নাজমুল হুদা,নন্দীগ্রাম(বগুড়া)প্রতিনিধি; বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ লাঞ্ছিত ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নন্দীগ্রাম। রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার পিতা মরহুম ডা. শফিউল আলম বুলু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিল। এছাড়াও তিনি ৩নং ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার চাচা শহিদুল আলম দুদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিল। তিনি বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ৪ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ করে। রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ ২ বার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ১ বার জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ ২ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথমবার বিদ্রোহী প্রাথর্ী হয়ে ও দ্বিতীয় বার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সবসময় লালন পালন করে থাকেন রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ ও তার পরিবার। তার ভাই শামছুজ্জোহা জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত হয়। নন্দীগ্রামে ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। যারা অন্যদল থেকে এসেছে। তাদের মধ্যে অন্যরকম একতা গড়ে উঠেছে। এমন একজন হচ্ছে জুলফিকার আলী ফোক্কার। ২৯ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে একটি চায়ের দোকানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ চা খেয়ে লোকজনের সাথে কথা বলছিল। এমন সময় ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী ফোক্কার তার লোকজন নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ’র সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহকে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন দলীয় কার্যালয় হতে বিকেল সাড়ে ৩ টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তার পূর্বে জুলফিকার আলী ফোক্কার ও কুন্দারহাটে একটি মিছিল বের করেছিল। তার অভিযোগ রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুটক্তি করেছে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ। তিনি বলেন আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। সবসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন পালন করে আসছি। জুলফিকার আলী ফোক্কার জামায়াত-বিএনপি পরিবারের একজন। সে নিজেও বিএনপিতে যুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে আওয়ামী লীগে এসে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছে। মূলত সে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে না। ওই ঘটনায় জুলফিকার আলী ফোক্কারের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ মামুন। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। সে জামিন হওয়া নিয়ে হয়তো ব্যস্ত রয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহকে লাঞ্ছিত করা ঠিক হয়নি। সে এটা অন্যায় কাজ করেছে। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল চন্দ্র মহন্ত বলেন, বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগের ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছে কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন এরা রাজপথে ছিল না। এরা সবসময় ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিপক্ষেই অবস্থান নিয়ে থাকে। জুলফিকার আলী ফোক্কার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। সেই ব্যক্তি রেজাউল আশরাফ জিন্নাহকে লাঞ্ছিত করেছে। এমন হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতারা আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ঙ্কর। তাদের ঠেকাতে আমরা ত্যাগী নেতাকর্মীরা একত্র হয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম শেখ বলেন, হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতারা ত্যাগী নেতাকর্মীদের সহ্য করতে পারে না বলেই এ লাঞ্ছিতর ঘটনা ঘটিয়েছে। এরা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর। এদেরকে ঠেকাতে হবে। আমরা হাইব্রিড ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছি। সেজন্য জেলা আওয়ামী লীগের সহযোগিতা কামনা করছি। ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু তাহের বলেন, জুলফিকার আলী ফোক্কারের পরিবার জামায়াত-বিএনপির সাথে যুক্ত। তারা আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। ২০০১ সালে আমিও তার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সুবিধার জন্য সে আওয়ামী লীগে এসে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছে। সে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ভালোচোখে দেখে না। সে শুধু নিজের স্বার্থের জন্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এদের দ্বারা ভালো কিছু আশাকরা যায় না। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তাকে লাঞ্ছিত করতে এরা দ্বিধা করেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ লাঞ্ছিত ঘটনায় নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গত ৩১ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে নন্দীগ্রামে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। ওই প্রতিবাদ সভা থেকে হাইব্রিড আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। এরপর যদি কোন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে লাঞ্ছিত করা হয় তার উচিৎ জবাব দেয়া হবে। নন্দীগ্রামের মাটিতে হাইব্রিড আওয়ামী লীগের স্থান দেয়া হবে না। এ প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।