মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিলেন ইউএনও
হাবিব হাসান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ
মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের ২৫ নং বরবর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের দুইটি ভবনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ৪র্থ শ্রেণি কার্যক্রম পরিদর্শন করতে হবে, এমনই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লাস নিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শরীফুল আলম তানভীর। তিনি উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বরবর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখেছেন, এখানে ভবন আছে দুইটি। ভবনের মধ্যে অধিকতর পুরোনো একাডেমিক ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কর্মরত শিক্ষকেরা জানান, ১৯৪৫ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন ভেঙে চার কক্ষবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৮৭ সালে। বাকি একটি ভবনের একটি ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয়। বিদ্যালয়ের একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের চতুর্থ শ্রেণির একটি ক্লাস নিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বরবর্তা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান জেনে তা পরিদর্শনে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ে ক্লাস নেন ইউএনও। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয় জীর্ণ ভবন পরিদর্শনে আসেন ইউএনও মোঃ শরীফুল আলম তানভীর। এ সময় ৪তুর্থ শ্রেণির একটি কক্ষে কথা বলতে বলতে ক্লাস নেওয়া শুরু করে দেন ইউএনও। তার ২০ মিনিটের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অজানা বিষয়ে জানতে ও শিখতে সক্ষম হয়। পরে তিনি সরেজমিনে বরবর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখেন, চার কক্ষবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের একটিতে শিশু শ্রেণি, অপর দুটিতে তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে। অপর কক্ষ বিদ্যালয়ের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় সবগুলো কক্ষের দেয়ালে ও ছাদে ফাটল ধরেছে। পিলার ও ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান ভূইয়া জানান, সম্প্রতি পাঠদান চলাকালে ভবনটির ছাদ থেকে পলেস্তার খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে। কেউ হতাহত না হলেও এ ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩০৭ শিক্ষার্থী ও এগারো জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ঝুঁকি নিয়ে
বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোঃ শাহাদাৎ হোসেন, সামিয়া আক্তার,মোসাঃ মারিয়া বলে, শ্রেণীকক্ষে আমরা আতঙ্কে থাকি। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি না। বড়বর্তা সরকারী পাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ নেন। বরবর্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ইমরান ভূইয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আকস্মিক পরিদর্শনে শ্রেণীকক্ষের সংকট থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শ্রেণী -কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তিনি দেখে গেলেন। তাঁর আসা মানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগতমান আরও বৃদ্ধি পাওয়া। তার ক্লাস করার কারণে শিক্ষার্থীরা খুবই আনন্দিত। তার ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়জোনীয়তা উল্লেখ করে ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল আলম তানভীর এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সিরাজদিখান উপজেলা ইউএনও মোঃ শরীফুল আলম তানভীর বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঝে মধ্যে পরিদর্শনে যেতে হবে। এর পাশাপাশি সরকারি বিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিকমতো চলছে কি-না তা তদারকি করাও আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ববোধ থেকেই পরিদর্শনে গিয়ে দেখলাম পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান চলছে। ভবনগুলো নতুনভাবে নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভীতি কাটাতে মনে হলো কিছুক্ষণের জন্য বাচ্চাদের একটু পাঠদান করি। আমার ক্লাসে তারা যে আনন্দ পেয়েছে তাতে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছি।