অব্যবস্থাপনা ভয়ে রোগীদের হাসপাতাল থেকে পলায়ন,পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বললেন বিশেষঙ্ঘরা।
ডাঃএস,এম ইব্রাহীম।
দিন দিন হাসপাতাল থেকে করোনার রোগী পালানোর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। ঠিকমত ডাক্তার, নার্সরা আসেন না। ওষুধ পান না। এমন অভিযোগ রয়েছে অনেকের। হাসপাতাল থেকে কেন করোনার রোগী পালাচ্ছেন জানতে চাইলে দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা.এবিএম আবদুল্লাহ সাংবাদিককে বলেন, হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগীরা নানা অভিযোগ করছেন। আমার কাছে অনেক রোগী এসে অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা এতই খারাপ যে এর থেকে বাসায় বসে চিকিৎসা নেয়া অনেক ভালো। রোগীরা আরো বলেছেন, হাসপাতালে যেমন কাঙ্খিত সেবা নেই তেমন নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স।
ওষুধ না পাওয়াসহ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। ধারণা করা যেতে পারে যে, মনস্তাত্ত্বিক কারনেই অনেক করোনা রোগী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, অনেক রোগী মৃদ উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার পাশের বেডের রোগীটি মারা গেছেন এবং লাশ অনেকক্ষণ পড়ে আছে। এ অবস্থায় ভয়ে তখন রোগী পালাচ্ছে। এসব বিষয়গুলোতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সিরিয়াস নজর দিতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন সাংবাদিককে বলেন, আস্থার অভাব। হাসপাতালে যারা করোনা রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন তাদের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে রোগীরা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তার, নার্স ঠিকমত আসছেন না। আবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই অসহায়ত্ব ও নিঃসঙ্গ বোধ করেন। তখন চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তারা। এছাড়াও এই রোগটা রোগীর কাছে ভয়ের কারণ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া রোগীকে খুঁজছে পুলিশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬৮ জন পালিয়েছেন। তাদের মধ্যে ডিওআরবি (নিজ দায়িত্বে ছুটি নিয়ে)-এর মাধ্যমে বেশির ভাগ হাসপাতাল থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন সাংবাদিককে বলেন, এ পর্যন্ত করোনা সন্দেহের ৩ জন রোগী ইউনিট থেকে পালিয়েছে। কেন পালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আতঙ্কিত হয়ে পালাচ্ছে। কতক্ষণ আর গেট বন্ধ করে রাখা যায়। এ বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, রোগীরা অনেকে নিজ দায়িত্বে ছুটি নিয়ে চলে যান। আগে পালালেও এখন খুব কম।
বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়ার কিছু তথ্য আসছে। অনেকে হয়তবা ভয় পেয়ে আতংকিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এখনো যেহেতু নেগেটিভ আছে, ফলে এখানে থাকার দরকার নাই। বাসায় গেলে ভাল লাগবো। অনেক পজিটিভ রোগীর পাশের কেউ শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসে মারা যাচ্ছে, তখন সে আতংকিত হয়ে পড়ে যে, আমার পাশের রোগী মারা গেছে। এখানে থাকলে হয়ত আমিও মারা যাব।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ডাক্তার-নার্স সবাই আছে এবং চিকিৎসা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ড. আয়শা বলেন, যারা পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের আনার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়াদের ডাটাবেজ আছে। সেক্ষেত্রে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু কাজ করছে। তাদের ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। কভিড-১৯ হাসপাতালগুলো থেকে রোগীরা যাতে বের হতে না পারে, সেজন্য কাড়াকড়ি করা হচ্ছে।