাষাবাদের হুমকীর মুখে। চাকামইয়া
ইউনিয়নের কাঠালপাড়ার ৪ ব্যান্ডের স্লুইজ গেট সম্পূর্ন খোলা রয়েছে। ১৫
কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খালের দুপাড়ে রয়েছে চাকামইয়া, কড়ইবাড়িয়া ও
আড়পাঙ্গাশিয়া এই তিনটি ইউনিয়নের মানুষে দুভোগের সীমা নেই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সরকারি খালের দখল নিয়ে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী
গ্রামে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩২ জন আহত হয়েছে । এর
মধ্যে ৮ জনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
প্রেরন করেছে।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার এ আর এম সাইফুল্লাহ এ প্রতিনিধিকে বলেন,
ম্লুইজ গেট নিয়ন্ত্রন কমিটির সাথে কৃষি বিভাগকে জড়িয়ে রাখলে আমরা
প্রান্তিক কৃষকদের উপকার করতে পারতাম। এ স্লুইজ কারা নিয়ন্ত্রন করে তা
আমরা কিছুই জানি না ।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি শওকত হোসেন মেহরাজ
সাংবাদিকদের জানায়, কলাপাড়ার সকল স্লুইজ গেট কমিটির প্রধান উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদের সাথে স্থানীয়
কৃষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে নয় সদস্য বিশিষ্ট স্লুইজ
গেট নিয়ন্ত্রন কমিঠি রয়েছে। সরেজমিনে খতিয়ে এর ব্যাবস্থা নেওয়া হরে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক
গনমাধ্যমকে বলেন, সরকারি খালের অবৈধ বাঁধ অপসারন উপজেলা প্রশাসনের রুটিন
ওয়ার্ক। ইতোমধ্যে ধানখালী ইউনিয়নের খাল থেকে ১৬টি অবৈধ বাঁধ কেটে দিয়ে
জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। এলাকার অন্য ইউনিয়নের খালগুলো থেকে সকল অবৈধ
বাঁধ অপসারন করে সরকারি খাল দখলমুক্ত করা হবে। তবে স্লুইজগেট’র বিষয়টি
পানি উন্নয়ন বোর্ড’র অধীন। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি উপজেলা প্রশাসনের
সহায়তা চায় তাদের সহায়তা করা হবে।




error: Content is protected !!