মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।
অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠা দেলোয়ার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব এখলাশপুর গ্রামের ছায়েদল হকের ৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। কয়েক বছর আগে বাবা ছায়েদল হকের মৃত্যুর পর সংসারের অভাব গোছাতে বড় দুই ভাইয়ের সাথে সাথে দেলোয়ারও যোগ দেয় সিএনজি চালক হিসেবে।সিএনজি চালিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া দেলোয়ার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালের দিকে এখলাশপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরের হাত ধরে যোগ দেয় যুবলীগের রাজনীতিতে। যুব রাজনীতির শেকড় গজাতে জহিরের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ছবি তুলে সখ্যতা গড়ে তোলে দেলোয়ার। এক পর্যায়ে দেলোয়ার হয়ে উঠে ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলো ও জহিরের আস্থাভাজন কর্মী।
২০১৪ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দেলোয়ার স্থানীয় উঠতি বয়সের যুবকদের সংগঠিত করে গড়ে তোলে কিশোর গ্যাং। তার গ্যাংয়ের প্রধান সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকায় কাজ করে বাদল ও কালাম। দেলোয়ার ওই কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এলাকায় গড়ে তোলে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিসহ এক অপরাধ সম্রাজ্য।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দিনের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর গ্যাং প্রধান দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা এখলাশপুরের অলিগলি থেকে শুরু থেকে বেগমগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি মাদক ব্যবসা, মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়সহ তাদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। এই কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে মোহাম্মদ আলী ও রবিন নামের দুই যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানেও এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত ছিলো বলে দাবি স্থানীয়দের।এলাকাবাসী জানায়, গত দুই সেপ্টেম্বর এখলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড খালপাড় এলাকার নুর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর স্বামীকে বেঁধে রেখে তার চোখের সামনেই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য বাদল, মো. রহিম, মো. আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সাজু , সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব, আরিফ, রহমত উল্যাসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
ধর্ষণে ব্যর্থ হলে তারা ওই গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে নির্যাতন করতে থাকে এবং ভিডিও ধারণ করে নির্যাতিতার স্বামীর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের ধারস্থ হওয়ার চেষ্টা করলে কিশোর গ্যাং প্রধান দেলোয়ার এবং বাদলদের অস্ত্রের মহড়ায় এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ওই দিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্থানীয়দের আরও আতংকিত করে তোলায় অসহায় গৃহবধূর পরিবার আর প্রশাসনের দারস্থ হওয়ার সাহস করেনি। এভাবেই একের পর এক বৃহৎ অপরাধ চক্র গড়ে তোলেন দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা।রাজনৈতিক সম্পৃকতা জানতে কৃষক লীগ সভাপতি আলমগীর কবির ভূঁইয়া আলোর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি।দেলোয়ারসহ কিশোরগ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।