মিঠুন গোস্বামী রাজবাড়ীঃ
শুরু হয়েছে সারাদেশে পেঁয়াজের বীজ রোপণ। তবে বীজ রোপণ করার আগে অবশ্যই বীজতলা বারবার চাষ দিয়ে মাটি বেশ ঝুরঝুরে করে নেয়া আবশ্যক। সে কারণেই চাষি বারবার বীজতলার মাটি ঝুরঝুরে করার জন্য নিজেই গরুর পরিবর্তে কাজ করছে।
বলছি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলাধীন নারুয়া ইউনিয়নের ঘিকমলা গ্রামের একজন শিক্ষিত চাষি যুবক হাবিবুর সরদার (হাবলু) এর সনাতনী পদ্ধতিতে পেঁয়াজের বীজতলা প্রস্তুতের গল্প। তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক এর চাকরি করেন। এছাড়াও তার ঘিকমলা বাজারের রয়েছে ওষুধের দোকান।
শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই অভিজ্ঞ কৃষক পিতা মকসেদ সরকার ও ২টা জোন (কামলা) কে সাথে নিয়ে পেঁয়াজের বীজ রোপণ করার জন্য বীজতলা প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষি হাবলু তার বৃদ্ধ পিতা ও ২টা জোন (কামলা) নিয়ে বীজতলার মাটি ঝুরঝুরে করতে কাজ করছে। একজন বীজতলার আগাছা পরিস্কার করছে, অন্য ৩ জন মাটি ঝুরঝুরে করতে হাতের নাংলে টানছে। বৃদ্ধ পিতা মকছেদ সরদার হাল ধরে আছে, ছেলে হাবলু ও সিয়ান গরুর পরিবর্তে নাংলে টানছে।
এ সময় চাষি হাবিবুর সরদার (হাবলু) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি গত বছর ৯ কেজি পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছিলাম। এ বছর ১৫ কেজি বীজ রোপণ করেছি। কারণ গত বছর থেকে এ বছর বীজের দাম কমে পাইছি। আমি মুলত এই বীজ থেকে যখন চারা (হালি পেঁয়াজ) হয় তখন এগুলো বিক্রি করে থাকি। সেই সাথে আমিও এক একর মত পেঁয়াজ লাগাই। এই মৌসুমে হালি পেঁয়াজ বিক্রি করে ভালো মুনাফা পাই। গত বছর এক কেজি বীজের হালি পেঁয়াজ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমার পাশের আরও ৩ জন পেঁয়াজের বীজ রোপণ করে হালি পেঁয়াজ বিক্রির আশায়। মুলত উচু ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে হালি পেঁয়াজ ভালো হওয়ার কারণে এখানে আমরা সবাই বীজ রোপণ করে থাকি।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আর এক জন কৃষক মুকুল সরদারের সাথে কথা হয়। তিনিও ঘিকমলা বাজারে স্থায়ী ভাবে ডাক্তারি করে। তবে সেও কৃষি কাজের সাথে জড়িত। সে বলেন আমি প্রতিবছর পেঁয়াজের চাষ করে থাকি তার জন্য এখনে আমিও পেঁয়াজের বীজ রোপণ করে থাকি। প্রায় প্রতি বছর যে বীজ রোপণ করে থাকি তা দিয়ে নিজের জমিতে (হালি পেঁয়াজ) রোপণ করেও কিছু বিক্রি করতে পারি। এ বছর গতবারের চেয়ে বেশি বীজ রোপণ করেছি। তবে দাম কিছুটা কম হতে পারে তার পর ও রোপণ করেছি।
পাশের আর এক জন চাষি নারায়ণ চন্দ্র গোস্বামী এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার নিজের জমিতে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য হালির প্রয়োজন হয় তাই প্রতিবছর বীজ রোপণ করি। গত বছর থেকে এ বছর বেশি বীজ রোপণ করেছি। তবে বীজ রোপণ করতে খরচ বেশি হয়ে যায়। বীজতলা ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে ও সার কীটনাশক সহ জোনের (কামলা) খরচ বেশি হয়ে যায়। তবে গত বছর ভালো দাম পেয়েছি। এবছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাইনি চাষিরা তাই বুঝতে পারছি না কি হবে।