প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় হালদা পাড়ের জেলেরা,

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২১
Exif_JPEG_420

আসলাম পারভেজ,হাটহাজারী ★
এপ্রিল এবং মে মাসে বিশ্বের একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্পজাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ) মা-মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। তাই এ মাস থেকে জেলেদের উদ্দীপনার শেষ নেই। নদীই হয়ে উঠেছে তাদের আবাসস্থল। নদীর পাড়ে কাটছে সময়। নদীতে মা মাছের আনাগোনা দেখে তারা খুশিতে আত্মহারা। এরিমধ্যে জেলেরা ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে নৌকা, জাল সহ যাবতীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।ডিম আহরোন কারী আশু বড়ুয়া বলেন, হালদা নদী আমাদের কাছে মায়ের মতো। এ নদীতে প্রতি বছর এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আগ্রহ আর উদ্দীপনার শেষ থাকে না কখন মা মাছ ডিম ছাড়বে। নদীকে রক্ষা করতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকি। আশাকরি বৃষ্টি হলে এবার আমরা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস।তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের তৈরি করা ডিম সংরক্ষণের কুয়া পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার শর্তেও আমরা যে পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করি সে পরিমাণে কুয়া পাইনা। আর যারা ডিম কম পায় তারাই আগেভাগে কুয়া দখল করে রাখে। যা ফলে বেশি সংগ্রহকারীদের ডিম নষ্ট হয়ে যায়।উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যারা যে পরিমাণের ডিম সংগ্রহ করবে তাদেরকে যেন সে পরিমাণে কুয়া দেওয়া হয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদার সার্বিক পরিস্থিতি ২০ বছরের মধ্যে সবদিক দিয়ে পজিটিভ। দূষণের পরিমাণ কম, মা মাছ সংরক্ষণে ছিল, প্রচুর পরিমাণে জাল উদ্ধার হয়েছে, এলাকার মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তবে প্রকৃতি এখনো আমাদের সাপোর্ট করেনি, আমাদের অনুকূলে নেই।তিনি আরও বলেন, মার্চের মধ্যে একটা বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এপ্রিলের মধ্যে যদি ভরা পূর্ণিমায় বৃষ্টি হতো তখন মা মাছ ডিম ছেড়ে দিতো। কিন্তু সেটা হয়নি। যদি প্রকৃতি অনুকূলে থাকে এবং বৃষ্টি হয়, তাহলে একটা ভালো ফলাফলের আশা করা যায়। অতীতের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে।এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, হালদা নদীকে রক্ষা করতে রাত-দিন হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টার ফলে আজ হালদা এ পর্যায়ে এসেছে।তিনি আরও বলেন, হালদা নদী থেকে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকা, নিয়মিত অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ, বালু উত্তোলন বন্ধ, ড্রেজার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা বন্ধ ও ধ্বংস করায় মা মাছের নিরাপদ বিচরণ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। তাছাড়া নন্দীরহাট সংলগ্ন একটি পেপার মিল ও হাটহাজারীর ১শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য হালদা নদীতে গিয়ে পড়া বন্ধ থাকায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূলে আছে। এ বছরও ডিম ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। প্রত্যাশা করছি, গত বছর ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহের রের্কডও এ বছর ছাড়িয়ে যাবে।প্রসঙ্গত, হালদা থেকে কার্পজাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়। হাটহাজারী-রাউজান-ফটিকছড়ি উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীতে প্রতি বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিম ছাড়ে মা-মাছ। হ্যাচারি পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ পোনার কদর সারাদেশে। ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করে তা থেকে রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করেন। রেণুর আয় দিয়ে পুরো বছর জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।




error: Content is protected !!