সরকারী প্রজ্ঞাপনে আদালত বন্ধ থাকলেও কলাপাড়ায় প্রভাবশালীরা অপকৌশলে আদালতের নির্বাহী আদেশ বাগিয়ে নিচ্ছে॥
রাসেল কবির মুরাদ,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি; সারাদেশে করোনা সংক্রামক পরিস্থিতিতে সকল আদালত বন্ধ রয়েছে। বিশেষক্ষেত্রে জনস্বার্থে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত ভ্রাম্যমান আদালত, নির্বাহী
ম্যাজিষ্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের পাশাপাশি সরকারী গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে চলছে সুপ্রিমকোটের্র অধীনস্ত ভার্চুয়াল আদালতসমূহ।
মানবিক বিবেচনায় হাজতী আসামীর জামিন শুনানি হচ্ছে। দেশের কোন আদালতে নতুন কোনো মামলা দায়ের ও আদেশ না হলেও কলাপাড়া নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে রহস্যজনক ভাবে মিলছে প্রভাবশালীদের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আদেশ। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও বরিশাল
বিভাগীয় কমিশনার বললেন বিষয়টি তাঁদের জানা নেই তাঁই বিষয়টি দেখা হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বললেন,বিশেষ পরিস্থিতির কারনে ১৪৪ ধারার একটি মামলা তাঁকে আমলে নিতে হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় এবং তাদের মধ্যে মামলা চলমান থাকায় শান্তি, শৃংখলা রক্ষার জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে অন্য দু’টি মামলার বিষয়ে তিঁনি জানেননা। শান্তি শৃংখলা রক্ষার
জন্য তিঁনি এ আদেশ দিতেই পারেন।
কলাপাড়া নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে করোনা সংক্রামক পরিস্থিতির মধ্যে জুন মাসের ১ম ও শেষ সপ্তাহে এমপি-১৮/২০, এমপি-২০/২০ ও এমপি ২১/২০ পৃথক
তিনটি নতুন মামলা দায়ের করেন পৌরশ্রমিকলীগ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রকি,বিশিষ্ট স্বর্ন ব্যবসায়ী সুধন্য কর্মকার গোসাই ও প্রভাবশালী ইউসুফ মিনা।
কলাপাড়া নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু হাসনাত মো: শহিদুল হক ১৪৪, ১৪৫ ধারার এ মামলা সমূহ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট তহশিলদারদের দখলস্বত্ত্ব বিষয়ে প্রতিবেদন ও ওসি কলাপাড়াকে শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য বলেন। এতদসংক্রান্ত আদেশ থানা ও তহশিল ৫ জুন, ২২ জুন ও ২৫ জুন প্রাপ্ত হওয়ার পর আদালতের নির্দেশিত ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
কলাপাড়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো: মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে সুধন্য কর্মকার গোসাই ও ইউসুফ মিনা’র বর্নিত তফসিল এলাকায় ১৪৪
ধারা জারি করা হয়েছে। মামলার উভয় পক্ষকে এ সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছে,যাতে শান্তি শৃংখলা বিঘœ না ঘটে।
কলাপাড়া সদর তহশিলদার আ:জব্বার বলেন,আদালতের নির্দেশে পক্ষদ্বয়কে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদের কাজগপত্রসহ উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
গত ২৫জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে এমপি-১৮-২০ মামলার শুনানীতে অংশ নিয়েছেন জেলা বারের সভাপতি, সম্পাদকসহ প্রভাবশালী একাধিক আইনজীবী। ফৌজদারী
কার্যবিধির ১৪৪, ১৪৫ ধারার এ মামলার শুনানী ও আদেশ শুনতে আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিল পক্ষ-বিপক্ষের কয়েকশ মানুষ। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের
কথা উভয় পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে মোতায়েন রাখতে হয়েছে পুলিশ।
পুলিশের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করে বিরোধপূর্ন সম্পত্তিতে আদালতের এ সংক্রান্ত স্বার্থসিদ্ধির আদেশের কথা জানিয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কলাপাড়া
উকিলপাড়ার স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নির্বাহী আদালত বন্ধ থাকাকালীন নতুন মামলা করতে এলে তাদেরকে আদালত বন্ধ আছে বলা হয়। কিন্তু তারা আইনজীবী ও
তাঁদের সহকারীকে শুধু মামলা লিখে দিতে বলেন এবং পেশকারের মাধ্যমে সব গুছিয়েই তারা এসেছেন বলে জানানোর পর চেম্বার থেকে মামলা লিখে আইনজীবীর
স্বাক্ষর সহ তাদের দিয়ে দেয়া হয়। এরপর আইনজীবী না গেলেও মোটা অংকে পেশকারের মাধ্যমে আদেশ হাসিল করেন তারা।
পটুয়াখালী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মতিউল ইসলাম চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জিএম সরফরাজ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত বন্ধ আছে। আমরা শুধুমাত্র জামিন যোগ্য অপরাধের মামলা
গুলো মানবিক কারনে শুনছি। যে মামলা গুলো ইতিপূর্বে দায়ের হয়েছে। নতুন কোন মামলা নেয়া হচ্ছে না।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার অমিতাভ সরকার বলেন, আদালত বন্ধ থাকার মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি জানা নেই,বিষয়টি তিঁনি দেখবেন।