হাফেজ মাওলানা মুফতি ওসমান আল উখিয়াভী
সিনিয়র মুহাদ্দিস জামিয়া ইসলামিয়া বাইতুল কারীম হালিশহর চট্টগ্রামঃ
বর্তমানে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অপসংস্কৃতির পথও আজ উন্মুক্ত। যার ফলে পরিচ্ছন্ন পরিশুদ্ধ ইসলামী সংস্কৃতি আজ অপসংস্কৃতির দ্বারা আক্রান্ত। অপ্রিয় হলেও একথা সত্য যে মুসলিম সমাজ খুব সহজে অমুসলমানদের রীতিনীতির প্রতি প্রভাবিত হয়ে পড়ে। ‘‘আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম’’ এখানে সংযোগ বা বিয়োগের কোন সুযোগ নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম অধিকার আদায়ের ধর্ম, এখানে অন্যায়, অবিচার, জুলুমের কোন স্থান নেই। নিজেদের ধর্ম প্রচারে আছে প্রাপ্তি তবু কেন মুসলমানরা নিজেদের ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলতে এতো লজ্জাবোধ করে? পশ্চিমা রীতির ছোয়া মুসলমানদেরকে এতোটাই কাবু করেছে যে নিজেদের আপন ধর্ম ইসলাম যা মেনে চললে ইহকাল পরকালের শান্তি সুনিশ্চিত। যে ধর্মের কথা গর্বের সাথে প্রচার করা যায়। তা থেকে আজ মুসলমানরা নিজেদেরকে এমনভাবে গুটিয়ে রেখেছে যেন ‘‘কোন লজ্জাবতি গাছ’’। কেউ ছুয়ে দিয়েছে আর সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। আলো বাতাস থাকা সত্যেও যেন গাছটি একেবারে শুকিয়ে গেছে। এহেন অবস্থার শিকার আজ মুসলমান জাতি। ছুয়ে দেয়ার লজ্জায় আজ ইসলামী রীতিনীতি এবং অনৈসলামী রীতি-নীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। আর এরই ফলশ্রুতিস্বরূপ মুসলমানরা আজ বিভিন্ন দিবস পালনে অভ্যস্ত।
দিবসের পর দিবস, আর কত দিবস
অন্ধ অনুকরণ একটি এমন বিষয়, যেখানে দলিল-প্রমাণ অচল হয়ে যায়, সত্য গ্রহণ করা ও সত্যের সন্ধান করার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায়, কারণ সে অন্তরে তালা বদ্ধ করে রাখে। এটি একটি এমন কুঅভ্যাস, যা থেকে আমাদের নবী (সা:) আমাদের সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে ইহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণ হতে সাবধান করেছেন। তাঁর সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হয়েছে। আমরা আজ কোন না কোন রূপে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি, বিশেষ করে দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে। তারা মা দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে এটা পালন করি। তারা বাবা দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে তা পালন করি। ভাই দিবস পালন করে তাই আমরাও অনেকে পালন করি। বোন দিবস আবিষ্কার করেছে তাই আমরাও মানি। জন্ম দিবস পালন করে তাই আমরাও সানন্দে জন্ম দিবস পালন করি। ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করে তাই অনেকে তা পালন করি। জানি না, ভবিষ্যতে যখন কেউ আঙ্কেল দিবস, আন্টি দিবস, হাজবেন্ড দিবস, ওয়াইফ দিবস, সান দিবস, ডটার দিবস, গ্র্যান্ড ফাদার দিবস, গ্র্যান্ড মাদার দিবস, ফাদার ইন্ ল দিবস, মাদার ইন্ ল দিবস ইত্যাদি আবিষ্কার করবে, তখন হয়ত: সে সব দিবসও আমরা পালন করতে শুরু করবো। অতঃপর বছরের কোন একটি দিন দিবস ব্যতীত বাকি থাকবে না! তাই বলছিলাম আর কত দিবস!
নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তোমরা তোমাদের পূর্বের লোকদের প্রথা ধাপে ধাপে পূর্ণরূপে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি শাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে তো তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কি ইহুদী-খৃষ্টান? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তারা ছাড়া আবার কারা? [বুখারী,নং ৩২৬৯,৬৮৮৯ মুসলিম, নং ২৬৬৯]।
বাস্তব সত্য পাশ্চাত্য দেশগুলো যে সকল দিবস উদযাপন করে আসছে তা মূলত: দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়াই প্রমাণ করে।
আমাদের দেশের মুসলমানগণও যথারীতি মা দিবস পালন করে থাকেন। ব্যস্তজীবনে সারাবছর মায়ের সাথে যোগাযোগ খোঁজখবর নেয়ার সুযোগ না মিললেও হয়তো এদিনে মায়ের খোঁজখবর নেয়ার জন্য একটা ফোন করেন অথবা কোন উপহার বা পছন্দের কোন খাবার নিয়ে নিজেই মায়ের নিকট গিয়ে হাজির হন, আর মনে করেন মায়ের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু ইসলাম বলে মায়ের জন্য একদিন ভালবাসা নয় পুরো বছর ৩৬৫ দিনই মায়ের জন্য নিবেদিত হোক ছেলে-মেয়ে এমনটা ইসলামের মূলকথা।
বিশ্বে কখন শুরু হয় মা দিবস
আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ই মে থেকে৷ সঙ্গে উপহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা কার্নেশন ফুল৷ সমীক্ষা বলছে, বছরের আর পাঁচটা দিনের তুলনায় এদিন অনেক বেশি মানুষ নিজের মাকে ফোন করেন, তাঁর জন্য ফুল কেনেন, উপহার দেন৷
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী‘একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সবিলে-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত এই উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।
প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরও একটি ছুটির দিন ছিল, সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।
মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচার-অনুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিষ্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী একটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যম।’
‘মা’-দিবস বলতে আমরা কি বুঝি
‘মা দিবস’ অর্থ: সারা দিন, দিনমান, অহোরাত্র। তাই মা দিবস অর্থ দাঁড়ায়, মার জন্য একটি পুরো দিন। অর্থাৎ বছরের এক দিন মায়ের জন্য নিবেদন করবেন। তাঁর সেবায় কাটাবেন। তাঁকে খুশী রাখবেন। সেই দিনটিতে তাঁর পাশে থাকবেন। বিভিন্ন কার্য-কলাপের মধ্য দিয়ে সেই দিনটি পালন করবেন। কিছু লোকের পরিভাষায় একেই বলা হচ্ছে মা দিবস।
মায়ের জন্য এমন একটি দিন আবিষ্কারের পিছনে কারণ কি? তা খোঁজ করলে, জানা যায়, পৃথিবীতে মায়ের সন্তানাদি নাকি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের হাতে মায়ের সেবা করার মত ও মায়ের পাশে থাকার মত কোন সময় নেই। অবশ্য অন্য কিছুর জন্য তাদের যথেষ্ট সময় থাকে! তাই প্রয়োজন হয়েছে একটি দিবসের। কারণ বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে একটি দিনও যদি মায়ের জন্য নির্দিষ্ট না করা যায় তো, লোকেরা কী বলবে?! জগত কী ভাববে?! মায়ের সম্মানের কী হবে?! জননীর ঋণ শোধ হবে কী ভাবে?!
‘মা‘ দিবস যাদের জন্য কান্না দিবস!
এই দিবসের পিছনে ইতিহাস যাই থাক না কেন এর অভ্যন্তরে একটি করুণ রহস্য লুকায়িত আছে, যা অনেকে আঁচ করে না আর অনেকে ভ্রুক্ষেপ করে না। তা হল, এই দিনে মাতৃহীন এতিম ভাই-বোনদের অবস্থা। যাদের মা আছে তারা এই দিনে যখন নিজ মাকে খুশী করবে এবং নিজেও আনন্দে মেতে থেকে দিনটি উদযাপন করবে তখন এতিমদের মনে কত বড় ব্যথার সঞ্চার হবে? মা হারানোর পুরোনো তিক্ত কষ্টকর অনুভূতি তাদের মনে কেমন প্রভাব ফেলবে? তারা কি পালন করবে সে দিন? প্রকৃতপক্ষে মাতৃহারারাই তো বেশী সহানুভূতির হকদার। তাই কল্পিত এই প্রথা যদিও এক দিকে ভাল মনে হয় কিন্তু অন্য দিকে তা দারুণ করুণও বটে। মা দিবস উদযাপনকারীরা যদি সত্যিকার অর্থে ন্যায়পরায়ণ হোন তবে সেই দিনেই প্রয়োজন আছে ‘অনাথ দিবস’ পালন করার। আজ মা দিবস আবিষ্কৃত হয়েছে বটে কিন্তু অনাথ দিবস আবিষ্কৃত হয় নি!
ইসলামের দৃষ্টিতে এই দিবস
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলাম আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দেয়। তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সম্পর্কচ্ছেদ থেকে সতর্ক করে। তবে সদ্ব্যবহারের শ্রেষ্ঠতা মায়ের জন্য নিবেদন করে, মাকেই বেশী হকদার মনে করে এবং পিতা-মাতা সহ সকল আত্মীয়ের সাথে ধারাবাহিক অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কের আদেশ দেয়। তাই মায়ের সেবার জন্য কোন একদিন নির্দিষ্ট করা আর অন্য দিনে গুরুত্ব না দেয়া ইসলাম স্বীকার করে না। যেমন এটা মায়ের জন্য স্বীকার করে না। অনুরূপভাবে পিতা সহ অন্যান্য আত্মীয়দের সাথেও সমীচীন মনে করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” [সূরা ইসরা/২৩]
তিনি আরও বলেন:
“মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।” [সূরা লোকমান/১৪]
মহান আল্লাহ আরও বলেন:
“ক্ষমতা পেলে সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির করেন আর তাদের দৃষ্টি শক্তিকে করেন অন্ধ।” [সূরা মুহাম্মদ/২২-২৩]
একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন
ইসলাম মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’- (ইবনে মাজাহ-মিশকাত, পৃ. ৪২১)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন’- (বায়হাকি-মিশকাত, পৃ. ৪২১
একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা- (বোখারি-মুসলিম)
পবিত্র কোরআনে কারিমের কয়েক স্থানেও মায়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন এবং দুই বছর দুগ্ধপান করিয়েছেন। –সূরা লোকমান : ১৪
মা জননী তাকে কষ্ট সহকারে গর্ভধারণ করেছেন এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছেন। তাকে গর্ভেধারণ করতে ও স্তন্যছাড়তে সময় লেগেছে ত্রিশ মাস।’ -সূরা আহকাফ : ১৫
উল্লেখিত আয়াত দু’টোতে বিশেষতঃ মায়ের কষ্টের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। নয় মাস ধরে গর্ভেধারণ, অপরিসীম কষ্টের সাথে সন্তান প্রসব করণ এবং গর্ভধারণ ও বুকের দুধ খাওয়ানোতে ত্রিশ মাস কাটানো এ ধরনের কষ্টের বদলা দেয়া সন্তানের পক্ষে অসম্ভব।
হাদিস শরিফে আছে
কোনো ব্যক্তি মাকে পিঠে বহন করে হজ সম্পাদন করালেও তার বদলা পরিশোধ হবে না। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে অভিযোগ করল যে, তার মা বদমেজাজের। রাসূল (সা.) বললেন, নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন তিনি পেটে ধারণ করে ঘুরছে তখন তো তিনি বদমেজাজের ছিলেন না।
লোকটি বলল, হুজুর আমি সত্যই বলছি, তিনি খারাপ মেজাজের। হুজুর (সা.) বললেন, তোমার জন্য যখন তিনি রাতের পর রাত জাগ্রত থেকেছেন এবং তোমাকে দুধ পান করিয়েছেন তখন তিনিতো বদমেজাজের ছিলেন না।
সে ব্যক্তি বলল, আমি আমার মায়ের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি। রাসূল (সা.) বললেন, সত্যিই কি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছো? জবাবে লোকটি বলল, আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে হজ করিয়েছি। তখন রাসূল (সা.) এবার সিদ্ধান্তকারী রায় দিয়ে বললেন, তুমি কি তার সে কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার যা তোমার ভূমিষ্ট হওয়ার সময় স্বীকার করেছেন? অর্থাৎ মাকে পিঠে করে হজ সম্পাদন করালেও ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ে তার যে কষ্ট হয়েছে সেটার ন্যূনতম বদলা হবে না।
হাদিস থেকে আরো জানা যায় যে, নামাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া উত্তম কাজ। ইসলামে মা হিসেবে নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে দুনিয়ার অপর কোনো সম্মান বা মর্যাদার সাথে তার তুলনা চলে না।
পিতা-মাতার প্রতি অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে ইসলামের গুরুত্ব
‘‘আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে? বলেদিন যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয় আপনজনদের জন্য, এতিম, অনাথদের জন্য অসহায়দের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য।’’ আল-কুরআন (২.২১৫) আয়াত লোকেরা কোথা ব্যয় করবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় তোমার যা-ই ব্যয়কর তার হকদার হচ্ছে তোমার পিতা-মাতা, নিকট আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরগণ এ আয়াতে সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পিতা-মাতার হকের কথা বলা হয়েছে।
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া সম্পর্কে কতিপয় হাদিস : মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুনঃপুনঃ বলতে লাগলেন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হোক অপদস্থ হোক। লোকগণ আরজ করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কার উপর এমন বদদোয়া করছেন? তিনি বললেন যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে বা উভয়ের যে কোন একজনকে বৃদ্ধবস্থায় পাওয়া সত্ত্বেও তাদের খেদমতের দ্বারা নিজেদের বেহেশতে গমন সুনিশ্চিত করে নিতে পারলাম।
আমার মা আমার ভালবাসা
আমরা যদি খেয়াল করি দেখব, ম ধ্বনীটি সবচেয়ে সহজ। হয়তবা এই কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় মা অর্থবোধক শব্দে ম অক্ষরটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কারণ, মানুষ তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে সবচেয়ে সহজ ভাষায় ডাকতে পছন্দ করে।
তাই এবার দেখব বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ কে কি বলে। এটি একটি এমন শব্দ, যা বিশ্বের যতগুলি প্রসিদ্ধ জীবন্ত ভাষা রয়েছে প্রায় সব ভাষায়‘মা’ শব্দটির সাথে ‘ম’ অক্ষরটি বা‘ম’ এর ধ্বনি লক্ষ্য করা যায়। আমি কোন ভাষাবিদ নই। আর এটা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই। তবে কয়েকটি ভাষার অভিধান ও কিছু ওয়েবসাইট থেকে যা অবগত হলাম তারই কিছু বর্ণনা করার চেষ্টা করছি মাত্র।
১- ইংরেজি ভাষায় বাংলা ‘মা’ এর শব্দ হল, মাদার। দেখা যাচ্ছে, ‘ম’ রয়েছে।
২- আরবী ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল,‘উম্ম ‘ । দেখা যাচ্ছে, ম আছে।
৩- উর্দু ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল, ‘ মাঁ ’। ম আছে।
৪- সংস্কৃত এবং হিন্দি ভাষায় ‘মা’ এর শব্দ হল, ‘ মাতা ’। ম আছে।
৫- রাশিয়ান ভাষায় বলা হয়, ‘মাতি ’। ম রয়েছে।
৬- গ্রীক ভাষায় বলা হয়, ‘মাতা’। ম আছে।
৭- হলেন্ডী ভাষায় বলা হয়, ‘মড্যের’। ম আছে।
৮- ফ্রান্সী ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যারে’। ম আছে।
৯- জার্মানি ভাষায় বলা হয়, ‘মুতার’। ম আছে।
১০- ফার্সি ভাষায় বলা হয়, ‘ মাদার ’। ম আছে।
১১- ল্যাটিন ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যটার’। ম আছে।
১২- রোমানিয়ায় বলা হয়, ‘মামা’। ম আছে।
১৩- ইস্পেনিস ভাষায় বলা হয়, ‘মাদ্র্’। ম আছে।
১৪- ইতালি ভাষায় বলা হয়, ‘ম্যড্র’। এখানেও ম আছে।
তবে কিছু ভাষা এমনও রয়েছে যেখানে ‘ম’ নেই কিন্তু এসব ভাষার সংখ্যা খুবই কম। যেমন ফিলিপিনো ভাষায় মাকে বলা হয়, ‘নানায়’ এবং তুর্কী ভাষায় বলা হয়,‘এন্নে’। যেখানে ম নেই।
এছাড়া আমাদের সমাজে মাকে আরও বলা হয়, আম্মা জান, মাম্মী বা মোম। এখানেও দেখা যাচ্ছে ‘ম’ আছে।
সুতরাং এত প্রিয় ব্যক্তিত্বের ভালবাসাকে যেন আমরা একটি দিনের সীমাবদ্ধ করে না ফেলি। মা শব্দটি যেমন অতি প্রিয় শব্দ তেমনি যেন তা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়। কৃত্রিমতা নয়; ভালবাসতে হবে হৃদয়ের একান্ত গহীন থেকে। ভালবাসতে হবে একদিনে জন্য নয়: বরং প্রতিদিন ও সার্বক্ষণিক ভাবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখক : সম্পাদক, আলোর খেয়া, হেফাজত সমাচার, খতমে নবুওয়াতের খবর