বানিয়াচংয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গর্ভধারিণী মা’কে নিঃশংস ভাবে হত্যা করেছে নরাধম পুত্র৷
এম.মুজিবুর রহমানঃ
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে বাড়ীর সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা গোলাপজান বিবিকে ফিকলবিদ্ধ করে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য বৃদ্ধার ছেলে মোহাম্মদ আলী-ই মাকে হত্যা করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেছে।গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সে এই স্বীকারোক্তি দেয়।আদালত পরিদর্শক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদেরকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী ও তার চাচাত ভাই আব্দুল কাদিরের মধ্যে বাড়ির সীমানা, পানি নিস্কাশনের রাস্তাসহ জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছিল। সম্প্রতি বানিয়াচং থানা পুলিশ উভয়পক্ষকে ডেকে এ ঘটনাটি নিষ্পত্তি করার আশ্বাস দেন। এর মধ্যে বুধবার সকালে মোহাম্মদ আলী ও তার চাচাত ভাই আব্দুল কাদিরকে নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সামাজিক বিচারে বসেন। বিচারের মধ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।এর মধ্যে ফিকলের আঘাতে মোহাম্মদ আলীর মা গোলাপজান বিবি ঘটনাস্থলেই নিহত হন । এ অবস্থায় মোহাম্মদ আলী তার মাকে কাদির গং হত্যা করেছে বলে চিৎকার শুরু করে এবং লোকজন নিয়ে কাদির গং এর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে, বানিয়াচং থানার ওসি এমরান হোসেন,ওসি তদন্ত প্রজিত কুমার দাশসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।ঘটনাস্থলে পুলিশের কাছে গোলাপ জান বিবি’র ছেলে মোহাম্মদ আলী জানান,কাদির মিয়া গং তার মাকে ফিকল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। অপরদিকে কাদির মিয়ার লোকজন পুলিশকে জানান, নিহত গোলাপ চান বিবির ছেলে মোহাম্মদ আলী ফিকল দিয়ে আঘাত করে তার মাকে হত্যা করেছে।পরস্পর বিরোধী এসব তথ্য ও নিহতের আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। পরবর্তীতে সেখানে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুল মালিকের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত টিম গিয়ে দিনভর তদন্ত করে। হত্যার ঘটনায় রহস্য সৃষ্টি হওয়ায় নিহতের ছেলে মোহাম্মদ আলী,তার স্ত্রী,মেয়ে ও ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ওসি এমরান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন,আমরা এমন ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।বিষয়টি যাচাই বাছাই করার সময় ঘটনার সত্যতা পেয়ে মোহাম্মদ আলীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই তার মা’কে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করলে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা জন্য।তিনি আরও জানান, আব্দুল কাদিরের বাড়িঘর লুটপাটের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে আরো কারা জড়িত এবং কাদের প্ররোচনায় মোহাম্মদ আলী তার মা গোলাপজান বিবিকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান প্রশাসন।