ব্যক্তি উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হিন্দি গানের ১৬ সেকেন্ডে ভিডিও ইন্টারনেটে ছাড়ানো হতে পারে!
রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধিঃ
হিন্দু অধ্যুষিত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জংগল ইউনিয়নের ধর্মতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে হিন্দি গান বাজানোর ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পায়তারা চালাচ্ছে একটি কুচক্রী মহল।
গত সোমবার সেই ভিডিও কে পুজি করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়৷ ফলে উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিক বিষয়ে জানতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক হলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা জেসমিন। অন্য দুইজন হলেন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো: মিয়াদ হোসেন ও সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো: চঞ্চল মাহমুদ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয় গিয়ে একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। সেই সাথে বিদ্যালয়ের আশ পাশের বসবাস কারীদের সাথেও কথা হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে গত কাল প্রতিষ্ঠানে আনায় বক্সে কোন হিন্দি গান শোনে নাই। তার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইন্টারনেটের দৌলতে জানতে পারে তাদের বিদ্যালয়ে শোক দিবসে হিন্দি গান বাজছে। তারা আরও বলেন, বক্সে যদি গান বেজ থাকে তার হয়তো খুব কম সময় অল্প আওয়াজে বাজছে ফলে শুনতে পায় নাই৷
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ বেশিরভাগ শিক্ষক হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় একটি কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশায় ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও উদ্দেশ্য মূলক ভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়৷ নিজের স্বার্থ হাসিল তার মূল উদ্দেশ্য।
স্থানীয় বিভিন্ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শোক দিবসে হিন্দি গান বাজানো দুক্ষজনক। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বিদ্যালয় একাধিক কর্মসূচি পালন করে। যদি সেই অনুষ্ঠানের মধ্যে হিন্দি গান বাজানো হতো তবে আমরা আওয়ামীলীগের পক্ষ হতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। তবে অনুষ্ঠান শুরুর আগে অপারেটর বা কোন শিক্ষার্থী যদি ২/১ মিনিট কোন গান বাজায় এতে প্রধান শিক্ষকের কিছু করার থাকে না। তবুও যদি গানটি দীর্ঘ সময় বাজতো তবে তাকে দায়ী করা যেতো।
মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট) সকালে ধর্মতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তদন্ত কমিটি সদস্যরা উপস্তিত হয়। তারা বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাউন্ড বক্সে অপারেটর সহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের লিখত বক্তব্য নেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে আসার আগে ইন্টারনেটে থেকে দেশাত্মবোধক গান বাজাতে গিয়ে একটা হিন্দি গান ১/২ মিনিট বাজে। তবে তার পর আর বাজানো হয় নাই।
জিহাদ ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের মালিক মুরাদ বলেন, ১৫ আগষ্ট উপলক্ষে আর তিন যাইগা প্রোগ্রাম ছিলো। বিদ্যালয়ে বক্স এনে তারাতাড়ি সাউন্ড ঠিক করতে গিয়ে আমার কাছ থেকে ৩০ সেকেন্ড হিন্দি গান বাজছে।
ধর্মতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্টাতা প্রধান শিক্ষক কুমারেশ বাছাড় বলেন, আমি বিদ্যালয়ে আসার কিছু সময় পর একজন সাংবাদিক আমার কাছে বিদ্যালয়ে হিন্দি গান বাজানোর বিষয়ে জানতে চাই। তখন আমি অবাক হই। কারণ তখন অব্দি আমি জানিনা আমার বিদ্যালয়ে শোক দিবসের জমা আনা বক্সে হিন্দি গান বাজছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে হিমু টিচিং হোম নামে একটি কোচিং বাণিজ্য করেন ওয়াসিম রানা নামের এক ব্যক্তি। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের সাথেই একটি রুমে ছাত্রছাত্রীর প্রাইভেট পড়ান। সে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহ শিক্ষকদের বিপদে ফেলে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই সব কাজ করে থাকে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সে ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছে। এ সময় হিমু টিচিং হোম কোচিং সেন্টারের পরিচালক ওয়াসিম রানা বলেন, এখানে যারা পড়ছে তারা সবাই এস এস সি পরিক্ষার্থী। তাই এদের এই সময় পড়াচ্ছি৷ এ সময় তিনি আরও বলেন, ১২০ এর অধিক শিক্ষার্থী তার কাছে প্রাইভেট পড়ে।