৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী কমরেড নলিনী ব্যানার্জীর অবদান অবিস্মরণীয়

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার- আমাদের কাছ থেকে একে একে চিরবিদায় নিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সহ মুক্তিযোদ্ধারা। তাই আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ও তাদের নাম অক্ষুণ্ন রাখতে এবং ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতে অবশ্যই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা সহ মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের অবদান মূল্যায়ন করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া একান্ত প্রয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায়,হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌরসভাধীন সরাপনগর(গঞ্জেরহাটি)গ্রামের বাসিন্দা তৎকালীন ন্যাপ (মোজাফ্ফর) নেতা ও কুলিন ব্রাহ্মণ কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী’,দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যে অবদান রেখেছিলেন, নিম্নে তা-ই ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হইল।১৯৭১ ইং সনে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক কমরেড কৃপেন্দ্র কিশোর বর্মন এর নেতৃত্বে ৫১ জন সদস্য, এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ যামিনী কুমার দাস এর নেতৃত্বে কমান্ডার ইলিয়াছ চৌধুরী, কমান্ডার ফজলুর রহমান চৌধুরী, কমান্ডার গিয়াস উদ্দিন ও ন্যাপ ( মোজাফ্ফর) নেতা কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী এর নেতৃত্বে আজমিরীগঞ্জ গরুর বাজার মাঠে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পর্যায়ক্রমে ট্রেনিং প্রাপ্ত মোট ৮০ থেকে ৯০ জনের মধ্যে কমান্ডার গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা কমরেড কৃপেন্দ্র কিশোর বর্মনের নেতৃত্বে ওলিউর নবী বর্ধন, রফিক আহমেদ, ডাঃ যামিনী কুমার দাস ও কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী, মোট- ১৮ টি রাইফেল, ২ টি রিভলভার ও ২ বাক্স গুলি আজমিরীগঞ্জ থানা থেকে উদ্ধার করেন। পর কমান্ডার গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ যামিনী কুমার দাস এর বাসভবনের সামনে থেকে উপরোল্লিখিত নেতৃবৃন্দের উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও শুকনো খাবার ট্রেনিং প্রাপ্ত প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন। পর সবার পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ যামিনী কুমার দাসের জ্যেষ্ঠ পুত্র জয়ন্ত কুমার দাস তাদের প্রত্যেকের গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দেয় ও উপস্হিত নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তক্রমে তাদের সবাইকে হবিগঞ্জে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর নিকট প্রেরণ করা হয়।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্হানে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পরে আপামর বাঙ্গালী জনতা । নানা এলাকা থেকে আজমিরীগঞ্জে আসতে শ্ররু করে নারী- পুরুষ, শিশু, আবাল, বৃদ্ধ ও বনিতা। উল্লেখিত নেতৃবৃন্দগণ অর্থ তহবিল সংগ্রহ করা সহ স্হানীয় পাতিল বাজারে একটি লঙ্গরখানার আয়োজন করেন। এক সময় পাকহানাদার বাহিনী আসার খবরে সকলেই এদিক ওদিক ছুঁটতে থাকে। পুরো আজমিরীগঞ্জ এক সময় জনশূন্য হয়ে পড়ে। আজমিরীগঞ্জ সদরের বাজার সংলগ্ন কালীপ্রসন্ন চৌধুরী (কালীবাবু)’র বাড়িতে আশ্রয় নেয় কয়েকশত পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। পাকসেনারা ওই বাড়ির বড় দালনটিতে ক্যাম্প স্হাপন করে ও সামনের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন স্হানে মাটি খনন করে ব্যাংকার তৈরি করে। দূরে শত্রুপক্ষের উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে সীমানা দেয়ালের নানাস্থানে ফুটো করে রাখে। এদিকে কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী কুুুলিন ব্রাহ্মণ হিসেবে সব সময় সাদা ধূতি পরিধান করতেন। সুনামগঞ্জের শাল্লার ছোটআব্দা নামক গ্রামে নিজ স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়েকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে আসার পথে একদল সাহসী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সহিত সাক্ষাৎ হয়, তারা উনাকে ধূতি পরনের পরিবর্তে আকাশী রংয়ের একটি লুঙ্গি দেন। কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী অনর্গল উর্দূতে কথা বলতে সক্ষম বিধায় পাক বাহিনীর অবস্হান, পরিকল্পনা ও বিভিন্ন খবরাখবর এনে দেয়ার অনুরোধ করেন ওই মুক্তিযোদ্ধা দলটি। কালীবাবুর বাড়ি থেকে পাকসেনারা চলে গেছে, এ খবর পেয়ে ক্যাম্প সংলগ্ন নিজ বাড়িতে আসেন উনি। হাড়িতে রান্না করার এক পর্যায়ে হঠাৎ খবর এলো, পাকসেনারা আসছে। রান্না ফেলে রেখে বাড়ির আঙ্গিনায় আসতেই তাদের অর্থাৎ পাকসেনাদের সহিত সামনাসামনি। অনর্গল উর্দূ ভাষায় কথা বলতেে পারার কারণে পাকসেনারা কমরেডকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যান, সরাপনগর( গঞ্জেরহাটি) গ্রামের কালীবাবুর মালিকাধীন রাইস মিল চত্বরে। পাকবাহিনীর সদস্যরা সংলগ্ন এলাকার
পুকুরপাড়, সমীপুর, জগৎপুর ও কুমারহাটি গ্রামের ঘরবাড়িতে অগ্নি সংযোগের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ” ক্যায়া ইয়ে গাওয় ও কা সবিলোগ হিন্দু হ্যায়? ” উনি উত্তরে বললেন, নেহি ইয়ে সব গাওয় কা সবি লোগ মুসলিম হ্যায়। আরও অনেক কথা আলোচনার পর বিশ্বাস হলে, এ সব গ্রামের ঘরবাড়িতে আর অগ্নিসংযোগ করেনি পাকবাহিনী। কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী, পাক হানাদার বাহিনীর অবস্হান ও পরিকল্পনার সংবাদ একটি মক্তিযোদ্ধা দলকে দিতে বদলপুরের পাহাড়পুর বাজারে যান। যথারীতি খবরও পৌঁছান। এর পরদিন একটি গানবোট ও ৪ টি স্প্রীডবোট নিয়ে ওই বাজার ও সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করতে যায় পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা।কমরেড নলিনী কান্ত ব্যানার্জী স্প্রীডবোটে থাকা পাক সেনা অফিসারকে নানাভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পাহাড়পুর থেকে বিদায় করে দেন। এর ঘন্টা খানেক পরই ওই এলাকার মাকালকান্দি গ্রামের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ সহ নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটান বর্বর হানাদার বাহিনী। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পাকসেনাদের ক্যাম্প সংলগ্ন সরাপনগর (গঞ্জেরহাটি) গ্রামের বাসিন্দা কটু দাসের স্ত্রী মেঘার মাকে কালীবাবুর বাড়ির সেনাক্যাম্পে আটক করে পাকহানাদার বাহিনী। তার উপর বর্বর নির্যাতন চালায় তারা। খবর পেয়ে সেনাক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে কাকাইলছেওয়ে চিকিৎসা সহ নিরাপদ স্হানে নিয়ে যান ওই কমরেড। এর একমাস পর একই গ্রামের বাসিন্দা লক্ষীকান্ত কুরির স্ত্রী সোমালতি কুরি’কে পাকসেনারা আটকের চেষ্টা করে।একই সময় তাকেও উদ্ধার করে নিরাপদ স্হানে নিয়ে যান ওই কমরেড। এ ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা দলের নিকট পাকহানাদার বাহিনীর অবস্হান পর




error: Content is protected !!