মোংলার আলোচিত শিল্পপতি টি,এ ফারুকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ
আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট):
তালুকদার আখতার ফারুক ওরফে টি,এ ফারুক। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। মোংলা বন্দর শহরের বহুল আলোচিত একজন শিল্পপতি। বহু বিবাহের নায়ক এ শিল্পপতির বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কখনও নিজে বিয়ের পিড়িতে বসছেন আবার কখনও অধিনস্থ কর্মচারীদের বিয়ে করিয়ে নারীদের রক্ষিতা বানিয়ে রাখছেন তিনি। এসব নিয়ে এবার ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে নিজ স্ত্রীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। আলোচিত এ টি,এ ফারুকের লালসার শিকার হয়েছেন সুমি বেগম (২৫) নামে দুই সন্তানের জননী। উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের এ নারী’র সঙ্গে বছর দুয়েক আগে টি,এ ফারুকের পরিচয়। এরপর নানা প্রলোভন দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ওই নারীর সংসার ভেঙ্গে তিনি তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর টি,এ ফারুক শহরের শ্রম কল্যাণ রোড়স্থ তার জলসাখানা শতরুপা বরফকলের দ্বিতীয় তলার ভবনে ওঠেন স্ত্রী সুমিকে নিয়ে। এখানে বছর দেড়েক ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু সুমির চোখে ধরা পড়ে স্বামী টি,এ ফারুকের বহুনারীগামিতা। আর এ নিয়ে হঠাৎ করে শুরু হয় পারিবারিক দ্বন্ধ। এক পর্যায় স্ত্রী সুমিকে তাড়াতে সুচতুর স্বামী শুরু করেন শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এমনকি গত শনিবার দুপুরে তীব্র তাপদহের মধ্যে স্ত্রী সুমিকে রুম থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় সুরাহ হয় এবং ঘরে ওঠে সুমি। সর্বশেষ সোমবার রাত ১০টায় ২৫-৩০ জনের একদল ভাড়াটে গুন্ডা সুমির ঘরে হানা দিয়ে তাকে মারধরসহ সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে ঘন্টাব্যাপী হুলুস্থল কান্ড ঘটে শতরুপা বরফকলে। রাতেই প্রতিবেশীরা সুমিকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। স্বামী টি,এ ফারুকের ভাড়াটে গুন্ডাদের মারধরে স্ত্রী সুমি এখন আহত হয়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টি,এ ফারুকের (তালুকদার আখতার ফারুক) স্বাধীনতার পর বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবেড় ইউনিয়ন থেকে মোংলায় এসে প্রথমে চাল-গমের ছোট খাট ডিলার ব্যবসা শুরু করেন। পরে এরশাদের জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসলে তার ভাগ্য খুলে যায়। এ আমলে তার উত্থান শুরু হয়। রাজনৈতিক এ দলটির উপজেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বিগত কয়েক দশক। এ সময় তিনি বিপুল পরিমান অর্থ বৃত্তের ও জমির মালিক বনে যান। এক চেটিয়াভাবে খাদ্য পরিবহন, ঠিকাদারী, বার্জ (নৌযান) ব্যবসা করতে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য বিভাগের পরিবহন ঠিকাদারী ব্যবসার অন্তরালে তিনি কালোবাজারী করে আঙ্গুল ফুঁলে কলাগাছ বনে যান। এসব ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বরফ কল ও আবাসিক হোটেলসহ নানা ব্যবসা করতে থাকেন। জাতীয় পার্টি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক বছর পরে কয়েক দফায় তিনি রাজনৈতিক খোলসও বদল করেছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাকে মাঝে মধ্যে দেখা যায়। তার প্রথম স্ত্রী সরবরিয়া খানম দরিয়া এবারের অনুষ্ঠিতব্য মোংলা উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হবেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অবশ্য তালুকদার আখতার ফারুকও এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌরসভার চেয়ারম্যান (মেয়র) হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে ভোটে পরাজয় বরন করেন।
বর্তমানে টি এ ফারুক পেশায় একজন আপাদমস্তক শিল্পপতি। কিন্তু তার নেশা মোবাইল ফোন ও দালালদের মাধ্যমে নারীদের সুকৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এরপর নিজের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। এভাবে মুসলিম,হিন্দু ও খৃষ্টান ধর্মের অসংখ্য নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছেন টি,এ ফারুক। নারীদের সাথে সম্পর্ক করতে দিন রাত তার মোংলা পৌর শহরের শ্রম কল্যাণ রোডের জলসাখানায় চলে বেহায়াপনা। এনিয়ে অতিষ্ঠ তার এলাকার আশপাশের লোকজন। নারীদের সাথে প্রেম অতঃপর ভোগ বিলাসের এই কাজে সহযোগিতায় তার নিযুক্ত আছেন ১৫/২০ জন দালাল সিন্ডিকেট রয়েছে। মোংলাসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অসহায় গরীব পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের বাড়ি-জমিসহ মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা নিয়ে আসেন লম্পট ফারুকের জলসাখানায়। সেখানে চলে উদ্যম গান বাজনা। গান আর নাচের তালে সারারাত চলে বেহায়াপনা। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তার ভাড়াটে মাস্তান বাহিনী দিয়ে দমন করা হয় তাদের। প্রশাসনও রহস্যজনকভাবে চুপ থাকায় লম্পট ফারুকের এই অপকর্ম চলে আসছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ব্যবসায়ীর সাবেক কয়েকজন ষ্টাফ জানান, টি,এ ফারুক ব্যবসা ও রাজনীতির অন্তরালে একজন কুখ্যাত লেডি কিলার। যে নারীকে একবার তার মনে ধরে তাকে ছলে বলে কৌশলে যে করে হোক তিনি বিয়ে করে পরে তালাক দিয়ে ত্যাগ করেন। এ সংক্রান্ত বহু ঘটনা মোংলার গন্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা শালিস করে সুরাহা করেছেন।
শতরুপা বরফকল ও হোটেল সিঙ্গাপুর এবং চৌরাঙ্গীসহ একাধিক স্থানে তার এমন ঘাঁটি রয়েছে। টি,এ ফারুকের বয়স ৭০এর ঘরে। তবুও চোখ আর মনের নেশায় অসংখ্য অসম বিবাহের নায়ক হয়ে উঠছেন তিনি। তার বহু নারীগামিতা নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা থাকলেও টি,এ ফারুক সঠিক বিবাহের তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
তার সর্বশেষ স্ত্রী সুমি আক্তার জানান, এ পর্যন্ত তার অন্তত অর্ধ শতাধিক বিবাহের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। তবে বর্তমানে তার কতজন স্ত্রী রয়েছেন তা তিনি জানেন না। আরও শতাধিক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখনও কোন নারী তার চোখে একবার পছন্দ হলে তিনি যে করেই হোক সে নারীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করে পরে তালাক দিয়ে ছেড়ে দেন।
টি,এ ফারুকের হোটেল ম্যানেজার সোহাগ বলেন, তার বস যখন যা নির্দেশ করেন তখন তাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তার কোন দোষ নেই। তবে টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সুমি আক্তারকে সে ম্যানেজ করে ছিলেন বলেও জানায় সে।
এ প্রসঙ্গে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম জানান, টিএ ফারুকের সর্বশেষ স্ত্রী সুমিকে নিয়ে পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে টি,এ ফারুকের অফিসের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী মোংলা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এইচ এম দুলাল বলেন, টিএ ফারুকের বরফ কলে দিনরাত উঠতি বয়সের নারীদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠছে। এতে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয় প্রশাসনের নজরদারীসহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী।
টি,এ ফারুকের এসব অপকর্ম বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, নারীদের প্রতি তার এমন অসম্মান সামাজিকভাবে নৈতিক অবক্ষয় ও দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
টি,এ ফারুকের বিরুদ্ধে স্ত্রী সুমির করা অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করে মোংলা থানার ওসি কে,এম আজিজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে টি,এ ফারুককে (তালুকদার আখতার ফারুক) একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার দুপুরে তার সিঙ্গাপুর হোটেলে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে রুমের দরজা বন্ধ করে দেন।