মোংলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর

প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২২
আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট):
“আশ্রায়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার” স্লোগানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে মোংলায় ৫৫ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার পেলেন ভূমি ও পাকা ঘর। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে ২শতাংশ জমিসহ এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সীমিত সম্পদেই সবার ঠিকানা করে দেবে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে গণভবণন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সারাদেশে এসব পরিবারের মধ্যে জমি ও গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভূমি ও ঘরের দলিল হাতে পেয়ে উপকারভোগী পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসময় তিনি জানান, দুঃস্থ মানুষগুলোর ঘর যাতে মানসম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদারকি করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা ঘর নির্মাণে অতুলনীয় কাজ করেছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তারই ধারাবাহিকতায় মোংলায় ৫৫টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরুপ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মাছমারা-নারকেলতলা এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এ ঘরগুলো। এসব ঘর গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-ক্যানেলের পাড়ে। উপজেলার চাঁদপাই, সোনাইলতলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের মাঝখানে পড়েছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি।
ঘরে রয়েছে বিদ্যুৎ-সংযোগও। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, প্রত্যেক ঘরের সাথে তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংক ও টিউবওয়েলও।
তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফায় জমিসহ ঘর পাওয়া হাসিনা বেগম (৪৮) বলেন, আমি পরের বাড়ি কাজ করে খাই। কোনোদিন চিন্তাও করিনি জমিসহ একটি নতুন পাকা ঘর পাব। খুব খুশি ও আনন্দ লাগছে ঘর পেয়ে। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে এবং তাঁর জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি।
করিমন বেগম (৫০) বলেন, আমি ভিক্ষা করে খাই। সে টাকা দিয়ে ভাড়া থাকতাম এর-ওর রান্নাঘর ও বারান্দায়। তাদের ভাড়ার টাকা ঠিকমতো দিতে না পারলে নামিয়ে দিত। কাঁদতে কাঁদতে নেমে যেতে হতো। আমি ঘর পেয়ে খুব খুশি, যা বলার মতো নয়। এমন ঘর করার সামর্থ্য তো কোনোদিন হতো না। সরকারের প্রতি শুকরিয়া, সরকার ভালো থাকুক দোয়া করি।
শারিরীক প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম (৪১) বলেন, আগে ভাড়া থাকতাম, অনেক কষ্ট হতো। এখন ঘর পেয়ে খুব খুশি, ধন্যবাদ ইউএনও স্যার ও প্রধানমন্ত্রীকে।
এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এখানকার দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। আর, তৃতীয় পর্যায়ে নতুন করে দেওয়া হয়েছে আরও ৫৫টি ঘর। এরই মধ্যে এসব ঘরে উঠে পড়েছেন বাসিন্দারা। সমাজের খুবই নিচু স্তরের অসহায় মানুষগুলোর চোখে-মুখে এখন প্রশান্তির ছাপ। ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সবাই। তাই এত খুশির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি তাঁরা।
এদিকে এর আগে যাঁরা আশ্রয়ণের জমিসহ ঘরে উঠেছেন, তাঁরাও এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, মূল আয় থেকে এখন আর ঘরভাড়া দিতে হয় না তাঁদের। বেঁচে যাওয়া সে টাকা দিয়েই তাঁরা তাদের ঘরের পাশের জমিতে সবজির চাষাবাদ ও পশুপালনও করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেয়া অনুদানের টাকা দিয়ে নতুন নতুন কাজের মধ্য দিয়ে আয় বাড়িয়ে এখন সুখে-শান্তিতেই আছেন তাঁরা।
আশ্রয়ণের পুরানো বাসিন্দা ইউসুফ শেখ ও মো. মনির জানান, তাঁদের ঘরের চারপাশে সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করছেন। আগের মতো আর কষ্ট নেই। ঘরের নারীরাও সেলাই মেশিন দিয়ে এবং হাতের কাজ করে আয় করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁদের জমি ও ঘর দিয়েছেন, তাই খেয়ে পরে ভালো আছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, আমরা আশ্রয়ণবাসী প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি।
ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদানের উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসাবে উপজেলায় ৫৫টি পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়েছে। ঘরের কাজ অনেক ভালো হয়েছে, নতুন ঘরে উপকারভোগীরা অনেক খুশি। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মোংলা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মিসেস কামরুন্নাহার হাই, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাফর রানা, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সুনিল কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন প্রমুখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সকল জনপ্রতিনিধি,সাংবাদিকবৃন্দ ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



error: Content is protected !!