মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী প্রতিনিধি
আজ ১০ ডিসেম্বর। বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিনের ৪৯ তম শাহাদাত বার্ষিকী। নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আজ দেশের মানুষ স্মরণ করছেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
স্বাধীনতার ৪৯ বছরের মধ্যে এ বীরের নামে নির্মিত গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মিত হলেও বর্তমানে সেটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে যে লক্ষ্যে এ বীরের নামাকরণে এসব স্থাপনা করা হয়েছে তা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়ে ম্লান হয়ে যাওয়ার অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনদের।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলাধীন দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া গ্রামে রুহুল আমিনের জন্ম। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় তিনি জীবন বাজি রেখে লড়েছেন শত্রুদের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৬ দিন আগে ১০ ডিসেম্বর খুলনার রুপসায় শাহাদাত বরণ করেন এই বীর যোদ্ধা। এ বীরের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে এবং নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে ধারণা দেয়ার জন্য তার জন্মস্থানে ২০০৮ সালে শহীদ মো. রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করা হয়। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সেটি আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে তার এ বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস জানার জন্য তার নামে নির্মিত গ্রন্থাগারে এসে নতুন প্রজন্মরা সামান্য কিছু বই ছাড়া আর কিছুই না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। জাদুঘরটিও আছে নামেমাত্র। এখানে যুদ্ধের কোনো স্মৃতিও নেই।বাগপাচড়া গ্রাম থেকে রুহুল আমিন নগর করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। সরকারের কাছে এজন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বীরের নামের এ গ্রামটি এখনো অনেক অবহেলিত। গ্রামের কিছু রাস্তা সংস্কার হয়নি বছরের পর বছর ধরে।
আগে মানুষজন যেভাবে জাদুঘর দেখার জন্য আসতো এখন অনেক কমে গেছে।এলাকাবাসীর দাবি খুলনার রুপসা নদীর পাড় থেকে রুহুল আমিনের মরদেহ এনে তার গ্রামের বাড়ির সামনে সমাধি করা হোক। তাহলে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসবে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মো. রুহুল আমিন গ্রামের এলাকা থেকে পড়ালেখা করে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি নেন। ছুটিতে বাড়ি আসার পর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ের মাত্র ৬দিন পূর্বে তিনি খুলনার রুপসা নদীর পাড়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাকে সেখানে শায়িত করা হয়। দীর্ঘ দিন পর সরকার তার নামে যে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর করে দিয়েছেন বর্তমানে তার যথাযত ব্যবহার না হওয়ায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকবো এ বলে দাবী করছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে প্রশাসন জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান।এদিকে ২০১২ সালে সড়ক বিভাগের উদ্যোগে বেগমগঞ্জের চৌরাস্থায় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে একটি স্মৃতি স্কয়ার করা হয়। যার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তুু সেটিও বছরের বেশীর ভাগ থাকে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার পোস্টার আর ফেস্টুনে ঢাকা। শুরুতে এটিতে পানির ফোয়ারা থাকলে ও এখন এটি অচল। সৌন্দর্য বর্ধনের অনেক জিনিস নেই। দীর্ঘ দিনেও কোনো সংস্কার না হওয়ায় ধুলো বালিতে এটি বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন নাগরিকদের।বেগমগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে জানা যায় প্রশাসনের নাকের ডগায় এ স্মৃতি স্কয়ারের বেহাল অবস্থা। সড়ক বিভাগ এটি তৈরি করে দিলে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চৌমুহনী পৌরসভাকে দেয়া হয়। কিন্তু এর কোনো বিন্দুমাত্র দায়িত্ব পালন করে না। বছরের ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর আসলে কিছু আলোকসজ্জা করা হয়। আর বাকি সময়ে থাকে এটি অরক্ষিত।