বানিয়াচঙ্গে প্রসিদ্ধ মহল্লা “শরীফখানী”
হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) এর নবম উত্তরসূরী হযরত সৈয়দ ইয়াসিন (রহঃ)
তরফের লস্করপুর (ফরিদপুর) হতে স্থান পরিবর্তন করে বানিয়াচং উপজেলার সাগরদিঘির পূর্ব পাড়ে
গমন করে বসতি স্থাপন করেন। সাগরদিঘির পূর্বপাড়ে সৈয়দ ইয়াসিন (রহঃ) এর মাজার শরীফ
পরিত্যক্ত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে।
––––––––––––––– সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর –––––––––––––––
শরীফ খানী প্রসিদ্ধ মহল্লা “শরীফ খানী” হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৪ নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের অন্তভর্ূক্ত এলাকা। সিলেট এবং তরফ রাজ্য বিজয়ী হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট বিজয়ের পর তরফ রাজ্য বিজয় লাভ করেন। ১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দে মুড়ারবন্দ নামক স্থানে তরফ রাজ্যের শাসন কর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়ে বসতি স্থাপন করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে অছিয়ত করেছিলেন, তাহার দেহ মোবারক পূর্ব-পশ্চিমে দাফন কার্য সম্পন্ন করার জন্য কিন্তু তাহার সঙ্গি সাথীরা এই অছিয়ত না মেনে শরিয়তের বিধান মতে মাজার উত্তর দক্ষিনে দাফন কার্য সম্পাদন করেন। হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) এর দাফন সম্পন্ন করে সঙ্গি সাথীগণ ৪০ (চল্লিশ) কদম দূরে আসার পূর্বেই মাজার শরীফ আপনা আপনি ঘুরে পূর্ব-পশ্চিমে হয়ে যায় (ইয়া সুবাহান আল্লাহ)। হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) নবম অধস্তন পুরুষ সৈয়দ শাহ ইয়াছিন (রহঃ)। হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) এর ভাই সৈয়দ সিরাজ উদ্দিন (রহঃ) এর পূত্র সৈয়দ মুসাফির (রহঃ), সৈয়দ খোদাবন্দ (রহঃ), সৈয়দ মিকাইল (রহঃ) ও সৈয়দ শাহ মুসা (রহঃ)। সৈয়দ শাহ ইয়াছিন (রহঃ) পিতার কাছ থেকে তরফ রাজ্যের উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত হন। সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে পরবর্তী কালে তাদের বংশধরদের মধ্যে যে কলহ বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, তার বিবরণ পূর্বে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সৈয়দ আদম (রহঃ) এর পূত্র সৈয়দ মোহাম্মদ কুদ্দুছ (রহঃ), সৈয়দ শাহ হাছন (রহঃ) এর পূত্র সৈয়দ মোহাম্মদ মুসিম (রহঃ)। তিনি ছিলেন খুব বিলাসি, জাঁকজমক প্রিয় ও অত্যাচারী ছিলেন বলে জানা যায়। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বহু লোক তরফের হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলাধীন মিরপুর ইউনিয়নের অন্তভর্ূক্ত লস্করপুর (ফরিদপুর) হতে আসেন এবং তথা হতে স্থান ত্যাগ করে মোহাম্মদ মুসিম (রহঃ) এর পূত্র সৈয়দ ইয়াছিন (রহঃ) প্রথমে বাহুবল উপজেলার লামাতাসী ইউনিয়নের চন্দনিয়া যান। সেখান থেকে সৈয়দ ইয়াছিন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলাস্থ ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের অন্তর্গত সাগর দিঘির পূর্ব পাড়ে গমন করে বসতি স্থাপন করেন। সৈয়দ মোহাম্মদ মুসিম (রহঃ) এর ০৫ (পাঁচ) পূত্র-সৈয়দ মুসা (রহঃ), সৈয়দ মোহাম্মদ (রহঃ), সৈয়দ আনিস (রহঃ), সৈয়দ মনওর (রহঃ) ও সৈয়দ ইয়াছিন (রহঃ)। হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বানিয়াচং উল্লেখ যোগ্য উপজেলা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। সেই বানিয়াচং উপজেলা এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং, যা ছিল লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখানে বাস করতেন রাজ্যের ১৮টি রাজ বংশধর গণ যা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ ও উত্তরাংশে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সে যুগে উপজেলায় নৌ যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের। হবিগঞ্জ জেলা শহর হতে প্রায় ১৩ (তের) মাইল উত্তর-পশ্চিমে ঐতিহাসিক বানিয়াচং গ্রাম অবস্থিত। বর্তমানে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হয়েছে। হযরত (মদনী) সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালার (রহঃ) এর নবম উত্তরসূরী বংশধর হযরত সৈয়দ ইয়াসিন (রহঃ) তরফের হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর (ফরিদপুর) হতে স্থান পরিবর্তন করে বানিয়াচং উপজেলাস্থ সাগর দিঘির পূর্ব পাড়ে বসতি স্থাপন করেন। সাগর দিঘির পূর্ব পাড়স্থ সৈয়দ ইয়াছিন (রহঃ) এর মাজার শরীফ বিদ্যমান রয়েছে কিন্তু এ বংশের লোকজন স্ব-শিক্ষিত থাকায় তারা পীর মুর্শিদি এবং কিছু বংশধর বিভিন্ন স্থানে উচ্চ পদস্থ সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়নি। স্থানীয় কিছু কুচক্রি মহল নিজেদের পারিবারিক পরিচয় জাহির করার উদ্দ্যেশে বিভিন্ন ইতিহাসকে বর্তমান বিভিন্ন নতুন ইতিহাস রচিয়তার মাধ্যমে বিকৃতি করা প্রয়াস পাচ্ছেন। তরফ অঞ্চলে সৈয়দ বংশীয়দের উপর অনেক লেখকই বিভিন্ন বই পুস্তকের মাধ্যমে সৈয়দ বংশীয়দের ইতিহাস লিখে যাচ্ছেন। এদিকে এই বংশের লোকজন স্ব-শিক্ষিত থাকায় ঐ বংশের মাজার শরীফ তদারকি না করার ফলে মাজারগুলো পরিত্যক্ত রয়েছে এবং ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। জনশ্রুতি আছে যে, তাঁর মাজার শরীফে গভীর রাতে এক রকম আলোক রশ্মি দেখা যেত এবং মাজারে আতর গোলাপের সুগন্ধে মোহিত হয়ে উঠত বলে উক্ত এলাকার প্রবীন লোক মুখে শুনা যায়। হযরত সৈয়দ ইয়াছিন (রহঃ) এর পূত্র হযরত শাহ সূফি সৈয়দ ইয়াকুব আলী (রহঃ) এবং সৈয়দ শাহ ইয়াকুব আলী (রহঃ) এর পুত্র হযরত শাহ সূফি সৈয়দ আইয়ুব আলী (রহঃ), হযরত শাহসূফি সৈয়দ জকু মিয়া (রহঃ), হযরত শাহসূফি ভালু মিয়া (রহঃ) বংশধর গণের মাজার সাগর দিঘির পূর্ব পাড়স্থ বিদ্যমান আছে এবং শতশত আশেকান ভক্ত বৃন্দরা মাজার জিয়ারতে আসেন। এদিকে হযরত সৈয়দ ইয়াছিন (রহঃ) এর ৪র্থ উত্তরসূরী বংশধর হযরত শাহসূফি সৈয়দ ওয়াজি আলী (রহঃ) সাগর দিঘির পূর্ব পাড় হতে একই উপজেলার ২ (দুই) কিলোমিটার দূরে ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়নের প্রসিদ্ধ শরীফখানী মহল্লায় বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে এ বংশে বহু কৃতি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। শরীফ খানী সাহেব বাড়ির বংশধরদের মধ্যে অনেকে অলৌকিক ক্ষমতায় সাধু দরবেশ ছিলেন এবং জ্ঞানে গুণে আধ্যাত্মিক সাধনায় সর্বকালেই প্রশংসার দাবী রাখেন বলে খ্যাতি রয়েছে। অপরদিকে শরীফ খানী সাহেব বাড়ি এলাকায় শায়িত মাজার সৈয়দ ওয়াজি আলী (রহঃ) সাহেব এর মাজার শরীফে শত শত আশেকান ভক্ত বৃন্দরা জিয়ারতে আসেন। কিন্তু মাজারটি রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত রয়েছে।
তথ্য সংগ্রহে : (শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত-পূর্বাংশ ও উত্তরাংশ), তরফের ইতিহাস এবং শরীফ খানী সৈয়দ বংশের বাংলা নসব নামা হতে প্রাপ্ত।
তথ্য সহযোগিতায় : লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর (দাউদনগর), সৈয়দ মোহাদ্দিছ আলী ও সৈয়দ মোফাজ্জল আলী (শরীফ খানী)।