বাহুবলে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের পর মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা।। শ্বশুর দেবর পলাতক
বাহুবল (হবিগঞ্জ প্রতিনিধি) প্রতিনিধি।। বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ফদ্রখলা গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীর বিষাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তানিয়া আক্তার (২২) নামের ওই গৃহবধূর স্বজনদের অভিযোগ, তার দেবর জানে আলম জোরপূর্বক ধর্ষণের পর নির্যাতন ও মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে বাহুবল নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী ও থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে গৃহবধূ তানিয়ার মৃত্যুর পর দাফন কাফন না করেই দেবর সহ শশুর বাড়ীর সকলেই আত্মগোপন করেছেন।
জানা যায়, বহুবল উপজেলার মির্জাটুলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের কন্যা তানিয়া আক্তারকে প্রায় তিন বছর আগে বিয়ে দেয়া হয় পাশ্ববর্তী ফদ্রখলা গ্রামের হারুনুর রশিদের প্রবাসী পুত্র শাহ আলমের কাছে। বিয়ের বছর পর শাহ আলম সৌদি আরবে চলে যান। আর সামিউল ইসলাম সামি নামের পুত্র সন্তানকে নিয়ে তানিয়া শশুরালয়েই বসবাস করতে থাকেন।
এদিকে গত করুনার আগে প্রবাস থেকে দেশে আসেন তানিয়ার দেবর জানে আলম। তিনি আসার পর করুনার কারণে আটকা পড়েন দেশে।
এ সুবাদে জানে আলমের লুলপ দৃষ্টি পড়ে ভাবি তানিয়ার উপর। দুই সন্তান ও স্ত্রী থাকার পরও জানে আলম প্রায় সময়ই পাশবিক নির্যাতন চালাতো ভাবি তানিয়ার উপর।
এ ব্যাপারে তানিয়া প্রথমে শশুর- শাশুড়ীকে বিষয়টি অবগত করলেও তারা তেমন কর্ণপাত করেননি। এক পর্যায়ে তানিয়া তার মা ও ফুফুকে বিষয়টি জানান এবং ঘটনার ১৫ দিন আগে পিত্রালয়ে এসে আটকে যান।
এ প্রেক্ষিতে শশুর শাশুড়ী তার পিত্রালয়ে এসে তানিয়াকে বুঝিয়ে গত শুক্রবার বিকালে তাদের সাথে নিয়ে যান।
নিহত তানিয়ার ফুফু মিনারা খাতুন উপরোক্ত তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার একদিন পর শনিবার দিনগত রাতে দেবর জানে আলম দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে তানিয়াকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় জানে আলমের স্ত্রী শশুর শ্বাশুড়ীকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে তানিয়ার রুমে গিয়ে তার স্বামীকে হাতে নাতে ধরে ফেলেন।
এসময় শশুর শ্বাশুড়ি জানে আলমকে কিছু না বলে তানিয়ার উপর চড়াও হন এবং তানিয়া যাতে বিষয়টি অন্য কাউকে জানাতে না পারে এ জন্য তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বাথরুমে আটকে রাখেন।
তানিয়ার ভাই তানভীর ইসলাম জানায়, পরদিন রবিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জানে আলম তার স্ত্রী অসুস্থ বলে একটি সিএনজি নিয়ে যেতে ফোনে বলে তানভীরকে। সে সিএনজি নিয়ে দেখে তার বোন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
তখন তানিয়াকে উদ্ধার করে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হবিগঞ্জ রেফার্ড করা হয়। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সোমবার ভোরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তানিয়ার শশুর হারুনুর রশিদ মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে জানান সিলেট নিয়ে যাওয়ার পথে তানিয়ার মৃত্যু হয়।
তানিয়ার মামা ওয়াহিদ মিয়া জানান, মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত না করিয়ে লাশ নিয়ে জন্য শশুর বাড়ির লোকজন জোর চেষ্টা করেন। এরপরও তিনি কোতোয়ালী থানার মাধ্যমে ময়না তদন্তের পর লাশ নিয়ে আসেন এবং সোমবার রাত একটায় তানিয়ার লাশ পিত্রালয়ে এনে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করেন। তবে শশুড় দেবর জানাজায় অংশ না নিয়ে আত্মগোপন করেন।
মঙ্গলবার বেলা ২ টায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী ও থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বাহুবল মডেল থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান জানান, মামলা হয়নি, তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজন সাথে কথা বলেছি। মামলার পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।