নির্বাচনের আশায় মোংলা পৌরবাসী

প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০

আলী আজীম,মোংলাঃ

মেয়াদ উত্তীর্ণের প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও দেশের অন্যতম প্রথম শ্রেণির মোংলা পোর্ট পৌরসভার এখনও পর্যন্ত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন খবর নেই। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় ৫ বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হলেও আরো অতিরিক্ত প্রায় ৫ বছর ধরে মেয়র ও কাউন্সিলররা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর বিএনপি’র নেতা কর্মী হওয়া সত্বেও প্রভাবশালী মহলের নেপথ্যের ছত্রছায়ায় নির্বাচন ছাড়াই মেয়র ও কাউন্সিলরা অতিরিক্ত ক্ষমতা ভোগ দখল করে চলেছেন বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে নানা ক্ষোভ, হতাশা আর গুঞ্জন।

মেয়াদ উত্তীর্ণ এ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগের দাবিসহ তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নাগরিক সচেতন সমাজ ও মোংলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশাসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী দেশের অন্যান্য স্থানের সাথে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে মোংলা পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো. জুলফিকার আলী মেয়রসহ বিএনপি’র অধিকাংশ নেতা-কর্মী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

মোংলা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উচ্চ আদালতে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার মামলাগুলো খারিজ করে দেয়া হয়। এতে অনেকটাই এখানকার পৌর নির্বাচনের জটিলতা নিরসন হয়। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এখানে ওয়ার্ড সিমান্ত জটিলতা নিরসন করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়।

মোংলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আল মামুন জানান, গত মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন যাচাই বাচাই শেষে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেখান থেকে গেজেট পাঠানোর পর নির্বাচন কমিশনের ভোট অনুষ্ঠানের পরবর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে।

এদিকে,মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র বিএনপি নেতা জুলফিকার আলীর মেয়াদ প্রায় ৫ বছর আগে উত্তীর্ণ হওয়ায় অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগ করে দ্রুত নির্বাচন দেয়া, মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ মেয়রের গ্রেফতারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মোংলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সহকারী কমান্ডার মো. ইস্রাফিল ইজারাদার।

গত মঙ্গলবার(১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল ইজারাদার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র বিএনপি নেতা জুলফিকার আলীর মেয়াদ প্রায় ৫ বছর আগেই উত্তির্ণ হয়েছে। সে সময় তিনি তার লোকদের দিয়ে সীমানা সংক্রান্ত বিরোধে উচ্চ আদালতে মামলা করে নির্বাচন স্থগিত করে ক্ষমতায় থেকে যান। কিন্তু সে মামলা খারিজ হওয়ার পর তিনি আবারো তার সমর্থকদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে যাতে মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন না হতে পারে সেজন্য তিনি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।

বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরাজি বেনজির আহম্মেদের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে থাকলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে সে মামলা প্রত্যাহার হওয়ার পর ওয়ার্ড সীমানা নির্ধারনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তও স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গেজেটের জন্য প্রেরণ করেছে। এ গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হলেই এখানে ভোট অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ গেজেট পাশ হতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান।

এদিকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এ পৌরসভায় কোন নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে এদের মধ্যে এক ধরনের গা’ছাড়া ভাব ও অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মোংলার সাধারণ সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার স্বার্থে সব জটিলতা নিরসন করে দ্রুত মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন দেয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। নিয়মিত নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এক নায়কতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সেটাতো কোনভাবেই গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পন্থা নয়। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে অন্তত প্রায় ৫ হাজার নতুন এবং তরুণ ভোটার হয়েছে। নতুন ভোটার হয়ে পৌর নির্বাচনের ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ আছে তাদের মধ্যে। তার মতে, মেকানিজম করে ষড়যন্ত্র করে জনপ্রতিনিধি থাকতে চাওয়া কোন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পন্থা নয়। এটি হচ্ছে অন্ধকারের পথ। নির্বাচনের মাধ্যমেই এই অন্ধকারের পথ থেকে পরিত্রাণ চায় মোংলা পৌরবাসী।




error: Content is protected !!