কুষ্টিয়া যুবলীগ নেতা রাশিদুল আটকের পর মুকুলের সহযোগী বানানোর অপচেষ্টা
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার প্রস্তাবিত কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা রাশিদুলকে আটকের পর তাকে মুকুলের সহযোগী বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে একটি মহল। অন্যদিকে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখে র্যাব -১২ সিপিসি-১ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর গাফফারুজ্জামানের নেতৃতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ রাশিদুলকে আটক করেন।
তার আটকের বিষয়টি নিয়ে গত ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ সকাল ১১ টার সময় আটককৃত রাশিদুলের স্ত্রী রিজিয়া খাতুন তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে রিজিয়া খাতুন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামের এক সময়ের গণমুক্তি ফৌজের বিতাড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিপটন ও মামুন আমার স্বামী রাশিদুলকে র্যাব দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে জীবন বাঁচাতে লিপটন ও মামুন দীর্ঘদিন ধরে সোর্স হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বে তারা যুবলীগ নেতা আলীমকে অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিল যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছিল। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুবলীগ নেতাকর্মীরা আরোও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে এটাও বলেন, রাশিদুল প্রস্তাবিত কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মেম্বার পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিলে তার সাথে দ্বন্দ্ব বাধে রাতুলপাড়া গ্রামের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আনিসুর রহমান ঝন্টুর সাথে। ঝন্টূর খালাতো ভাই চরমপন্থী লিপটনকে দিয়ে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটায়। তার নামে দেয়া হয় একাধিক মামলা। ভবানীপুর বাজারের উপর থেকে প্রকাশ্যে স্থানীয় জনগণের সম্মুখে তার পকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পিস্তল, রাতের আধারে বাড়িতে এনে পুনরায় অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হয়।
রিজিয়া খাতুনের সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ১লা জানুয়ারি ২০২১ তারিখে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ৩১ তারিখ সকালে রিজিয়া খাতুনের সংবাদ সম্মেলনের কথা শুনে ঐদিন বিকেলে তালিকাভুক্ত চরমপন্থী সন্ত্রাসী ও সোর্স জাহাঙ্গীর কবির লিপটন উক্ত সংবাদ সম্মেলনের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বিবৃতি প্রদান করেন। বর্তমানে রাশিদুলকে নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে যে, সে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী সংগঠন গনমুক্তিফৌজের শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিনুল ইসলাম মুকুলের সহযোগী। উল্লেখ্য আজ থেকে ১৫/১৬ বছর পূর্বে কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য, ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। টেন্ডারবাজি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা মাথা কাটা সহ প্রতিদিনই ছিল কুষ্টিয়া জেলার নিত্যদিনের সঙ্গী।
২০০৬ সাল থেকে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা কুষ্টিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে প্রায় সকল বাঘা বাঘা সন্ত্রাসীরা নিহত হয়। থেমে যায় রক্তের হলি খেলা। বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলাতে কোন চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন নেই বললেই চলে, থাকলেও তারা আর কখনোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না বলে ইতিপূর্বের পুলিশ সুপাররা বিভিন্ন জনসমাবেশ তারা বলেছিলেন।
উক্ত এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গণমুক্তিফৌজ দল থেকে বিতাড়িত লিপটন ও মামুন দুজন এখনো জীবিত আছে এবং তারা কুষ্টিয়াতে বসেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্র ছায়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দালালিসহ নানান অপকর্ম করে আসছে। এভাবে ওই দুইজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর তথ্যমতে কুষ্টিয়া জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কাজ করলে জনগণ প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে, সেই সাথে নষ্ট হবে তাদের ভাবমূর্তি।
অন্যদিকে আলামপুর গ্রামের সাধারণ বাসিন্দারা প্রতিবেদককে বলেন, আমিনুল ইসলাম মুকুল একসময় গণমুক্তিফৌজের প্রধান ছিলেন ঠিক, কিন্তু তার কার্যক্রম আজ থেকে ১৫ বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সে ১৫ বছর ধরে দেশ-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাচ্ছেন, তাকে জড়িয়ে রাশিদুল সম্পর্কে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে তা নিছক একটি সাজানো নাটক মাত্র। কারণ ওই সময় রাশিদুল ছিলেন দেশের বাইরে তার সাথে আদৌ দেখা হয়েছে কিনা তাও সন্দেহ রয়েছে।
রাশিদুলের সাথে গণমুক্তিফৌজ বা মুকুলের কোন সম্পর্ক নেই, সামাজিক দলাদলির বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে একটি নাটক সাজানো হয়েছে। যার হিসাব কসলেই বেরিয়ে আসবে কোন সময় থেকে গণমুক্তিফৌজের উত্থান হয়েছিল, বর্তমানে এখন গণমুক্তিফৌজ নামে কোন দল আছে কিনা এটাও প্রশাসনের জানা উচিত।
আলামপুর বাসি এটাও বলেন, আমিনুল ইসলাম মুকুল একজন জনদরদি ও সমাজসেবক। তিনি অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন প্রতিনিয়ত। আলামপুরে তার নিজ বাড়ির সামনে তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির একটি মাদ্রাসা, উক্ত মাদ্রাসার ভিতরে ঢুকলে মনে হয় বেহেশতে ঢুকেছি। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া সদর আসনের মাননীয় এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে বর্তমান কুষ্টিয়া এখন শান্ত। তার কঠোর নেতৃত্বে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে সকল সন্ত্রাসী বাহিনী। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই এজন্যই যে, কুষ্টিয়া জেলাকে আজ তিনি সন্ত্রাস মুক্ত করেছেন। যদি সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ থাকতো তাহলে তার উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটতো এটাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
অন্যদিকে বিলুপ্ত গণমুক্তিফৌজ বাহিনীর নাম প্রকাশ করে রাশিদুলের সাথে মুকুলের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি সদয় দৃষ্টি কামনা করেন উক্ত অঞ্চলের সাধারণ জনগণ ।