কুয়াকাটা পৌর মেয়রের নিজস্ব অর্থায়নে ৪কোটি টাকার প্রকল্প, পৌরবাসীর দৃষ্টি বিশাল অংকের টাকার রহস্য কি !

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১

রাসেল কবির মুরাদ ,পটুয়াখালী প্রতিনিধি ঃ কুয়াকাটা
বেড়িবাঁধের বাইরে সৈকত লাগোয়া কোন প্রকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের অনুমতি নেই
কর্তৃপক্ষের। এরপরও হাতে নেয়া হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪ কোটি টাকার
প্রকল্প। কুয়াকাটা পৌরবাসীর জিজ্ঞাসা মেয়র কার স্বার্থে নিজস্ব অর্থায়নে
অবৈধ পন্থায় এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর প্রকল্পের প্রাক্কলিত অর্থ বরাদ্ধ
এবং সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ের প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই এত বড় বাজেটের কাজ
তিনি কেনই বা করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ পৌর মেয়র ৪কোটি টাকা কোথায় পেলেন
?। এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

একদিকে চলছে সৈকত সুরক্ষার কাজ। অপরদিকে প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই
প্রকল্পিত প্রস্তাবে চলছে হরিলুটের কাজ। কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই লেক
নির্মাণের নামে পরিত্যক্ত জলাধারের বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন প্রকল্পের
ভরাট কাজ চালাচ্ছেন পৌর মেয়র। দরপত্র বা প্রকল্পিত ব্যয়ের অর্থের উৎস
কিংবা নকশা ছাড়াই নিজের খেয়াল খুশিমতো লেক নির্মাণের নামে ড্রেজার বসিয়ে
বালু উত্তোলন করে গণশৌচাগার ও শেখ রাসেল পার্ক এবং মার্কেট নির্মাণসহ
রাখাইন মার্কেটের বালু ভরাটের কাজে এ বালু ব্যবহার করা হবে বলে এর সাথে
সংশ্লিষ্টরা জানান। এছাড়া জলাধারের পূর্বপাশে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর
অভিজাত আবাসিক হোটেলের সুবিধার্থে নিজস্ব ৫০ ফুটের একটি রাস্তা নির্মাণে
এ বালুর ব্যবহার হচ্ছে। কুয়াকাটার পৌরবাসীর মন্তব্য, পৌর মেয়র জলাধার
খননের নামে প্রকল্প নিয়েছে। পুনরায় জলাধারের বালু দিয়ে প্রকল্প ভরাটের
কাজ করে সরকারি টাকা হরিলুট করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
এদিকে জলাধার লাগোয়া ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত ‘ট্যুরিজম
পার্ক’টি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। মুজিবশতবর্ষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ এই
পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল
ইসলাম চৌধুরী এ পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এটি পূর্নাঙ্গভাবে
চালু না হলেও ফের এ পার্কটির পাশে সরকারি কয়েক কোটি টাকার আরেকটি লেক
(জলাশয়) পরিচ্ছন্ন করার কাজে নেমেছেন নবনির্বাচিত কুয়াকাটা পৌর মেয়র
আনোয়ার হাওলাদার। এনিয়ে কুয়াকাটার স্থানীয় মানুষের মনে মিশ্র
প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হয়েছে
নিজের অর্থায়নে এখন এ কাজ করা হবে। পরে প্রকল্পের মাধ্যমে শোধ করা হবে ওই
টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি প্রশাসনের জমিতে ব্যক্তি অর্থে কী করে
লিখিত অনুমতি ছাড়া এ কাজ সম্ভব এটি অনেককে অবাক করেছে।

স্থানীয় সচেতনমহল ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করে জানান, ওই জলাশয়ের
বেড়িবাঁধের ভেতরে ও বাইরের অংশে প্রায় ৫ একর ভূমি দখলে নিয়েছে এক
প্রভাবশালী জাপা নেতা। আর ওই জলাধার জমি দখলের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান
মেয়র আনোয়ার হাওলাদার। দখলে নিয়ে অন্তত ১৬টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
জলাধার ও উচ্ছেদকৃত পরিবারের জায়গাগুলোর মালিক পাউবো। এখন আবার
বেড়িবাঁধের বাইরের জায়গায় পাউবোর অনুমতি ছাড়াই লেকপার্ক নির্মাণে নামে
চলছে বহুমূখী নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প। স্থানীয়দের দাবি ট্যুরিজম পার্কটি
পুর্নাঙ্গভাবে আগে চালু করা হোক। কুয়াকাটা সৈকতের শুন্য পয়েন্টের
পূর্বদিকে নারিকেল বাগানের মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট
প্রস্থ এই পার্কটি নির্মান করা হয়। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে
এক কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দে সাগরপারে দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটি নির্মিত
হয়েছে। ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ পার্কটির
নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পার্কটিতে পর্যটকের জন্য বহুমুখি সুবিধা
চালুর কথা রয়েছে। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা পার্কটিতে থাকা
লকার ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যেখানে জুতো-স্যান্ডেল, মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ
সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামে মাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময় এ লকার
ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। অন্তত দুই শ’ লকার থাকছে। পার্কটি রয়েছে
বাউন্ডারি ঘেরা। টিনশেড আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ একতলা আলাদা বিশ্রামাগার
থাকার কথা রয়েছে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকবে। বসেই উত্তাল সমুদ্রে
দৃষ্টি রাখতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোছল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির
সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকবে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে
পোশাক-পরিচ্ছদ পাল্টানোর মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ নির্মাণ
করা হয়েছে। আলাদা প্র¯্রাবখানাসহ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক
সুবিধা সংবলিত ওয়াশরুম, ৫০ সিটের কফি হাউস থাকার কথা ছিল। প্রায় ৪০ ফুট
দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকার কথা ছিল
ক্যাফে কর্ণার। এমনকি ফি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের
ব্যবস্থা থাকবে এ পার্কটিতে। ইতোমধ্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ
পার্কে বিশাল আকৃতির স্থায়ী ছাতা থাকছে। যার নিচে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার
থাকছে। রয়েছে বেঞ্চি। পার্কটি সবসময় প্রশাসনিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা
হবে। পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষ কারণে পর্যটকরা রাত্রি যাপনেরও সুযোগ পাবেন।
এমনকি পার্ক সংলগ্ন সীবিচে বোল্ডার দিয়ে সাগরের ঢেউয়ে বেলাভূমি ক্ষয়রোধেও
বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জিও টিউব দেয়া হয়েছে উত্তাল ঢেউয়ে যেন বীচের
বেলাভূমের ক্ষয় বন্ধে। বর্তমানে এ পার্কটি পুর্ণাঙ্গভাবে চালু করলে
কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীর বিনোদন কেন্দ্রীক নতুনমাত্রা পাবেন।
এছাড়া সাগরে গোসলের আগে কিংবা পরে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হতো
তা লাঘব হবে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক
মো: মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক
নকশা অনুযায়ী নির্মাণ না করায় পুর্নতা পায়নি। পুনরায় একই জায়গায়
কাপড়-চোপড় চেঞ্জসহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন লেক করা হচ্ছে;
এনিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন।

কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল
বারেক মোল্লা বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে কোন প্রকার উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া
ঝুকিঁপূর্ণ। দরপত্র ছাড়া ৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হরিলুট ছাড়া কিছুই
হতে পারে না। জাপা (এ) দলের বিশেষ এক নেতা এবং প্রভাবশালী এক হোটেল
ব্যবসায়ীর স্বার্থ উদ্ধারে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার দাবী। তিনি আরও
বলেন, সম্প্রতি সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৫০ একর জমি দখলে
সহযোগিতা করেছেন বর্তমান মেয়র। এখন আবার তাদের হয়ে কোন অনুমোদন ছাড়াই
নতুন প্রকল্প পৌরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাড়াবে এক সময়।

তবে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন. এ
জলাধার ব্যবহারে লিখিত কোন অনুমতি দেননি। সেখানকার অধিকাংশ জমি
পানিউন্নয়ন বোর্ডের।

এ বিষয়ে পাউবো’র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ বলেন, এ বিষয়ে
পাউবো কোন কিছুই অবগত নন। উল্লেখ্য, কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতিকরনের
জন্য বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে কাজ চলমান রয়েছে।

কুয়াকাটার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার গনমাধ্যমকে বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার
সৌন্দর্যবর্ধনে যে সকল খাস জমি রয়েছে তাতে দৃষ্টিনন্দন কর্মকান্ড করতে
জেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতির ব্যাপারে
কোন মন্তব্য করেননি।




error: Content is protected !!