সিলেটের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী ইকরাম উদ্দীন এর সফলতা ও সংগীত জীবন!

প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২১

এম.মুজিবুর রহমানঃ বিনোদন রিপোর্টঃ নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকেঃ
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ ও অলি আউলিয়ার পূণ্যভূমি বৃহত্তর সিলেট বিভাগ৷
বাংলা সাহিত্য ও লোক সংস্কৃতির জন্যও সিলেট বিভাগ অন্যতম এবং পাহাড়, নদী হাওর বাওর ও চায়ের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চলটি দেশ বিদেশে অতি সুপরিচিত। এ অঞ্চলের মাটিতেই জন্মেছেন অনেক লোক কবি, সাধক এবং বাউল সম্রাট ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম সহ অসংখ্য লোকজ সাংস্কৃতিক গুণী ব্যক্তিত্ব। এসব লোক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ যুগ যুগ ধরে তাদের লেখনি ও কন্ঠের মাধ্যমে এ অঞ্চল ও বাংলার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য যেমন বিশ্বের নিকট তুলে ধরেছেন, তেমনি মানুষকে বিনোদন দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে আসছেন। এসব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণ তৈরি করে গেছেন তাদের সুযোগ্য অসংখ্য শিষ্য ও উত্তরসূরী । বর্তমানে তাদের অনেকে বেঁচে না থাকলেও তাদের উত্তরসূরী সুযোগ্য শিষ্যগণ তাদের শিক্ষা ও ধ্যান-জ্ঞানকে প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিকট প্রচার করে যাচ্ছেন। বাউল সম্রাট ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিম এঁর এমনই একজন সুযোগ্য শিষ্য বাউল সিরাজ উদ্দিন,যার হাত ধরে বর্তমান প্রজন্মের এমনই একজন গুণী শিষ্য ও বাউল শিল্পী ইকরাম উদ্দীন এর মতো অসংখ্য গুণী বাউল শিল্পী দেশ বিদেশে আন্তর্জাতিক ভাবে দেশের সুনাম অর্জন করছেন৷
বাউল ইকরাম উদ্দীন বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড় বেষ্টনী ও চায়ের অঞ্চল পানিউম্দা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী
পানিউম্দা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন, তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন৷
মিডিয়াকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ছেলে বেলায় তিনি যখন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করতেন তখন ৩য় শেণী থেকেই জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি সংগীতের প্রেমে পড়ে যান৷ পরে পাঠশালা শেষ করে স্থানীয় রাগীব রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন, আর্থিক দৈন্যতার জন্য তার স্কুলে আর লেখাপড়া হয়ে উঠেনি।
পরবর্তীতে মৌলভী বাজার সদর উপজেলার কোছার মহল হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সেখানে ১৫ পাড়া কোরআন শরিফ হিফজ (মুখস্থ করেন) এবং ফুলতলী ছাহেব বাড়ীতে ১৯৯৮/৯৯ সনে ক্বারীয়ানা পাস করে মাদরাসাতে লেখাপড়ার ইতি টানেন৷ এর পর ২০০০ সালে বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিম এঁর অন্যতম শিষ্য সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার নূর উত্তম পুর গ্রামে যান, সেখানে তার ওস্তাদ
বাউল সিরাজ উদ্দিনের হাত ধরে তিনি শিষ্যত্ব গ্রহণকাল থেকে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বাউল সাধনা করে আসছেন। যেখানেই গানের আসরে গান গাওয়ার ডাক পড়ে সেখানেই তিনি ছুটে যান এবং বাউল গান গেয়ে হাজারো ভক্ত শ্রোতাদের বিনোদন দিয়ে মাতিয়ে তোলেন৷ বর্তমানে দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে দেশের লোক সংস্কৃতিকে তোলে ধরছেন বিশ্বের দরবারে৷ তিনি গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন তার সৌভাগ্য হযেছে ২০০১ সালে অতি কাছথেকে বাউল সম্রাট অর্থাৎ তার দাদা ওস্তাদ শাহ্ আব্দুল করিমের সান্নিধ্য লাভ করেছেন৷ স্কুল জীবন থেকেই তিনি শাহ্ আব্দুল করিম ও ক্বারী আমির উদ্দীন সহ বাউল সাধক গনের গানের প্রতি তিনি আকৃষ্ট ছিলেন৷ এর মধ্যে বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের রচিত প্রেমও ফুলের গন্ধে” বন্ধুরে কই পাবো সখি গো” এছাড়া শ্যামল ও সুন্দরও রূপ ও সইগো ” এ ধরনের গানের পাগল করা গানের কথা ও সুরে তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠতেন, এবং তার সুরেলা কন্ঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গান গেয়ে দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন এখনো এই গেয়ে যাচ্ছেন৷ তার কন্ঠে গাওয়া ১ম এ্যালবাম “মহু রাজার খেলা” ২০০৫ সালে ভিসিডি রেকর্ডিং এর মাধ্যমে সিলেট, হবিগঞ্জ সহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া জাগে তার সর্বমোট শতাধিক এ্যালবাম বাজারে রয়েছে৷ এখন যদিও আধুনিক যূগের সভ্যতায় বাজারে সেই আগের মতো ক্যাসেট এ্যালবাম নেই, তবে সোস্যাল মিডিয়া,ইউটিউব, ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গান ব্যাপক ভাইরাল হচ্ছে৷ তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী এবং দেশ বিদেশে বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে গান করে থাকেন৷ বিশেষ করে বিটিভি,বৈশাখী টিভি,মাই টিভি,সময় টিভি,মাছরাঙা টিভি ইউকে এটিএন বাংলা সহ অনলাইন বিভিন্ন চ্যানেলে গান করছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে৷
এযাবৎ তিনি লোক সংস্কৃতিতে ২৭টি সম্মাননা স্মারকে ভূষিত হয়েছেন৷ বিশেষ করে জাতীয় লোকসংগীত সম্মাননা স্মারক ঢাকা, ভারতের কলকাতা বর্ধমান বাউল সংগীত উৎসব সম্মাননা, বাংলাদেশ শিল্পীকলা একাডেমী সিলেট সম্মাননা স্মারক সহ দেশের লোক সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি উল্লেখিত স্মারক লাভ করেছেন৷ এর মধ্যে তিনি অতিথি বাউল শিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথমে সফর করেন ইন্ডিয়া (ভারত) কলকাতা,পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে মাল এশিয়া, মিশর সহ বিভিন্ন দেশে৷ তিনি বলেন আমার মাতৃভূমির প্রানের গান বাউল গান বা লোকসংস্কৃতি৷ এই লোকসংস্কৃতিকে
আমার স্বপ্ন সুস্থ ধারার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে তোলে চাই, এছাড়াও তিনি অসংখ্য গান রচনা করে যাচ্ছেন৷ তার লেথা “সিলেট হইলো লালে লাল” সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচনা করেছেন৷ এই গুণী বাউল শিল্পী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে স্বপরিবারে বসবাস করছেন এবং লোকসংস্কৃতিতে বিশ্বের দরবারে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন৷




error: Content is protected !!