‘করোনা নয় ক্ষুধায় তাদের ভয়’! লক ডাউনের ১ম দিনে আটককৃত রিক্সা ফেরত পাওয়ার আশায় রিকশাচালকরা
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার সামনের সড়কে অবস্থানরত রিকশা চালকরা রিকশা ফেরত পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছিল ৩০- ৪০ জন রিকশাচালক। গত বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনিস ও ওবায়দুলের দুটি রিকশা শহরের থানা মোড় এলাকা থেকে জব্দ করে পুলিশ। এ রকম অন্তত ৩৫টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা ও ভ্যান জব্দ করে মডেল থানার ভেতরে নেওয়া হয়। তাঁদের অপরাধ, কঠোর লকডাউনে তাঁরা আইন ভঙ্গ করেছেন।
আনিস ও ওবায়দুল দুজনই বলছিলেন, পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল, আসরের নামাজের পর ছেড়ে দেবে। কিন্তু কেন জানি পুলিশ আর ছাড়ছে না। থানা-পুলিশের এক কর্মকর্তা তাঁদের জানিয়েছেন, ‘বড় স্যারের অনুমতি না মেলায় ছাড়া হচ্ছে না, সন্ধ্যার পর ব্যবস্থা হতে পারে।’ সদর উপজেলার খাজানগর এলাকার বাসিন্দা রিকশা চালক আনিস জানালেন, সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে আছে। সকাল নয়টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। ৯০ টাকা আয়ও হয়েছিল। সাড়ে ১১টার দিকে থানা মোড় থেকে পুলিশ তাঁর রিকশা জব্দ করে থানায় নেয়।
রিকশা চালক ওবায়দুল শেখ বললেন, তাঁর পরিবারে একমাত্র ছোট ভাই ও মা ছাড়া আর কেউ নেই। বাড়িতে একটি গরুও পালন করেন তিনি। একই সময়ে তাঁরও রিকশা জব্দ করে থানায় নেয় পুলিশ। এর আগে মাত্র ৪০ টাকা আয় করেছেন। বাড়িতে ফোন করে জানান যে তাঁর রিকশা জব্দ হয়েছে। মোহাম্মদ মুসা নামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘প্রথম রোজার দিন ঘরে থাকলে চলে না, তাই বের হয়েছিলাম। আইনের কথা শোনায় পুলিশ। দরিদ্র–অভাবী মানুষের কথা কেউ শোনে না।’ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত তাঁদের রিকশাগুলো ছাড়া হয়নি। রিকশাচালকেরা থানার আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন নিজ নিজ রিকশা ফেরত পাওয়ার আশায়। উপার্জনের একমাত্র উপায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের চোখে-মুখে কেবল হতাশা আর বিষণ্নতা।
বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবির বলেন, ‘সরকারের ঘোষিত লকডাউন আমরা কঠোরভাবে পালন করছি। লকডাউন অমান্য করে যাঁরা গতকাল রিকশা বের করেছেন, তাঁদের রিকশা জব্দ করা হয়েছে। আজও রিকশা জব্দ করা হচ্ছে।’ তবে এসব রিকশা কখন ফেরত দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।