সন্ত্রাসীদের টার্গেট আ’লীগের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী’: সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা

প্রকাশিত: ৩:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২১

কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।

সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের মানুষ। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের টার্গেট সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, আওয়ামী সমর্থক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক। দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে হত্যা, মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।সংসদীয় কমিটির সভাপতির বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ওই এলাকায় অত্যাচার-নির্যাতনের মূলে রয়েছে পুলিশের তালিকাভুক্ত মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ও শীর্ষ চরমপন্থী জাহাঙ্গীর কবির লিপটন। সে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুর্বাচারা গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। লিপটন এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। গত দুই বছরে সে ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড দরবেশপুরের মামুন অর রশিদ মামুন মিলে ক্ষমতাসীন যুবলীগের ৪ নেতাকে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তাদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে এলাকার সাধারণ মানুষ ও যুবলীগের নেতা-কর্মিরা মানববন্ধন ও সমাবেশও করেছে।অভিযোগে বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লিপটন জড়িয়ে পড়ে চরমপন্থি সন্ত্রাসী দলে। নাম লেখায় গণমুক্তিফৌজে। সে অস্ত্র নিয়ে শহরে মহড়া, চাঁদাবাজি এমনকি বন্দুকযুদ্ধে নেতৃত্বে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিএনপি সরকার আমলে জেলা বিএনপির দুইজন শীর্ষ নেতা ও তখনকার সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি ও হত্যায় মেতে ওঠে। এখনো নেটওয়ার্ক তৈরি করে অপহরণ ও চাঁদাবাজি এবং হত্যার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। ঠিকাদার জামু, নাসির উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন ওই সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, লিপটনের এখন অন্যতম ব্যবসা হচ্ছে অস্ত্র ব্যবসা। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিমাসে অস্ত্রের চালান নিয়ে আসে। বর্তমানে লিপটনের টার্গেট ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক। লিপটনের ঘনিষ্ট প্রভাবশালী আত্মীয় স্বাধীনতা বিরোধী আনিসুর রহমান ঝন্টু ছাড়াও গোলাম সরোয়ার, হবিবার রহমানসহ আরো অনেকেই এখন লিপটনকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। লিপটনের আরেক ভাই বাইরন প্রশাসনের কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল আলিম, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের যুবলীগের আহবায়ক রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নেতা হাবিবর রহমান ও ইমনকে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে জেলা ও উপজেলা যুবলীগের নেতা-কর্মিরা সমাবেশ ও মানববন্ধন করে লিপটন ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানায়।অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইন শৃংখলা বাহিনী জোরদার অভিযান শুরু করলে লিপটন ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করে দেশে নানা অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। এরপর অর্থের জোরে সব কিছু ম্যানেজ করে ২০১৩ সালে সে দেশে ফিরে এসে আবারও চরমপন্থী সামাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে জনমনে ব্যাপক আতংক বিরাজ করছে। এ কারণে ওই এলাকায় সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে। তাই অবিলম্বে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে কুষ্টিয়া ও তার পাশ্ববর্তী চার জেলার মানুষের আতঙ্ক দূর করার জন্য সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসী লিপটনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর। সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।




error: Content is protected !!