রাজবাড়ীর মহাসড়কে রাজত্ব করেছে মাহিন্দ্র।।

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২০

মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ

রাজবাড়ীর ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কে রাজত্ব করেছে মাহিন্দ্র, যদিও একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। অদৃশ্য কারণে বন্ধ হচ্ছে না মহাসড়কে মাহিন্দ্রার চলাচল। ফলে প্রায়ই ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি রাজবাড়ীর খানখানাপুর বড় ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপায় মা ও মেয়েসহ মাহিন্দ্রার ৫ যাত্রী নিহত হন। এরপরও থেমে নেই মাহিন্দ্রার চলাচল। প্রতিনিয়তই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি রাজবাড়ী সদর উপজেলায় বাস ও মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ পাঁচজন নিহত হন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানাপুর গ্রামের মোস্তফার ইটভাটা নামক জায়গায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় আরো তিন যাত্রী আহত হন।

নিহতরা হলেন- রাজবাড়ী সদরের আহলাদিপুর গ্রামের নায়েব আলীর স্ত্রী রাশেদা বেগম (৪০) ও তার মেয়ে তাসলিমা খাতুন (১৬), ফরিদপুরের ঝিলটুলির আব্দুর রফিকুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন রিফাত (২৫), গোয়ালন্দের তুরাফ শেখপাড়ার আরশাদ আলী শেখের ছেলে মোস্তফা শেখ (৫২) ও গোয়ালন্দের চর মাইটকুড়া গ্রামের মৃত জয়নাল শেখের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন (৪৫)।

হাইকোর্টের নিষেধ অমান্য করে হাইওয়ে পুলিশের সামনেই চলছে মাহিন্দ্রা। চালকরা বলেছেন হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা গাড়ি চালাচ্ছেন।

তবে ম্যানেজ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে থানা পুলিশ। তারা বলছেন প্রতিদিনই মহাসড়ক থেকে মাহিন্দ্রাসহ অবৈধ যানবাহন আটক করা হচ্ছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না তাদের।

রাজবাড়ীর আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে মোট ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কের আওতায় পড়েছে। এরমধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার, গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এবং রাজবাড়ী বড়পুল পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার। এই ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই অবৈধ যানবাহন।

বিআরটিএ’র রাজবাড়ী সার্কেলের সহকারি পরিচালক লিটন বিশ্বাস বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে দেশের ২১ জেলায় মাহিন্দ্রাসহ অবৈধ ছোট যানবাহন মহাসড়কে চলতে পারবে না। তারমধ্যে রাজবাড়ীতে রয়েছে ২৮ কিলোমিটার। রাজবাড়ীতে যে সকল মাহিন্দ্রা চলাচল করছে তার কোনটিরও হালনাগাদ নিবন্ধন ও রুটপার্মিট নেই। ফলে এ সকল যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ।

সরেজমিন রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ডের অপর পাশে মহাসড়কের ওপর সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছে প্রায় ৪০-৫০টি মাহিন্দ্রা। মাহিন্দ্রাগুলোর সিরিয়াল ঠিক করে দিচ্ছেন মালিক পক্ষের মনোনীত ব্যক্তি।

কথা হয় বেশ কয়েকজন মাহিন্দ্রা চালকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা আমাদের কে জানান, হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব যানবাহন মহাসড়কে চলছে। ম্যানেজের বিষয়টি মালিক ও শ্রমিক পক্ষের লোকজন দেখাশোনা করেন বলেও জানান তারা।

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ পারভেজ আমাদের কে বলেন, প্রশ্নই আসে না। মাহিন্দ্রাসহ যে কোনো ধরনের অবৈধ যানবাহন যাতে মহাসড়কে চলতে না পারে সেজন্য আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। প্রতিদিন আমরা মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন আটক করে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। কোনোভাবেই অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না।

দৌলতদিয়া বাসস্ট্যান্ড মহাসড়কের পাশে মাহিন্দ্রা স্ট্যান্ডের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের দেখার বিষয় না।

হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজের অভিযোগ অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের কে বলেন, ওটা তাদের বক্তব্য। আমাদের নয়। এ ধরনের কাজের সাঙ্গে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমরা প্রতিদিন মহাসড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন আটক করছি।




error: Content is protected !!